Sunday, November 13, 2016
কাউকে অভিশাপ দেওয়ার ব্যাপারে যা বলছে ইসলাম!
লানত’ বা অভিসম্পাতের অর্থ হলো, আল্লাহর রহমত ও করুণা থেকে দূরে সরে পড়া। যার ওপর আল্লাহর লানত পতিত হয়, সে কখনো আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে না। পরিণতিতে সে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক অপমান-অপদস্থতা অর্জন করে।
যেসব কাজে নেমে আসে আল্লাহর অভিশাপ
রাসুল (সা.) বলেছেন, সুদদাতা, সুদগ্রহীতা, সুদসংক্রান্ত দলিল সম্পাদনকারী ও সুদের লেনদেনের সাক্ষী—সবার প্রতিই আল্লাহর অভিশাপ। (মুসলিম)
অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি লুত (আ.)-এর জাতির মতো (সমকামিতার) অপকর্মে লিপ্ত হবে, সে অভিশপ্ত হবে। (মিশকাত)
অন্য এক হাদিসে এসেছে : আল্লাহ তাআলা লানত করেন মদ্যপায়ীর প্রতি, মদ যে ব্যক্তি পান করায় তার প্রতি, তার বিক্রেতা ও ক্রেতার প্রতি, যে মদের জন্য নির্যাস বের করে তার প্রতি এবং যারা মদ বহন করে—তাদের সবার প্রতি। (মিশকাত)
রাসুল (সা.) এমন পুরুষের প্রতিও লানত করেছেন, যে পুরুষ নারীদের পোশাক পরিধান করে এবং এমন নারীর প্রতিও লানত করেছেন, যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে। (মিশকাত)
এ ছাড়া রাসুলে কারিম (সা.) সেই সব পুরুষের ওপর অভিসম্পাত করেছেন, যারা নারীদের মতো আকার-আকৃতি ধারণ করে হিজড়া সাজে এবং সেই সব নারীর ওপরও লানত করেছেন, যারা পুরুষালি আকৃতি ধারণ করে। (বুখারি)
আরেকটি হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন : ছয় ধরনের লোক আছে, যাদের প্রতি আমি অভিসম্পাত করেছি এবং আল্লাহও অভিসম্পাদ করেছেন। সে
ছয় ধরনের লোক হলো
এক. আল্লাহর কিতাবে যারা কাটছাঁট করে।
দুই. যারা বলপূর্বক ক্ষমতা দখল করে এবং সম্মানিত লোকদের অপমানিত করে আর অপমানিত লোকদের সম্মানিত করে।
তিন. যারা ‘তাকদির’ বা নিয়তিকে অবিশ্বাস করে।
চার. যারা আল্লাহ কর্তৃক হারামকৃত বস্তুকে হালাল মনে করে।
পাঁচ. বিশেষত কুরাইশ বংশের যারা হারামকে হালাল করে নেয়। ছয়. যারা আমার সুন্নতকে (কটাক্ষ করে) বর্জন করে। (বায়হাকি)
মানুষ মানুষকে অভিশাপ দিতে পারে?
ক্রোধান্বিত ও রাগান্বিত হয়ে অন্যকে অভিশাপ দেওয়া এক শ্রেণির মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বিশেষত, গ্রামাঞ্চলে পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদে ‘লানত’ শব্দ ব্যবহারের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। অথচ এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে লানত বা অভিশাপ দেওয়া সর্বাবস্থায় হারাম।
এমনকি নির্দিষ্ট কোনো অমুসলিমকেও লানত করা যাবে না, যতক্ষণ না কুফরি অবস্থায় তার মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হবে। এ ব্যাপারে নবী করিম (সা.)-এর বক্তব্য নিম্নরূপ : যে বিদ্রূপ করে, লানত করে ও অশ্লীল কথা বলে, সে মুমিন নয়। (তিরমিজি)
তবে কুফরি অবস্থায় কোনো ব্যক্তির মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত জানা থাকলে তার ওপর লানত করা জায়েজ। যেমন—আবু জাহেল, আবু লাহাব প্রমুখ। (শামি, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৮৩৬)
আবার কারো নাম উল্লেখ না করে এভাবে লানত করা জায়েজ যে জালিমের ওপর কিংবা মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক।
ইসলামের ধর্মীয় উদারতা ইসলামে ধর্মীয় উদারতা গগনচুম্বী। চাপিয়ে দেওয়ার মতো কোনো বিধান নয় এটি। এর সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হয়ে সবাই তা গ্রহণ করবে—এটাই স্বাভাবিক। ইসলাম এমন এক সর্বজনীন জীবনবিধান, যেখানে নেই কোনো সংকীর্ণতা বা সংঘাত।
এতে রয়েছে উদারতা, বিশালত্ব ও গোটা সৃষ্টির প্রতি অসীম মমত্ববোধ। ইসলাম শুধু মুসলমান নাগরিকদের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা বিধান করেনি, ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সব নাগরিকের যথাযথ অধিকার ও নিরাপত্তা বিধান করেছে।
ইসলাম পরমতসহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়, পরধর্মের বা মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে নির্দেশ দেয়। ইসলাম পারস্পরিক সম্প্রীতির সঙ্গে সবার সহাবস্থান সুনিশ্চিত করে।
অন্যের ধর্ম-মতাদর্শকে অবজ্ঞা ও অশ্রদ্ধা করতে ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। কোরআনে এসেছে : ‘তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ডাকে, তোমরা তাদের গালি দিয়ো না, নইলে তারাও শত্রুতার কারণে না জেনে আল্লাহকে গালি দেবে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১০৮)
মানবসমাজে অশান্তি সৃষ্টি, নাশকতা, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, সংঘাত, হানাহানি, উগ্রতা, বর্বরতা, প্রতিহিংসাপরায়ণতা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর এর মধ্যে বিপর্যয় ঘটাবে না।’
(সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৬)
যেসব কাজে নেমে আসে আল্লাহর অভিশাপ
রাসুল (সা.) বলেছেন, সুদদাতা, সুদগ্রহীতা, সুদসংক্রান্ত দলিল সম্পাদনকারী ও সুদের লেনদেনের সাক্ষী—সবার প্রতিই আল্লাহর অভিশাপ। (মুসলিম)
অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি লুত (আ.)-এর জাতির মতো (সমকামিতার) অপকর্মে লিপ্ত হবে, সে অভিশপ্ত হবে। (মিশকাত)
অন্য এক হাদিসে এসেছে : আল্লাহ তাআলা লানত করেন মদ্যপায়ীর প্রতি, মদ যে ব্যক্তি পান করায় তার প্রতি, তার বিক্রেতা ও ক্রেতার প্রতি, যে মদের জন্য নির্যাস বের করে তার প্রতি এবং যারা মদ বহন করে—তাদের সবার প্রতি। (মিশকাত)
রাসুল (সা.) এমন পুরুষের প্রতিও লানত করেছেন, যে পুরুষ নারীদের পোশাক পরিধান করে এবং এমন নারীর প্রতিও লানত করেছেন, যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে। (মিশকাত)
এ ছাড়া রাসুলে কারিম (সা.) সেই সব পুরুষের ওপর অভিসম্পাত করেছেন, যারা নারীদের মতো আকার-আকৃতি ধারণ করে হিজড়া সাজে এবং সেই সব নারীর ওপরও লানত করেছেন, যারা পুরুষালি আকৃতি ধারণ করে। (বুখারি)
আরেকটি হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন : ছয় ধরনের লোক আছে, যাদের প্রতি আমি অভিসম্পাত করেছি এবং আল্লাহও অভিসম্পাদ করেছেন। সে
ছয় ধরনের লোক হলো
এক. আল্লাহর কিতাবে যারা কাটছাঁট করে।
দুই. যারা বলপূর্বক ক্ষমতা দখল করে এবং সম্মানিত লোকদের অপমানিত করে আর অপমানিত লোকদের সম্মানিত করে।
তিন. যারা ‘তাকদির’ বা নিয়তিকে অবিশ্বাস করে।
চার. যারা আল্লাহ কর্তৃক হারামকৃত বস্তুকে হালাল মনে করে।
পাঁচ. বিশেষত কুরাইশ বংশের যারা হারামকে হালাল করে নেয়। ছয়. যারা আমার সুন্নতকে (কটাক্ষ করে) বর্জন করে। (বায়হাকি)
মানুষ মানুষকে অভিশাপ দিতে পারে?
ক্রোধান্বিত ও রাগান্বিত হয়ে অন্যকে অভিশাপ দেওয়া এক শ্রেণির মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বিশেষত, গ্রামাঞ্চলে পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদে ‘লানত’ শব্দ ব্যবহারের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। অথচ এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে লানত বা অভিশাপ দেওয়া সর্বাবস্থায় হারাম।
এমনকি নির্দিষ্ট কোনো অমুসলিমকেও লানত করা যাবে না, যতক্ষণ না কুফরি অবস্থায় তার মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হবে। এ ব্যাপারে নবী করিম (সা.)-এর বক্তব্য নিম্নরূপ : যে বিদ্রূপ করে, লানত করে ও অশ্লীল কথা বলে, সে মুমিন নয়। (তিরমিজি)
তবে কুফরি অবস্থায় কোনো ব্যক্তির মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত জানা থাকলে তার ওপর লানত করা জায়েজ। যেমন—আবু জাহেল, আবু লাহাব প্রমুখ। (শামি, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৮৩৬)
আবার কারো নাম উল্লেখ না করে এভাবে লানত করা জায়েজ যে জালিমের ওপর কিংবা মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক।
ইসলামের ধর্মীয় উদারতা ইসলামে ধর্মীয় উদারতা গগনচুম্বী। চাপিয়ে দেওয়ার মতো কোনো বিধান নয় এটি। এর সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হয়ে সবাই তা গ্রহণ করবে—এটাই স্বাভাবিক। ইসলাম এমন এক সর্বজনীন জীবনবিধান, যেখানে নেই কোনো সংকীর্ণতা বা সংঘাত।
এতে রয়েছে উদারতা, বিশালত্ব ও গোটা সৃষ্টির প্রতি অসীম মমত্ববোধ। ইসলাম শুধু মুসলমান নাগরিকদের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা বিধান করেনি, ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সব নাগরিকের যথাযথ অধিকার ও নিরাপত্তা বিধান করেছে।
ইসলাম পরমতসহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়, পরধর্মের বা মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে নির্দেশ দেয়। ইসলাম পারস্পরিক সম্প্রীতির সঙ্গে সবার সহাবস্থান সুনিশ্চিত করে।
অন্যের ধর্ম-মতাদর্শকে অবজ্ঞা ও অশ্রদ্ধা করতে ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। কোরআনে এসেছে : ‘তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ডাকে, তোমরা তাদের গালি দিয়ো না, নইলে তারাও শত্রুতার কারণে না জেনে আল্লাহকে গালি দেবে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১০৮)
মানবসমাজে অশান্তি সৃষ্টি, নাশকতা, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, সংঘাত, হানাহানি, উগ্রতা, বর্বরতা, প্রতিহিংসাপরায়ণতা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর এর মধ্যে বিপর্যয় ঘটাবে না।’
(সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৬)
Friday, June 24, 2016
আমরা টাংগাইল বাসী অনলাইন গ্রুপ
আগামীকাল ২৪/৬/২০১৬ রোজ শুক্রবার গ্রুপের ইফতার পার্টি ও দরিদ্রদের মাঝে কাপড় বিতরণ উনুষ্টানে সকল সদস্য ও এডমিন ও অভিভাবক সকলের উপস্থিতি কামনা করছি।
Wednesday, June 15, 2016
ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ প্রদানঃ
পরম করুনাময় আল্লাহ্ তা'আলার নামে শরু করছি।
দরুদ সালাম বর্ষিত হোক আহমদ মোস্তফা মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর, তার বংশধরদের উপর।
ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ প্রদানঃ
দরুদ সালাম বর্ষিত হোক আহমদ মোস্তফা মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর, তার বংশধরদের উপর।
ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ প্রদানঃ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতু।
আমাদের সমাজে অনেক লোককেই দেখা য়ায় ভল কাজের আদেশ করে কিন্তু মন্দ কাজের নিষেধ করতে সাহস পায় না। তাদের সম্পর্কে আমার এই লেখাটা। তো চলুন আর দেরি না করে শুরু করা যাকমহান আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ করেনঃ
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللّهِ
"দুনিয়ার সর্বোত্তম দল তোমরা, যাদেরকে মানুষের হেদায়াত ও সংস্কার বিধানের জন্য কর্মক্ষেত্রে উপস্হিত করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ কর, অন্যায় ও পাপ কাজ হতে লোকদের বিরত রাখ এবং আল্লাহর উপর ঈমান রক্ষা করে চল"।(সূরা আল ইমরান-১১০)
আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা অন্যত্র বলেনঃ
وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
"তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক থাকতে হবে, যারা নেকি ও মঙ্গলের দিকে ডাকবে, ভাল ও সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং পাপ ও অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখবে। যারা এই কাজ করবে তারাই সার্থকতা পাবে"। (সূরা আল ইমরান-১০৪)
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন মন্দ কাজ হতে দেখবে, সে যেন তা হাত দ্বারা রোধ করে, হাত দ্বারা রোধ করার শক্তি না থাকলে, জিহ্বা দ্বারা, তারও শক্তি না থাকলে, সে কাজকে অন্তরে ঘৃনা করবে। আর এটা ঈমানের দুর্বলতম অবস্হা"। (মুসলিম)
হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্নিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "সেই আল্লাহর শপথ যার হাতে আমার প্রান! তোমরা অবশ্য অবশ্যই ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ প্রদান কর, অন্যথায় তোমাদের উপর আযাব প্রেরণ করা হবে তখন তোমরা আল্লাহকে ডাকলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেওয়া হবে না"। (তিরমিযী)
আবু বাকার সিদ্দীক (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি।তিনি বলেছেন, "মানুস অত্যাচারীকে দেখা সত্যেও যদি তার হস্তদ্বয় ধরে তাকে অত্যাচার করা থেকে বিরত না রাখে, তাহলে সকলেই আল্লাহর আযাবের শিকার হবে"। (আবু দাউদ, তিরমিযী, ও নাসায়ী)
উক্ত আয়াত ও হাদীস সমুহের নির্দেশনাবলীঃ
১। ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ প্রদান করা সাফল্যের উপকরন।
২। যে ব্যক্তি কোন মন্দ কাজ হতে দেখবে, সাধ্যানুসারে বাধা প্রদান করা তার উপর ওয়াজিব।
৩। সাধ্যবান ব্যক্তির হাত দ্বারা বাধা প্রদান করবে, যেমন বাড়িতে পিতা অথবা শ্বাসক অথবা শ্বাসক কর্তৃক নিযুক্ত কোন ব্যক্তি।
৪। ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ প্রদান না করা, দোয়া কবুল না হওয়া এবং আল্লাহর আযাবের কারন।
Thursday, June 9, 2016
কোরআন ও হাদীসে হালাল-হারাম।
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতু।
সমস্ত প্রসংশা মহান আল্লাহ তা'আলার জন্য। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় নবী আহমদ মুস্তফা, মুহাম্মদ মুস্তফা (সাঃ) এর উপর, বংশধর ও সহচরদের উপর।
আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা পবিত্র কোরানে বলেনঃো
يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُواْ مِمَّا فِي الأَرْضِ حَلاَلاً طَيِّباً
"হে মানব জাতি! তোমরা পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তসামগ্রি ভক্ষণ কর"। (সূরা বাকারা- ১৬৮)
আল্লাহ তা'আলা অন্যত্র বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُلُواْ مِن طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُواْ لِلّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ |
"হে মুমিঙ্গন আমি তোমাদেরকে যেসব পবিত্র বস্তসামগ্রী রুযী হিসাবে দান করেছি তা হতে ভক্ষণ কর এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর"। (সূরা বাকারা- ১৭২)
আল্লাহ তা'আলা আরো বলেনঃ
إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللّهِ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلاَ عَادٍ فَلا إِثْمَ عَلَيْهِ إِنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللّهِ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلاَ عَادٍ فَلا إِثْمَ عَلَيْهِ إِنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
"তিনি তো তোমাদের জন্য উপর হতে নিক্ষিপ্ত মৃত জন্ত, রক্ত, শূকরের মাংশ, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যবেহকৃত প্রানী হারাম করেছেন। অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানি ও সীমা লংঘনকারি না হয়, তার জন্য তা ভক্ষণ করাতে কোন পাপ নেই। নিশ্চয় মহান আল্লাহ তা'আলা ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু"। (সূরা বাকারা-১৭৩,সূরা নাহল- ১১৫)
আল্লাহ আরো বলেনঃ
قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَن تُشْرِكُواْ بِاللّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَن تَقُولُواْ عَلَى اللّهِ مَا لاَ تَعْلَمُونَ "হে নবী! তুমি তাদের বলে দাও, আমার পালনকর্তা তো কেবলমাত্র অশ্লীল নির্লজ্জ বিসয়সমূহ হারাম করেছেন। যা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এবং হারাম করেছেন গুনাহের কাজ, অন্যায়-যুলুম, আল্লাহর সাথে এমন জিনিসকে অংশীদার করা যার কোন প্রমান অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর প্রতি এমন কথা আরোপ করা যা তোমরা জান না"। (সূরা আরাফ-৩৩)
আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা আরো বলেনঃ
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكَ تَبْتَغِي مَرْضَاتَ أَزْوَاجِكَ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ "হে নবী! তুমি কেন সেই জিনিস হারাম করো যা আল্লাহ্ তুমার জন্য হালাল করেছেন। (তা কি এই জন্য যে) তুমি তোমার স্ত্রীদের সন্তোষ পেতে চাও? আল্লাহ্ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু"। (সূরা তাহরীম- ১)
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "মানব জাতীর কাছে এমন একটি সময় আসবে যখন মানুষ কামাই-রোজগারের ব্যাপারে হালাল হারামের কোন বাচ-বিচার করবেনা" (বুখারী)
হযরত জারির (রাঃ) হতে বরনিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "যে শরীরের গোশত হারাম খাদ্যদ্বারা গঠিত হলো, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না"। (বায়হাকী, আহমদ)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "হারাম পথে উপার্জন করে বান্দা যদি তা দান করে দেয় তবে আল্লাহ সে দান কবুল করবেন না। প্রয়োজন পূরণের জন্য সে সম্পদ ব্যয় করলে তাতেও বরকত হয় না। সে ব্যক্তি যদি সেই (হারাম) সম্পদ রেখে মারা যায় তাহলে তা তার জাহান্নামে যাওয়ার পাথেয় হবে। আল্লাহ অন্যায় দিয়ে অন্যায় মিটান না। বরং তিনি নেক কাজ দিয়ে অন্যায় কে মিটিয়ে থাকেন"। (মিশকাত)।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "কোন একজন ব্যক্তি দু'হাত আকাশের দিকে উত্তলন করে দোয়া করে বলে, হে আল্লাহ! হে আল্লাহ! অথচ তার খাদ্য,পানীয় ও লেবাস-পোষাক সব কিছুই হারাম উপার্জনের। এমনকি সে এ পর্যন্ত হারাম খাদ্য দ্বারাই জীবন ধারন করেছে। সুতরাং তার দোয়া কি ভাবে কবুল হবে?"। (মুসলিম)
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "মানুষের খাদ্যের মধ্যে সেই খাদ্যই সবচেয়ে উত্তম যে খাদ্যের ব্যবস্থা সে নিজ হাতে কামাই- এর দ্বারা করে। আল্লাহর প্রিয় নবী হযরত দাউদ (আঃ) নিজ হাতের কামাই হতে খাদ্য গ্রহন করতেন"। (বুখারী)
হে আল্লাহ্ আমাদের সকলকে হারাম বস্ত হতে বেচে থাকার তৌফিক দান করুন, আমিন।
********************
******************
আল্লাহ আরো বলেনঃ
قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَن تُشْرِكُواْ بِاللّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَن تَقُولُواْ عَلَى اللّهِ مَا لاَ تَعْلَمُونَ "হে নবী! তুমি তাদের বলে দাও, আমার পালনকর্তা তো কেবলমাত্র অশ্লীল নির্লজ্জ বিসয়সমূহ হারাম করেছেন। যা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এবং হারাম করেছেন গুনাহের কাজ, অন্যায়-যুলুম, আল্লাহর সাথে এমন জিনিসকে অংশীদার করা যার কোন প্রমান অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর প্রতি এমন কথা আরোপ করা যা তোমরা জান না"। (সূরা আরাফ-৩৩)
আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা আরো বলেনঃ
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكَ تَبْتَغِي مَرْضَاتَ أَزْوَاجِكَ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ "হে নবী! তুমি কেন সেই জিনিস হারাম করো যা আল্লাহ্ তুমার জন্য হালাল করেছেন। (তা কি এই জন্য যে) তুমি তোমার স্ত্রীদের সন্তোষ পেতে চাও? আল্লাহ্ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু"। (সূরা তাহরীম- ১)
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "মানব জাতীর কাছে এমন একটি সময় আসবে যখন মানুষ কামাই-রোজগারের ব্যাপারে হালাল হারামের কোন বাচ-বিচার করবেনা" (বুখারী)
হযরত জারির (রাঃ) হতে বরনিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "যে শরীরের গোশত হারাম খাদ্যদ্বারা গঠিত হলো, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না"। (বায়হাকী, আহমদ)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "হারাম পথে উপার্জন করে বান্দা যদি তা দান করে দেয় তবে আল্লাহ সে দান কবুল করবেন না। প্রয়োজন পূরণের জন্য সে সম্পদ ব্যয় করলে তাতেও বরকত হয় না। সে ব্যক্তি যদি সেই (হারাম) সম্পদ রেখে মারা যায় তাহলে তা তার জাহান্নামে যাওয়ার পাথেয় হবে। আল্লাহ অন্যায় দিয়ে অন্যায় মিটান না। বরং তিনি নেক কাজ দিয়ে অন্যায় কে মিটিয়ে থাকেন"। (মিশকাত)।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "কোন একজন ব্যক্তি দু'হাত আকাশের দিকে উত্তলন করে দোয়া করে বলে, হে আল্লাহ! হে আল্লাহ! অথচ তার খাদ্য,পানীয় ও লেবাস-পোষাক সব কিছুই হারাম উপার্জনের। এমনকি সে এ পর্যন্ত হারাম খাদ্য দ্বারাই জীবন ধারন করেছে। সুতরাং তার দোয়া কি ভাবে কবুল হবে?"। (মুসলিম)
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "মানুষের খাদ্যের মধ্যে সেই খাদ্যই সবচেয়ে উত্তম যে খাদ্যের ব্যবস্থা সে নিজ হাতে কামাই- এর দ্বারা করে। আল্লাহর প্রিয় নবী হযরত দাউদ (আঃ) নিজ হাতের কামাই হতে খাদ্য গ্রহন করতেন"। (বুখারী)
হে আল্লাহ্ আমাদের সকলকে হারাম বস্ত হতে বেচে থাকার তৌফিক দান করুন, আমিন।
********************
******************
Sunday, June 5, 2016
রোযা বা সিয়ামের সহী নিয়ম ও বিধান।
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
আল্লাহর নামে শুরু করছি।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতু।
সকল প্রসংশা একমাত্র আল্লাহর জন্য। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উপর এবং তাঁর বংশধর, সহচর ও তাঁর বন্ধুদের উপর।
সকল প্রসংশা একমাত্র আল্লাহর জন্য। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উপর এবং তাঁর বংশধর, সহচর ও তাঁর বন্ধুদের উপর।
রমযানের রোযা ইসলামের পাঁচটি মূল ভিত্তিসমূহের অন্যতম ভিত্তি। যার প্রমান নবী (সাঃ) এর বানী। তিনি বলেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি জিনিসের উপর রাখা হয়েছে। আর তা হল, এই সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ্ ব্যতীত সত্যিকারে কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। নামাজ আদায় করা, যাকাত প্রদান করা, বায়তুল্লাহ শরীফের হজ্জ পালন করা, এবং রমযান মাসে রোযা রাখা। (বুখারী ও মুসলি) আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ফযর থেকে নিয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, যৌন বাসনা পূরন ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য থেকে বিরত থাকার নামই হলো সিয়াম/রোযা।আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা বলেনঃ
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ | ||
রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
(يَأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمََنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قََبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ)
“হে ইমানদারগণ! তোমাদের উপর ছিয়াম (রোযা) ফরজ করা হয়েছে যেমনভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা পরহেজগার হতে পার। (সূরা বাকারাঃ ১৮৩)
বিস্তারিত জানতে ওয়াজটি শুনতে পারেন।
বাংলা ওয়াজ মতিউর রহমান মাদানি।
রমযান মাসের মাহাত্ম্যঃ
আল্লাহ্ তা'আলা পবিত্র রমযান মাসকে এমন কিছু বৈশিষ্টে ও গুনে বিশেষিত করেছেন, যা অন্যান্য মাসে পাওয়া যায় না। আর এই মাসের গুন ও বৈশিষ্টের মধ্যে হলোঃ
১। ফেরেস্তাকুল রোযাদারের জন্য আল্লাহর নিকট হ্মমা প্রার্থনা করতে থাকেন যতহ্মন না সে ইফতার করে। ২। বিতাড়িত শয়তানকে এ মাসে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। ৩। এ মাসে রয়েছে একটি কদরের (সম্মানিত) রাত যা এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। ৪। রমযান মাসের শেষ রাত্রিতে সকল রোযাদারকে হ্মমা করা হয়। ৫। এ মাসে প্রত্যেক রাতে আল্লাহ্ তা'আলা অনেক মানষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। ৬। এ মাসে একটি উমরার সাওয়াব একটি হজ্জের সমান। নবী কারীম (সাঃ) কথিত অনেক বানী দ্বারাও এ মাসের ফযীলত ও গুন প্রকাশ পায়, যেমন তিনি বলেন, "যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাস ও নেকির আশায় রমযান মাসের রোযা রাকবে, তার বিগত গুনাহসমূহ হ্মমা করে দেওয়া হবে"।(বুখারী ও মুসলিম) অন্য একটি হাদীসে বর্নিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "আদম সন্তানের প্রত্যেক সৎ কাজের বিনিময় দশ থেকে সাতশত গুন বৃদ্ধি করা হয়। মহান আল্লাহ্ বলেন, কিন্তু রোযা আমারই (আমার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে রেখেছে) তার প্রতিদান আমি নিজে দিব"।(ইবনে মাজাহ্) রমযান প্রবেশের প্রমানঃ
২। সাবান মাসের ৩০দিন পূর্ণ করা। ৩০ দিন পূর্ণ করলে ৩১ দিনটাই রমযান মাসের প্রথম তারিখ হবে। কারন রাসূল (সাঃ) বলেন, "যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়, তাহলে সাবান মাসের ৩০দিন পূর্ণ করো"। (বুখারী-মুসলিম)
কাদের জন্য রোযা ছাড়া জায়েয?
১। এমন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি যার আরোগ্যের আশা করা যায়। তার উপর রোযা রাখা কষ্টকর হলে, ছেড়ে দেবে এবং পরে তা কাযা করবে। কারো ব্যাধি যদি চিরস্থায়ী হয় অর্থাৎ যার আরোগ্যের আশা না থাকে তবে, তার পক্ষে রোযা রাখা জরুরী নয়। সে প্রত্যেক রোযার পরিবর্তে একজন মিসকিনকে এক মুদ (৫৫০ গ্রাম) খাদ্যদ্রব্য দ্বারা খাওয়াবে।
২। মুসাফীরঃ মুসাফির বাড়ি থেকে যাওয়া থেকে নিয়ে পুনরায় বাড়ি প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত রোযা ছেড়ে দিতে পারবে। যে শহরে সফর করে গেছে সেখানে বহুদিন অবস্হান করলেও মুসাফির বলে গন্য হবে যতদিন তার এই নিয়ত থাকবে যে, উদ্দেশ্য সাধিত হওয়ার পর সেখানে আর অবস্হান করবে না। আর এই বিধান এমন সফরের হ্মেত্রে য়ার দূরত্ব ৮০ কিমিঃ ও তার উর্ধে হবে।
৩। গর্ববতী ও দুধ দানকারিনী মহিলারা নিজের ও সন্তানের উপর কোন হ্মতির আসংকা বোধ করলে রোযা ছেড়ে দিতে পারবে। অতঃপর কারন দূরীভূত হয়ে গেলে ত্যাগকৃত দিনগুলির রোযা কাযা করবে।
৪। যে বৃদ্ধ ব্যক্তির উপর রোযা রাখা কষ্টকর হবে, সে রোযা ছেড়ে দিবে এবং তাকে কাযাও করতে হবে না। তবে প্রত্যেক দিন একজন মিসকিন খাওয়াবে।
রোযা নষ্টকারী বস্তসমূহঃ
১। ইচ্ছাকৃত পানাহার করা, তবে ভূলক্রমে কোন কিছু পানাহার করে ফেললে, তা রোযার উপর কোন প্রভাব সৃষ্টি করবে না। কারন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যে ব্যক্তি ভূলক্রমে পানাহার করলো, সে যেন তার রোযা পূর্ণ করে"। (মুসলিম) নাকের মাধ্যমে পানি পেটে প্রবেশ করলে, কোন বিকল্প পদ্ধতিতে খাদ্য গ্রহন করলে ও প্রয়োজনে শরীরে রক্ত প্রবেশ করালে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। কারন এ সবই রোযাদারের জন্য খাদ্য বলে গন্য।
২। যৌনবাসনা পূরন করা, যখনই কোন ব্যক্তি তার স্ত্রী সাথে যৌনবাসনা পূরন করবে, তার রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। তার উপর কাযা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হবে। কাফফারা হলো কোন ক্রীত দাস-দাসী স্বাধীন করা, তা না পেলে একাধারে দু'মাস রোযা রাখা। কোন শরিয়াতী কারন যেমন, দু'ঈদের দিন ও আয়্যামে তাশরীক (জিল হজ্জ মাসের ১১,১২ ও ১৩ তারিখ) এ রোয়া রাখা অথবা মানসিক কারন যেমন, রোগ-ব্যাধি এবং রোযা না ছাড়ার উদ্দেশ্যে সফর করা ইত্যাদি ব্যতীত এ দু'মাসের কোন এক দিনও রোযা ত্যাগ করা যাবে না। কোন কারন ব্যতীত এক দিনও যদি রোযা বাদ দেয়, তাহলে পূনরায় নতুন ভাবে প্রথম থেকে রোযা রাখতে হবে। কারন এতে ধারাবাহিকতা অপরিহার্য। যদি দু'মাস রোযা রাখতে অহ্মম হয়, তাহলে ৬০ জন মিসকিনকে খাওয়াবে। ৩। জাগ্রত অবস্হায় হস্তমৈথুন অথবা স্ত্রীকে স্পর্শ ও চুম্বন করার কারনে বির্যপাত ঘটলে, রোযা নষ্ট হয়ে যাবে এবং তার উপর কাযা ওয়াজিব হবে কাফফারা নয়। তবে স্বপ্নদোষে রোযা নষ্ট হয় না। ৪। সিঙ্গীর মাধ্যমে শরীর থেকে দূষীত রক্ত বের করলে, কিংবা দানের উদ্দেশ্যে বের করলে রোয়া নষ্ট হয়ে যাবে। তবে স্বল্প পরিমান রক্ত বের কর যেমন, পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে বের করলে, তাতে রোযা নষ্ট হয় না। অনুরুপ নাকের রক্ত প্রবাহের রোগ ও দাত উপড়ে ফেলার কারনে রক্ত বের হলে রোযা নষ্ট হবে না। ৫। ইচ্ছাকৃত বমি করলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। অনিচ্ছাকৃত হলে নয়। উপরোক্ত রোযা নষ্টকারী বস্তুসমূহের দ্বারা তখনই রোযাদারের রোযা নষ্ট হবে, যখন সে জেনে শুনে ইচ্ছাকৃত ভাবে তা গ্রহন করবে। কিন্তু যদি সে এ সম্পর্কীয় শরিয়তী বিধানের ব্যাপারে অজ্ঞ হয় অথবা ফজর উদিত হয়েছে কি না ও সূর্যাস্ত হয়েছে কি না ইত্যাদি ব্যাপারে সন্দেহ করতঃ কোন কিছু গ্রহন করে, তাহলে তার রোযা নষ্ট হয় না। অনুরুপ উক্ত বস্তু নিজ ইখতিয়ারে গ্রহন করতে হবে। নিরুপায় বা বাধ্যতামূলক ভাবে গ্রহন করলে, রোযা নষ্ট হবে না বরং তার রোযা বিশুদ্ধ বলে গন্য হবে এবং তাকে কাযাও করতে হবে না। ৬। হায়েজ (মাসিক রক্ত স্রাব) ও নেফাস (প্রসবোত্তর রক্ত স্রাব) বের হওয়াও রোযা নষ্টকারী বস্তুর অন্তর্ভুক্ত। রক্ত দেখার সাথে সাথেই মহিলাদের রোযা নষ্ট হয়ে যায়। অনুরুপ হায়েজ ও নেফাস অবস্হায় নারীদের রোযা রাখা হারাম। তারা রমযানের পর ত্যাগকৃত রোযা কাযা করবে। রোযার সুন্নাতঃ১। সেহরী খাওয়া, কারন রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "সেহরী খাও; কেননা সেহরীতে বরকত নিহিত আছে"। (বুখারী ও মুসলিম) শেষ রাত্রি পর্যন্ত বিলম্ব করে সেহরী খাওয়াও সুন্নাত। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যতক্ষন পর্যন্ত আমার উম্মাত ইফতারীতে তাড়াতাড়ি ও সেহরীতে বিলম্ব করবে ততক্ষন পর্যন্ত তারা ভালর মধ্যেই থাকবে।২। সূর্যাস্তের পর পরই শীঘ্র ইফতার করা। সদ্যপাকা খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নাত। তা না পেলে শুষ্ক খেজুর, গা না পেলে পানি দিয়ে, যদি এসবের কিছুই না পায় তাহলে হালাল খাদ্য যা পাবে তাই দিয়ে ইফতার করবে। ৩। রোযা রাখা অবস্হায় বেশি বেশি দোয়া করা বিশেষ করে ইফতারীর সময়। কারন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, " তিন প্রকারের দোয়া গ্রহন যোগ্য হয়, রোযাদারের দোয়া, অত্যাচারীত ব্যক্তির দোযা, এবং মুসাফিরের দোয়া"। (বায়হাক্বী) রোযাদারের উচিত রমজান মাসে (আল্লাহর এবাদতের লক্ষে) রাত্রি জাগরন করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাস ও নেকীর আশায় রমজান মাসে রাত্রি জাগরন করে, তার বিগত সমস্ত গুনাহকে ক্ষমা করা হয়"। (বুখারী ও মুসলিম) তাই সকল মুসলমানের উচিত ইমামের সাথে তারাবীর নামাজ আদায় করা। কেননা রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি ইমামের সাথে নামাজে দাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত তার সাথে থাকে, তার (নেকীর খাতায়) পূর্ণ একরাত্রির এবাদতের সাওয়াব লিপিবদ্ধ করে দেওয়া হয়"। (তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসায়ী) রমজান মাসে বেশি বেশি দান করাও উচিত। কেননা রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "সর্ভোত্তম সাদকা হলো রমজান মাসের সাদকা"। (তিরমিযী) অনুরুপ ভাবে রমজান মাসে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াতের যত্ন নেওয়া দরকার। কারন রমজান মাস কোরআনের মাস। কোরআন তেলাওয়াতকারীর জন্য রয়েছে প্রত্যক অক্ষরের পরিবর্তে নেকী। আর সে নেকী এক থেকে দশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। তারাবীর নামাজঃরমজান মাসের রাত্রে জামা'আত বদ্ধভাবে কিয়াম করার নামই হচ্ছে তারাবীহ। তারাবীর সময় হলো এশার পর থেকে নিয়ে ফজর উদিত হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। নবী কারীম (সাঃ) তারাবীর নামাজ আদায় করার ব্যাপারে দারুনভাবে উৎসাহিত করেছেন। (সঠিক মত অনুযায়ী) তারাবীহ্ নামাজের সংখ্যা হলো, ১১ রাক'আত। প্রত্যেক দু' রাক'আতে সালাম ফিরানো সুন্নাত। ১১রাক'আতের অধিক পড়াতেও দোষ নেই। তারাবীহ নামাজে ধীরস্হিরতা অবলম্বন করা এবং নামাজকে এতটা লম্বা করা সুন্নাত যাতে মুসল্লীদের কোন প্রকার অসুবিধা না হয়। ফিৎনার আশংকা না থাকলে মহিলারাও তারাবীর নামাজে উপস্হিত হতে পারবে। তবে শর্ত হলো, পর্দা বজায় রেখে, সৌন্দর্য প্রদর্শন থেকে বিরত থেকে ও সুগন্ধি ব্যবহার না করে বের হতে হবে।যে দিনে রোযা রাখা হারামঃ১। দু'ঈদে অর্থাৎ, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে।২। আয়্যামে তাশরীকে অর্থাৎ, যিলহজ্জ মাসের ১১, ১২, ও ১৩ তারিখে। তবে কেরান অথবা তামাত্তো হজ্জকারী যদি কোরবানির পশু না পায়, তাহলে তারা উক্ত বিধানেরর আওতায় আসবে না। (অর্থাৎ, তারা আয়্যামে তাশরীকে রোজা রাখতে পারবে) ৩। হায়েজ ও নেফাসের দিনগুলিতে রোজা রাখা। ৪। স্বামীর উপস্হিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত রোজা রাখা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, "স্বামীর উপস্হিতিতে কোন স্ত্রী তার অনুমতি ছাড়া রমযান ব্যতীত অন্য কোন রোজা রাখতে পারে না"। (বুখারী ও মুসলিম) |
Wednesday, June 1, 2016
কোরআন ও হাদীসের আলোকে ইলম/জ্ঞান
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহ্ তা'আলার নামে যিনি অতি দয়ালু।
বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন ? আজকে আমি আপনাদের সামনে আলোচনা করব কোরানের আলোকে ইলম/জ্ঞান চর্চার গুরুত্ত। কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক।
মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ
"ওদের বল, যারা জানে এবং যারা জানে না এই উভয়দল কখনো সমান হতে পারে না"।( সূরা আল যুমার -৯)
আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা কোরআনুল কারীমে অন্যত্র উল্লেখ করেনঃ
يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ
"তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার ও যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ্ তাদেরকে সুউচ্চ মর্যাদা দান করবেন"।(সূরা আল মুজাদালাহ্-১১)
আল্লাহ তা'আলা আরো বলেনঃ
وَقُل رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا
"হে পরোয়ারদিগার! আমাকে আরো অধিক জ্ঞান দান কর"। (সূরা ত্বোয়া-হা -১১৪)
আল্লাহ্ তা'আলা আরো বলেনঃ
إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاء
"আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল ইলম/জ্ঞান সম্পন্ন লোকেরাই তাকে ভয় করে"।(সূরা ফাতির - ২৮)
মুআবিয়া (রাঃ) থেকে বর্নিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, "যে ব্যক্তি কোন ইলম/জ্ঞান শিখালো, সে ততটাই প্রতিদান পাবে, যতটা আমলকারী পাবে। আর আমলকারীর প্রতিদানে কোন ঘাটতি আসবে না"। (ইবনে মাজা)
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। রাসূল (সাঃ) বলেন, "আদমের কোন সন্তান যখন মারা যায়, সাথে সাথে তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমলের সাওয়াব পেতে থাকে। সাদকায়ে জারিয়াহ, এমন ইলম/জ্ঞান যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়, এবং সুসন্তান যে তার জন্য দোয়া করে"।(মুসলিম)
সাহল বিন সা'দ (রাঃ) থেকে বর্নিত। নবী কারীম (সাঃ) বলেন, "আল্লাহর শপথ! তোমার মাধ্যমে কোন একটি লোককেও যদি আল্লাহ্ হেদায়াত দান করেন, তাহলে তা তোমার জন্য লাল উটের চেয়েও উত্তম"। (বুখারী)
আব্দুল্লাহ বিন আমরুবনিল আস (রাঃ) থেকে বর্নিত। রাসূল (সাঃ) বলেন"আমার কাছ থেকে একটি বাক্য হলেও তা লোকদের কাছে পৌছিয়ে দাও"।(বুখারী)
উক্ত আয়াত ও হাদীস সমূহের নির্দেশনাবলীঃ
১। উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস সমূহের ইলম ও ওলামায়ে কেরামদের মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। যে দিনের তত্ত্বজ্ঞান লাভ করে, তার জন্য আল্লাহর কল্যানকামিতাই প্রমান করে। অনুরুপ জ্ঞান অন্বেষন করা জান্নাত লাভের অন্যতম কারনও বটে।
২। মানুষকে শিক্ষাদান ও সৎপথ প্রদর্শন করা এবং স্বল্প হলেও জ্ঞান প্রচারের প্রতিদান অনেক অনেক বেশী। আর তা মৃত্যুর পরেও মানুষের কাজে আসবে।
৩। নফল এবাদতের চেয়ে ইলম তথা জ্ঞান অর্জন করা উত্তম ও শ্রেয়।
৪। সন্তানাদিদের সৎ ও উত্তম তারবীয়াতের প্রতি আগ্রহী হওয়া আবশ্যক।
Friday, May 27, 2016
ডাউনলোড করে নিন কিছু ইসলামিক বই। মুসলিম ভাই ও বোনেরা সবাই ডাউনলোড করুন ।
বন্ধরা সবাই ভালতো আশাকরি সবাই ভাল আছেন । আজকে আমি আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম কিছু ইসলামিক বই আশাকরি বই গুলো আপনাদের কাজে আসবে । সাইজ খুব বড় না খুব ছোটই আছে আর ডাউনলোড করতেও কোন সমস্যা হবে না । তাহলে আর এই বিষয়ে কথা না বাড়িয়ে নীচে থেকে এখুনি ডাউনলোড করুন । সব কটি বই পেতে নীচে যান ।
Thursday, May 26, 2016
শির্ক থেকে সতর্ক ও তাওহীদের মাহাত্ম্য।
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
পরম করুনাময় আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'লার নামে শুরু করছি।
পরম করুনাময় আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'লার নামে শুরু করছি।
শির্ক থেকে সতর্ক ও তাওহীদের মাহাত্ম্য।
মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা'লা বলেনঃ
إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ
"নিশ্চয় শির্ক অতি বড় যুলুমের কাজ"। (সূরা লোকমান-১৩)
আল্লাহ্ তা'আলা আরো বলেনঃ
إِنَّ اللّهَ لاَ يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَن يَشَاء
"আল্লাহ্ কেবল শির্কের গুনাহ মাফ করবেন না, শির্ক ব্যাতীত আর যত গুনাহ আছে তা আল্লাহ্ য়াকে ইচ্ছা তাকে মাফ করে দিবেন"। (সূরা নিসা-৪৮)
মহান আল্লাহ্ আরো বলেনঃ
وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
"তোমার প্রতি ও তোমার পূর্বে গত হওয়া সমস্ত নবী-রাসূলদের প্রতি এই অহী পাঠানো হয়েছে যে, তুমি যদি শির্ক কর, তাহলে তোমার আমল নষ্ট হয়ে যাবে, আর তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে"। (সূরা আল যুমার-৬৫)
তিনি আরো বলেনঃ
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
"আমি জ্বিন ও মানুষকে অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করি নাই, কেবল এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার এবাদত বন্দেগী করবে"। (সূরা আয য়ারিয়াত-৫৬)
আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা আরো বলেনঃ
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ
"আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে একজন করে রাসূল পাঠিয়েছি। আর তার সাহায্যে সকলকে সমাধান করে দিয়েছি যে, আল্লহর এবাদত বন্দেগী কর এবং তাগুতের এবাদত বন্দেগী থেকে দূরে থাক"। (সূরা নাহ্ল- ৩৬)
"নিশ্চয় শির্ক অতি বড় যুলুমের কাজ"। (সূরা লোকমান-১৩)
আল্লাহ্ তা'আলা আরো বলেনঃ
إِنَّ اللّهَ لاَ يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَن يَشَاء
"আল্লাহ্ কেবল শির্কের গুনাহ মাফ করবেন না, শির্ক ব্যাতীত আর যত গুনাহ আছে তা আল্লাহ্ য়াকে ইচ্ছা তাকে মাফ করে দিবেন"। (সূরা নিসা-৪৮)
মহান আল্লাহ্ আরো বলেনঃ
وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
"তোমার প্রতি ও তোমার পূর্বে গত হওয়া সমস্ত নবী-রাসূলদের প্রতি এই অহী পাঠানো হয়েছে যে, তুমি যদি শির্ক কর, তাহলে তোমার আমল নষ্ট হয়ে যাবে, আর তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে"। (সূরা আল যুমার-৬৫)
তিনি আরো বলেনঃ
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
"আমি জ্বিন ও মানুষকে অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করি নাই, কেবল এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার এবাদত বন্দেগী করবে"। (সূরা আয য়ারিয়াত-৫৬)
আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা আরো বলেনঃ
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ
"আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে একজন করে রাসূল পাঠিয়েছি। আর তার সাহায্যে সকলকে সমাধান করে দিয়েছি যে, আল্লহর এবাদত বন্দেগী কর এবং তাগুতের এবাদত বন্দেগী থেকে দূরে থাক"। (সূরা নাহ্ল- ৩৬)
জাবের (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যে ব্যক্তি শীর্ক করা ব্যতিরকে আল্লাহর সম্মুখে উপস্হিত হতে পারবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে শির্ক নিয়ে উপস্হিত হবে, সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে"।(মুসলিম)
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ননা করেছেন। তিনি বলেছেন, "ধ্বংসকারী সাতটি বস্তু থেকে বাচো! সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! (সাঃ) সেই সাতটি বস্তু কি কি? তিনি উত্তরে বলেন, আল্লাহর সহিত শির্ক করা___। (বুখারী ও মুসলিম) মাআয বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি একটি গাধার উপরে আল্লাহর নবীর পশ্চাতে বসে ছিলাম। অতঃপর আল্লাহর রাসূল আমাকে সাক্ষ্য করে বললেন, হে মাআয! বান্দাদের উপর আল্লাহর এবং আল্লাহর উপর বান্দাদের অধিকার কি জান? আমি বললাম, আল্লাহ্ ও তার রাসূল সর্বাধিক জ্ঞাত। রাসূল (সাঃ) বললেন, বান্দার উপর আল্লাহর হক তথা অধিকার হলো এই যে, তারা এবাদত করবে শুধুমাত্র তারই এবং তার সঙ্গে কোন কিছুকেই শরীক করবে না। আর আল্লাহর কাছে বান্দার আবদার হলো এই যে, তিনি শির্ক মুক্ত বান্দাকে শাস্তি দেবেন না। (বুখারী ও মুসলিম)
উক্ত আয়াত ও হাদীসসমূহের নির্দেশনাবলীঃ
১। শির্কের গুনাহ এত ভয়ংকর যে, তাওবা করা ব্যাতীত আল্লাহ্ তা মাফ করবেন না, যেমন অন্যান্য পাপসমূহ ইচ্ছে করলে আল্লাহ্ মাফ করে দিবেন।
২। যে শির্কের উপর মৃত্যু বরন করবে, তার আমল যেমন পন্ড ও বিফল হবে, তেমনি দোযখই অনন্ত কালের জন্য হবে অবধারিত পরিণতি।
৩। এতে তাওহীদ তথা একত্ববাদের মাহাত্ম্য প্রমানীত হয়, যা ছিল জ্বিন ও মানব সৃষ্টির মূল লক্ষ এবং জান্নাত লাভ ও দোযখ থেকে মুক্তির প্রধান পূর্বশর্ত।
আমাদের সকল মুসলমানদেরকে শির্ক থেকে বাচার তৌফিক দান করো, আমিন।
Saturday, May 21, 2016
আয়তুল কুরসি এর ফযীলতঃ
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
আয়তুল কুরসি কুরআনুল কারিমের সবচেয়ে বড় সূরা 'সূরা আল বাকারার ২৫৫ নং আয়াত' যা কুরআনের সবচেয়ে বড় আয়াতও বটে এ সূরার রয়েছে অনেক ফযিলত এর ফযিলত সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম হযরত উবাই ইবনে কা'বকে জিজ্ঞাসা করলেন সবচেয়ে ফযিলত ও গুরুত্বপূর্ণ আয়াত কোনটি ? উবাই ইবনে কা'ব আরয করলেন, সেটি হচ্ছে আয়তুল কুরসি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম তা সমর্থন করলেন এবং বললেন, হে আবুল মানজার ! তোমাকে এই উত্তম জ্ঞনের জন্য ধন্যবাদ (মুসনাদে আহমদ)
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
আয়তুল কুরসি কুরআনুল কারিমের সবচেয়ে বড় সূরা 'সূরা আল বাকারার ২৫৫ নং আয়াত' যা কুরআনের সবচেয়ে বড় আয়াতও বটে এ সূরার রয়েছে অনেক ফযিলত এর ফযিলত সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম হযরত উবাই ইবনে কা'বকে জিজ্ঞাসা করলেন সবচেয়ে ফযিলত ও গুরুত্বপূর্ণ আয়াত কোনটি ? উবাই ইবনে কা'ব আরয করলেন, সেটি হচ্ছে আয়তুল কুরসি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম তা সমর্থন করলেন এবং বললেন, হে আবুল মানজার ! তোমাকে এই উত্তম জ্ঞনের জন্য ধন্যবাদ (মুসনাদে আহমদ)
আয়তুল কুরসি আরবি ভাষায়ঃ
اللّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُلاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيم
উচ্চারনঃ আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম। লা তা খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি-ইজনিহি ইয়ালামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশি ইম মিন ইল মিহি ইল্লা বিমা শাআ ওয়াসিয়া কুরসিইউনহুস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যুল আজীম।
বাংলা অনুবাদঃ
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনিই চিরিঞ্জীব; যাবতীয় সবকিছুর ধারক। তাকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমিনের যা কিছু রয়েছে সবই তার। কে আছে এমন, যে সুপারিশ করবে তার কাছে তার অনুমতি ছাড়া ? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সবই তিনি জানেন। তার জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেস্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তার সিংহাসন সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেস্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারন করা তার পক্ষে কঠিন নয়। তিনি সরবোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা আল বাকারা-২৫৫)
জান্নাতের দরজাঃ আবূ উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি ফরিয নামাজ শেষে আয়তুল করসি পড়ে , তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোন কিছু বাধা হবে না। (সহীহ আল জামে-৬৪৬৪) হযরত আলী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শোনেছি, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাজের পর আয়তুল কুরসি নিয়মিত পড়ে তার জান্নাত প্রবেশ কেবল মৃত্যুই অন্তরায় হয়ে আছে। যে ব্যক্তি এ আয়াতটি বিছানায় শয়নের সময় পড়বে আল্লাহ তার ঘরে, প্রতিবেশীর ঘরে এবং আশপাশের সব ঘরে শান্তি বজায় রাখবেন।সুনানে বাইহাকী-২ঃ৩)
আয়তুল কুরসি ও এর ফযীলতঃ
aytul kursi |
মর্যাদাসম্পন্ন মহান আয়াতঃ
আদু জর জুনদুব ইবনে জানাদাহ (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আপনার প্রতি সবচেয়ে মরযাদাসম্পন্ন কন আয়াতটি নাযীল হিয়েছে ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, "আয়তুল কুরসি"। (নাসায়ি) উবাই বিন কা'ব থেকে বর্ণিতঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উবাই বিন কা'বকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, "তোমার কাছে কোরআন মাজীদের কোন আয়াতটি সর্ব মহান ? তিনি বলেছিলেন, (আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম) তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাত দ্বারা তার বক্ষে আঘাত করে বলেনঃ আবুল মুনযির ! এই ইল্মের কারনে তোমাকে ধন্যবাদ"। (সহীহ মুসলিম-১৭৫৫)শয়তান এর প্রভাব থেকে বাঁচার উপায়ঃ
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ সূরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ট আয়াত রয়েছে, যে ঘরে আয়তুল কুরসি পাঠ করা হবে সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে। (মুসতাদরাকে হাকিম -২১০৩)ফেরেস্তা নিযুক্তকারী আয়াতঃ
আবু হুরায়রা (রাঃ) একদিন দেখতে পেলেন একজন আগন্তক সদকার মাল চুরি করতেছে, তখন তিনি আগন্তকের হাত ধরে বললেন, আল্লয়াহ্র কসম আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর কাছে নিয়ে যাব তখন বলে যে, আমি খুব অভাবী আর তার অনেক প্রয়োজন। তাই দয়া করে আবু হুরায়রা তাকে ছেড়ে দিলেন। পরদিন সকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসার পর তিনি আবু হুরায়রা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, গতকাল তোমার অপরাধি কি করেছে? আবু হুরায়রা (রাঃ) তাকে ক্ষমা করার কথা বললেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অবশ্য সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবার আসবে। পরদিন আবু হুরায়রা (রাঃ) চুরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন আর যখন সে আবারও চুরি করতে আসল তখন তিনি তাকে পাকড়াও করলেন আর বললেন এবার অবশ্যই আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূলের কাছে নিয়ে যাব। এবারও সে চুর বলে যে সে খুব অভাবী আর তার অনেক প্রয়োজন আর সপথ করে যে, আর আসবে না। পরদিন আবারও রাসূল তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি একই জবাব দেন আর তখন তিনি বললেন, আসলেই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবার আসবে। পরদিনও আবার আবু হুরায়রা (রাঃ) চুরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন আর যখন সে চুরি করতে আসল তখন তিনি তাকে পাকড়াও করলেন আর বললেন, এবার অবশ্যই আমি তোমাকে রাসূলের কাছে নিয়ে যাব। তুমি বার বার সপথ করো আর চুরি করতে আস। চুর যখন দেখল এবার সে সত্তিই রাসূল (সাঃ) এর কাছে নিয়ে যাবে তখন অবস্থা বেগতিক দেখে সে বলে, আমাকে মাফ করো। আমি তোমাকে এমন কিছু বলে দিব যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাকে কল্যান দান করবেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) জানতে চাইলে চুর বলে "যখন ঘুমাতে যাবে তখন আয়তুল কুরসি (আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল....) পড়ে ঘুমাবে। তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন পাহাড়াদার নিযুক্ত করবে যে তোমার সাথে থাকবে আর কনো শয়তান সকাল পর্যন্ত তার কাছে আসতে পারবে না। এটা শুনে আবু হুরায়রা (রাঃ) তাকে ছেড়ে দিলেন। পরদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবার অপরাধীর কথা জানতে চায়লে তিনি আগের রাতের কথা বললেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যদিও সে চরম মিথ্যাবাদী কিন্ত সে সত্য বলেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু হুরায়রা (রাঃ) কে বললেন, তুমি কি জান সে কে? আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেন; না। রাসূল (সাঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেন, সে হচ্ছে শয়তান। (সহীহ বুখারী -২৩১১)
যিকিরের আয়াতঃ
উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তার এক খেজুর রাখার থলি ছিল। সেটায় ক্রমশ তার খেজুর কমতে থাক্ত।মেক রাতে সে পাহারা দেয়। হঠাত যুবকের মত এক জন্তন্দেখা গেলে, তিনি তাকে সালাম দেন। সে সালামের উত্তর দেয়। তিনি বলেন তুমি কি ? জীন না মানুষ ? সে বলে জীন। উবাই (রাঃ) তার হাত দেখতে চান। সে তার হাত দেয়। তার হাত ছিল কুকুরের হাতের মত আর চুল ছিল কুকুরের চুলের মত। তিনি বলেন এটা জীনের সুরত। সে জন্ত বলে, জীন সম্প্রদায়ের মধ্যে আমি সবচাইতে সাহসী। উবাই (রাঃ) বলেন তোমার আসার কারন কি ? সে বলে, আমরা শুনেছি আপনি সাদকা পছন্দ করেন, তাই কিছু সাদকার খাদ্যসামগ্রি নিতে এসেছি। সাহাবি বললেন, তোমাদের থেকে পরিত্রানের উপায় কি ? সে বলে সূরা বাকারার এই আয়াতটি (আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম।) যে ব্যক্তি সন্ধায় এটি পড়বে, সকাল পর্যন্ত আমাদের থেকে পরিত্রান পাবে। আর যে ব্যক্তি সকালে এটি পড়বে, সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের থেকে নিরাপদে থাকবে। সকাল হলে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাসে আসেন এবং ঘটনার কথা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, খবীস সত্য বলেছে। (সহীহুত তারগীব -১/৪১৮)
আয়তুল কুরসির অঙ্গ রয়েছেঃ
উবাই বিন কা'ব (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী কারিম (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহর কসম! যার হাতে আমার প্রাণ আয়তুল কুরসির একটি জিহ্বা ও দু'টি ঠোঁট রয়েছে এটি আরশের পায়ার কাছে আল্লাহর প্রসংশা করতে থাকে। (মুসনাদে আহমদ -২১৬০২)
Monday, May 16, 2016
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্- এর অর্থ, মাহাত্ম্য ও মর্যাদা।
আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতু।
بِسمِ اللَّهِ الرَّحمٰنِ الرَّحيمِ
পরম করুনাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি।
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু- এর অর্থ ও মাহাত্ব।
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু এ সংহ্মিপ্ত বাক্যটি দ্বীনের ভিত্তি ও বোনিয়াদ। ইসলাম ধর্মে এর রয়েছে বড় মর্যাদা ও মহান তাৎপর্য। এটি ইসলাম ধর্মের পাচটি মৌলিক বোনিয়াদ সমূহের সর্বপ্রথম বোনিয়াদ এবং ঈমানের সর্বোচ্চ শাখা। সাৎকার্য আল্লাহর দরবারে গৃহীত হওয়া না হওয়া এ কালেমার মৌখীক স্বীকৃতি দেওয়া এবং তদনুযায়ী আমল করার উপর নির্ভর করে। এ বাক্যটির সঠিক ও বিশুদ্ধ অর্থ যার দ্বিতীয় কোন ব্যাখ্যার অবকাশ নেই তা হলো, "আল্লাহ্ ব্যতীত সত্যিকারে কোন মা'বুদ বা উপাস্য নেই"। এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন সৃষ্টিকর্তা নেই, অথবা আল্লাহ্ ছাড়া আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের সহ্মম কেউ নেই, বা আল্লাহ্ ব্যতীত কেউ বিদ্যমান নেই। এ বাক্যটির দু'টি অংশ রয়েছে যথাঃ
১। "লা ইলাহা" এটি নেতিবাচক বা অস্বীকৃতিমূলক অংশ। এতে প্রত্যেক বস্তুর উপাস্য বা মা'বুদ হওয়ার যোগ্যতাকে অস্বীকার করা হয়েছে।
২। "ইল্লাল্লাহ্" এটি ইতিবাচক অংশ। যাতে শুধুমাত্র এক ও এককভাবে আল্লাহর জন্যই মা'বুদ হওয়ার উপযোক্ততাকে দৃড়ভাবে স্বীকার করা হয়েছে। অতএব আল্লাহ্ ব্যতীত কারো এবাদত করা যাবেনা। কোন প্রকার এবাদত আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো জন্য সম্পাদন করা বৈধ হবে না। যে ব্যক্তি এ কালেমার অর্থ অনুধাবন করে এবং তার অত্যাবশ্যকীয় বিধানগুলো সর্বপ্রকার শির্ক থেকে বিরত থাকে, একত্ববাদের স্বীকৃতি দিয়ে মেনে চলে, মুখে তার স্বীকৃতি দেয়, সাথে সাথে কালেমায় নিহিত বিষয়গুলোর উপর দৃঢ় বিশ্বাস ও প্রত্যয় রেখে তদানুযায়ী আমল করে, সেই প্রকৃত মুসলমান। আর যে অবিচল কোন আস্থা না রেখে তার উপর আমল করার ভান দেখায়, সে মুনাফিক ও কপট। আর যে কালেমার পরিপন্থী (যথা শির্ক) কাজ করে, সে মুনাফিক ও কাফের যদিও সে তা মুখে উচ্চারন করুক না কেন।
লা-ইলাহা ইল্লল্লাহ্ এর মর্যাদা ও মাহাত্ম্যঃ
এ কালেমার অনেক উচ্চ মর্যাদা ও মাহাত্ম্য এবং বিপুল সফল রয়েছে। নিম্নে কিঞ্চিত পেশ করা হলোঃ
(১) এ কালেমাটি দোযখের চিরস্থায়ী ও অনন্ত কালের ভয়াবহ শাস্তি থেকে মানুষকে নিষ্কৃতি দেয়, যদিও (গুনাহের কারনে সে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য) তাতে নিহ্মিপ্ত হয়। বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসটি তারই প্রমান। রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অর্থাৎ, "যে ব্যক্তি `লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্' এর স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তার অন্তরে যব পরিমান কল্যান আছে তাকে দোযখ থেকে বের করে আনা হবে। আর যে ব্যক্তি 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লা' এর উচ্চারন করেছে এবং তার অন্তরে গম পরিমান কল্যান আছে, তাকে দোযখ থেকে বের করে আনা হবে। আর সে ব্যক্তিকেও বের করে আনা হবে, যে এ বাক্যটি পড়েছে এবং তার অন্তরে অনু পরিমান কল্যান আছে"। (বুখারী)
(২) এ কালেমাটির জন্য মানুষ ও জ্বীন জাতিদ্বয়কে সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
وَما خَلَقتُ الجِنَّ وَالإِنسَ إِلّا لِيَعبُدونِ
"আমি জ্বীন ও মানুষকে অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করি নাই কেবল এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার এবাদত করবে"। (সূরা আয-যারীয়াত ৫৬)
(৩) এ কালেমাটি প্রচারের জন্যই যুগে যুগে অনেক রাসূল (সাঃ) প্রেরিত হয়েছেন, অবতির্ন হয়েছে আসমানি কিতাব সমূহ। আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা বলেনঃ
وَما أَرسَلنا مِن قَبلِكَ مِن رَسولٍ إِلّا نوحى إِلَيهِ أَنَّهُ لا إِلٰهَ إِلّا أَنا۠ فَاعبُدونِ
অর্থাৎ, "আমি তোমার পূর্বে যে রাসূলই প্রেরন করেছি, তাকে এ অহী দান করেছি যে, আমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই; অতএব তোমরা আমারই এবাদত কর"। (সূরা আম্বিয়া ২৫)
(৪) এ কালেমাটি সমস্ত রাসূলগনের দাওয়াতের এক অভিন্ন বিষয় ছিল। তারা সকলেই কালেমার দিকে আহ্বান করে স্বীয় জাতীকে বলতেন,
قالَ يٰقَومِ اعبُدُوا اللَّهَ ما لَكُم مِن إِلٰهٍ غَيرُهُ
"আল্লাহর এবাদত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন মা'বুদ নাই"। (সূরা আল-আ'রাফ ৭৩)
(৫) এ কালেমাটি হলো সর্বোত্তম যিকর। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগন সর্বোত্তম যে যিকরটি করতাম সেটি হলোঃ
لا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ
অর্থাৎ, "আল্লাহ্ ছাড়া সত্যিকারে কোন মা'বুদ নাই। গিনি একক তার কোন অংশিদার নেই"। (মুআত্তা)
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ এর শর্তাবলীঃ
আমরা যে কলেমাটি উচ্চারণ করে ইসলামের সুশীতল ছায়া তলে সমবেত হয়েছি, সে কালেমার এমন কিছু শর্তাবলী আছে, যা একত্রে আমাদের মধ্যে বর্তমান হলে এবং একটি শর্তেরও বিরোধিতা না করে এ সব গুলো দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতে পারলে প্রকৃত মুমিন বলে পরিগনিত হবো। নিম্নে সে শর্তাবলী সংহ্মিপ্ত ভাবে উল্লেখ করা হলোঃ
(১) ইলম (জ্ঞান)। কালেমার ইতিবাচক ও নেতিবাচক অর্থ এবং তার অবিচ্ছেদ্য জ্ঞান থাকা আবশ্যক। বান্দা যখন মহান প্রভুকে এক ও একক মা'বুদ বলে জানবে, তিনি ব্যতীরকে অন্য যে কোন সত্তার এবাদত করাকে ভ্রান্তি বলে বিশ্বাস করবে এবং সে জ্ঞান অনুযায়ী আমল করবে, সেই প্রকৃতার্থে কালেমার মর্ম ও তাৎপর্যের খাটি জ্ঞানী বলে গন্য হবে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
فَاعلَم أَنَّهُ لا إِلٰهَ إِلَّا اللَّهُ
অর্থাৎ, "হে নবী! জেনে রাখো! আল্লাহ্ ছাড়া কোন উপাস্য নেই"। (সূরা মুহাম্মদ ১৯)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
অর্থাৎ, "যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই-এর জ্ঞান রেখে মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে"। (মুসলিম)
(২) দৃঢ় বিশ্বাস। এ কালেমার মৌখিক স্বীকৃতি এমন দৃঢ় বিশ্বাস ও অবিচল প্রত্যয় সহকারে দিতে হবে যাতে থাকবে অন্তরের প্রশান্তি। জ্বীন ও মানব শয়তানের বপন করা কোন প্রকারের সন্দেহের বীজ সেখানে থাকবে না। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
إِنَّمَا المُؤمِنونَ الَّذينَ ءامَنوا بِاللَّهِ وَرَسولِهِ ثُمَّ لَم يَرتابوا
অর্থাৎ, "প্রকৃত পহ্মে মুমিন তো তারাই যারা আল্লাহ্ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে। অতঃপর কোন সন্দেহ পোষন করে না"। (সূরা আল হুজরাত ১৫)
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ অর্থাৎ, "আমি সাহ্ম্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া সত্যিকারে কোন মা'বুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। যেকোন বান্দা এ দু'টি বাক্যের সন্দেহমুক্ত বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর দরবারে উপস্হিত হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে"। (মুসলিম)
(৩) গ্রহন। এ কালেমার প্রত্যেকটি দাবিকে মুখে ও অন্তরে সাদরে গ্রহন করতে হবে। অতএব অতীত ও বর্তমানের বিভিন্ন ঘটনাবলী কোরআন ও হাদিসে এসেছে তা বিশ্বাস করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ ভাবে যা বর্নিত হয়েছে, তার প্রতি ঈমান আনতঃ প্রত্যেকটিকে গ্রহন করে নিতে হবে। কোন কিছুকেই প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
ءامَنَ الرَّسولُ بِما أُنزِلَ إِلَيهِ مِن رَبِّهِ وَالمُؤمِنونَ ۚ كُلٌّ ءامَنَ بِاللَّهِ وَمَلٰئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لا نُفَرِّقُ بَينَ أَحَدٍ مِن رُسُلِهِ ۚ وَقالوا سَمِعنا وَأَطَعنا ۖ غُفرانَكَ رَبَّنا وَإِلَيكَ المَصيرُ
অর্থাৎ, "রাসূল সেই হেদায়াতকেই বিশ্বাস করেছেন, যা তার পরোয়ারদিগারের নিকট হতে তার প্রতি নাযিল হয়েছে।আর যারা এই রাসূলের প্রতি বিশ্বাস করেছে তারাও সেই হেদায়াতকে মন দিয়ে মেনে নিয়েছে।সকলেই আল্লাহ্, ফেরেস্তা, তার কিতাব এবং তার রাসূলগনকে বিশ্বাস করে ও মানে এবং তাদের কথা এই, আমরা আল্লাহর রাসূলদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না। আমরা নির্দেশ শুনেছি এবং বাস্তব হ্মেত্রে মেনে নিয়েছি। হে আল্লাহ্! আমরা তোমার নিকট গুনাহ মাফের জন্য পার্থনা করি, আমাদেরকে তোমার দিকেই ফিরে য়েতে হবে"। (সূরা আল বাকারাহ্ ২৮৫)
শরীয়তের কোন বিধান বা তার নির্ধারিত শাস্তি ও দন্ডবিধির উপর আপত্তি ও অভিযোগ উত্থাপন করা, বা তা প্রত্যাখ্যান করা ঈমানের সমস্ত দাবিকে গ্রহন না করারই শামিল। যেমন কেউ কেউ চুরি ও ব্যভিচারের দন্ড-বিধি, বহুবিবাহ প্রথা ও উত্তরাধীকার বিধি বিধান প্রভৃতির উপর চরম ধৃষ্টতার সাথে তথাকথিত অসার অভিযোগ খাড়া করে থাকে। আল্লাহ তা' আলা বলেনঃ
وَما كانَ لِمُؤمِنٍ وَلا مُؤمِنَةٍ إِذا قَضَى اللَّهُ وَرَسولُهُ أَمرًا أَن يَكونَ لَهُمُ الخِيَرَةُ مِن أَمرِهِم
অর্থাৎ, "কোন মুমিন পূরুষ ও কোন মুমিন স্ত্রীলোকের এই অধিকার নাই যে, আল্লাহ্ ও তার রাসূল যখন কোন বিষয়ে ফয়সালা করে দিবেন, তখন সে নিজেই সেই ব্যাপারে নিজে কোন ফায়সালা করবার ইখতিয়ার রাখবে"। (সূরা আহজাব ৩৬)
(৪) আনুগত্য। এর অর্থ মেনে নেয়া ও আনুগত্য করা। অর্থাৎ কালেমা যে সমস্ত বিষয়কে আরোপ করে, তা স্বীকৃতি দেওয়া। আর আনুগত্য হলো কর্মের মাধ্যমে তার অনুসরন করা। তাই কেউ "লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্" এর অর্থ বুঝলো, এর প্রতি বিশ্বাস স্হাপন করলো, এবং মৌখিক স্বীকৃতিও দিল, কিন্তু সে জ্ঞান অনুযায়ী আমল করলো না, করলো না আনুগত্য ও অনুসরণ, এমতাবস্থায় তার সেই জ্ঞান, বিশ্বাস ও মৌখিক স্বীকৃতি তার কোন উপকারে আসবে না। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
وَأَنيبوا إِلىٰ رَبِّكُم وَأَسلِموا لَهُ
অর্থাৎ, "ফিরে এসো তোমার রবের দিকে এবং অনুগত হও তার"। আল্লাহ্পাক আরো বলেনঃ
فَلا وَرَبِّكَ لا يُؤمِنونَ حَتّىٰ يُحَكِّموكَ فيما شَجَرَ بَينَهُم ثُمَّ لا يَجِدوا فى أَنفُسِهِم حَرَجًا مِمّا قَضَيتَ وَيُسَلِّموا تَسليمًا
অর্থাৎ, " হে মুহাম্মদ! তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা কিছুতেই মুমিন হতে পারে না, যতহ্মণ না তারা তাদের পারস্পরিক মতভেদের বিষয় ও ব্যপারসমূহে তোমাকে বিচারপতি রুপে মেনে নবে। অতঃপর তুমি যাই ফয়সালা করবে, তারা নিজেদের মনে তৎসম্পর্কে কোন কুন্ঠাবোধ করবে না বরং তা সর্বান্তঃকরনে মেনে নেবে "। (সূরা নিসা ৬৫)
(৫) সত্যানিষ্ঠা। সে নিজের ঈমান ও মৌখিক ধর্ম বিশ্বাসে সত্যবাদী হবে। আল্লাহ্ তা' আলা বলেনঃ
يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكونوا مَعَ الصّٰدِقينَ
অর্থাৎ, " হে ঈমানদার লোকেরা! আল্লাহ্কে ভয় কর এবং সত্যাদর্শ লোকদের সঙ্গী হও "। (সূরা তাওবাহ্ ১১৯) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
অর্থাৎ, "যে ব্যক্তি অন্তর থেকে সত্যানিষ্ঠা সহকারে 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ ' বললো, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে"। (মুসনাদে আহমদ) কেউ যদি এ কালেমাটি মৌখিক স্বীকৃতি দেয় আর অন্তরে তার দাবিকে প্রত্যাখ্যান ও অস্বীকার করে, তাহলে তার মৌখিক স্বীকৃতি তাকে মুক্তি দিতে পারবে না। বরং সে মুনাফিকের অন্থর্ভুক্ত হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনিত বিষয়কে বা তার কোন কিছুকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা সত্য নিষ্ঠার পরিপন্থী বস্তু। কেননা আল্লাহ্ তা'আলা নিজের আনুগত্য নির্দেশ প্রদানের সঙ্গে রাসূলের আনুগত্য ও তার সত্যায়ন করাকে সংযুক্ত করেছেন। যেমন আল্লাহ্ বলেনঃ
قُل أَطيعُوا اللَّهَ وَأَطيعُوا الرَّسولَ
অর্থাৎ, "বলো, আল্লাহর অনুগত হও এবং রাসূলের অনুসরনকারী হও"। (সূরা নূর ৫৪)
(৬) ইখলাস। বান্দা নিয়ত তথা সংকল্পকে শির্কের সমস্ত পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত রেখে স্বীয় আমলকে স্বচ্ছ রাকবে।সুতরাং তার সমস্ত কাজ ও কথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের নিমিত্তে হবে। তাতে লোক দেখানোর উদ্দেশ্য বা খ্যাতি অর্জনের অভিলাষ অথবা কোন লাভের আকাঙ্হ্মা কিংবা ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধ করার সাধ অথবা প্রকাশ্য বা গোপনীয় কোন প্রবৃত্তির সিদ্ধি, আল্লাহর হেদায়াতকে অপেহ্মা করে কোন ব্যক্তি মাযহাব বা দলের অত্যাধিক ভালবাসার বশবর্তী হয়ে আমল করার প্রবনতা থাকতে পারে না। বরঞ্চ সকল কাজ আল্লাহর সন্তুষ্ট বিধান এবং পরলৌকিক উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য হতে হবে। কোন মানুষের বিনিময় প্রদান বা কৃতজ্ঞতা পাওয়ার প্রতি ভ্রুহ্মেপও করবে না। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
أَلا لِلَّهِ الدّينُ الخالِصُ
অর্থাৎ, "সাবধান! বিশুদ্ধ আনুগত্য একমাত্র আল্লাহরই হক"। (সূরা যূমার ৩) আল্লাহ আরো বলেনঃ
وَما أُمِروا إِلّا لِيَعبُدُوا اللَّهَ مُخلِصينَ لَهُ الدّينَ
অর্থাৎ, "আর তাদেরকে এটা ব্যতীত কোন নির্দেশ দেওয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহর এবাদত করবে, নিজেদের দ্বীনকে একমাত্র তারই জন্য খালিস করবে"। (সূরা বায়্যিনাহ
(৫) বুখারী ও মুসলিম শরীফে ইতবান (রাঃ) থেকে একটি হাদিস বর্নিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
(৫) বুখারী ও মুসলিম শরীফে ইতবান (রাঃ) থেকে একটি হাদিস বর্নিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
অর্থাৎ, "যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য "লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ" বলল, আল্লাহ্ তাকে দোযখের উপর হারাম করে দেন"।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ-এর অর্থঃ
এ বাক্যটির অর্থ হলো, মৌখিক ও আন্তরিক ভাবে স্বীকার করা যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল মানবকুলের প্রতি প্রেরিত রাসূল। আর এ স্বীকৃতির দাবি হলো, তার নির্দেশাবলীর আনুগত্য করা। অতীত ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তার দেওয়া সংবাদ সত্য বলে বিশ্বাস করা। তিনি যেসব কাজ নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা। আর আল্লাহর এবাদত তারই প্রদত্ত বিধি-বিধান অনুযায়ী সম্পাদন করা।
এ বাক্যটির দু'টি অংশ রয়েছে যথাঃ
(১) মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা।
(২) মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল।
আর এ অংশ দু'টি তার ব্যপারে বাড়াবাড়ি করার ব্যপারে অস্বীকৃতি ঘোষনা করে। তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আর এই উভয় গুনের দ্বারাই তিনি সৃষ্টির সৃষ্ট মানব। এখানে (আবদ্) এর অর্থ হলো অধীনস্হ বান্দা অর্থাৎ তিনি মানুষ। অন্যান্য সৃষ্টির ন্যায় তিনিও সৃষ্ট। মানুষ হিসেবে তাদের উপরে যা প্রযোজ্য তার উপরেও সমভাবে তা প্রযোজ্য। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
قُل إِنَّما أَنا۠ بَشَرٌ مِثلُكُم
অর্থাৎ, "হে নবী বলে দাও, আমি তোমাদের মতনই একজন মানুষ। (সূরা কাহ্ফ ১১০) আল্লাহ্ তা'আলা আরো বলেনঃ
الحَمدُ لِلَّهِ الَّذى أَنزَلَ عَلىٰ عَبدِهِ الكِتٰبَ وَلَم يَجعَل لَهُ عِوَجا
অর্থাৎ, "সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি তার বান্দার উপর কিতাব নাযিল করেছেন এবং তাতে কোনরুপ বক্রতার অবকাশ রাখেন নাই"। (সূরা কাহ্ফ ১) আর "রাসূল" এর অর্থ হলো তিনি সকল মানব সম্প্রদায়কে আল্লাহর প্রতি আহ্বানকারী, সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা হিসাবে প্রেরিত হয়েছিলেন। এই উভয় গুনের সাহ্ম প্রদান তার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করাকে অস্বীকার করে। অনেক মানুষ যারা নিজেকে নবীর উম্মত বলে দাবি করে, তার ব্যাপারে অতিরঞ্জিত ও বাড়াবাড়ি করতঃতাকে বান্দার মর্যাদা থেকে সরিয়ে মা'বুদের মর্যাদায় ভূষিত করে থাকে। তাই আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার নিকট ফরিয়াদ ও প্রয়োজন পূরনের প্রার্থনা এবং বিপদ মুক্তির কামনা করে থাকে। অথচ। এসব কেবল মাত্র আল্লাহরই হ্মমতাধীন। আবার অনেকে তার রিসালাতকে অস্বীকার করে অথবা তার অনুসরনে বাড়াবাড়ি করে এবং তার প্রতি প্রেরিত বিধানের পরিপন্থী উক্তির উপর নির্ভর করে।
আমাদের সকলকে এ কালেমার অর্থ বোঝার তৌফিক দান করুন, আমিন।
Subscribe to:
Posts
(
Atom
)