মোঃবাহাদুর হোসেন বাদল

Saturday, May 21, 2016

আয়তুল কুরসি এর ফযীলতঃ

No comments :
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
আয়তুল কুরসি কুরআনুল কারিমের সবচেয়ে বড় সূরা 'সূরা আল বাকারার ২৫৫ নং আয়াত' যা কুরআনের সবচেয়ে বড় আয়াতও বটে এ সূরার রয়েছে অনেক ফযিলত এর ফযিলত সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম হযরত উবাই ইবনে কা'বকে জিজ্ঞাসা করলেন সবচেয়ে ফযিলত ও গুরুত্বপূর্ণ আয়াত কোনটি ? উবাই ইবনে কা'ব আরয করলেন, সেটি হচ্ছে আয়তুল কুরসি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম তা সমর্থন করলেন এবং বললেন, হে আবুল মানজার ! তোমাকে এই উত্তম জ্ঞনের জন্য ধন্যবাদ (মুসনাদে আহমদ) 

আয়তুল কুরসি আরবি ভাষায়ঃ

اللّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُلاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيم
উচ্চারনঃ আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম। লা তা খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি-ইজনিহি ইয়ালামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশি ইম মিন ইল মিহি ইল্লা বিমা শাআ ওয়াসিয়া কুরসিইউনহুস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যুল আজীম। 

বাংলা অনুবাদঃ 

আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনিই চিরিঞ্জীব; যাবতীয় সবকিছুর ধারক। তাকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমিনের যা কিছু রয়েছে সবই তার। কে আছে এমন, যে সুপারিশ করবে তার কাছে তার অনুমতি ছাড়া ? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সবই তিনি জানেন। তার জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেস্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তার সিংহাসন সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেস্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারন করা তার পক্ষে কঠিন নয়। তিনি সরবোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা আল বাকারা-২৫৫)

আয়তুল কুরসি ও এর ফযীলতঃ

www.bahadurhossen24.com
aytul kursi
জান্নাতের দরজাঃ আবূ উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি ফরিয নামাজ শেষে আয়তুল করসি পড়ে , তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোন কিছু বাধা হবে না। (সহীহ আল জামে-৬৪৬৪) হযরত আলী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শোনেছি, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাজের পর আয়তুল কুরসি নিয়মিত পড়ে তার জান্নাত প্রবেশ কেবল মৃত্যুই অন্তরায় হয়ে আছে। যে ব্যক্তি এ আয়াতটি বিছানায় শয়নের সময় পড়বে আল্লাহ তার ঘরে, প্রতিবেশীর ঘরে এবং আশপাশের সব ঘরে শান্তি বজায় রাখবেন।সুনানে বাইহাকী-২ঃ৩)

মর্যাদাসম্পন্ন মহান আয়াতঃ

 আদু জর জুনদুব ইবনে জানাদাহ (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আপনার প্রতি সবচেয়ে মরযাদাসম্পন্ন কন আয়াতটি নাযীল হিয়েছে ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, "আয়তুল কুরসি"। (নাসায়ি) উবাই বিন কা'ব থেকে বর্ণিতঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উবাই বিন কা'বকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, "তোমার কাছে কোরআন মাজীদের কোন আয়াতটি সর্ব মহান ? তিনি বলেছিলেন, (আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম) তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাত দ্বারা তার বক্ষে আঘাত করে বলেনঃ আবুল মুনযির ! এই ইল্মের কারনে তোমাকে ধন্যবাদ"। (সহীহ মুসলিম-১৭৫৫)

শয়তান এর প্রভাব থেকে বাঁচার উপায়ঃ

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ সূরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ট আয়াত রয়েছে, যে ঘরে আয়তুল কুরসি পাঠ করা হবে সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে। (মুসতাদরাকে হাকিম -২১০৩)

ফেরেস্তা নিযুক্তকারী আয়াতঃ

আবু হুরায়রা (রাঃ) একদিন দেখতে পেলেন একজন আগন্তক সদকার মাল চুরি করতেছে, তখন তিনি আগন্তকের হাত ধরে বললেন, আল্লয়াহ্র কসম আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূল  (সাঃ) এর কাছে নিয়ে যাব তখন বলে যে, আমি খুব অভাবী আর তার অনেক প্রয়োজন। তাই দয়া করে আবু হুরায়রা তাকে ছেড়ে দিলেন। পরদিন সকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসার পর তিনি আবু হুরায়রা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, গতকাল তোমার অপরাধি কি করেছে? আবু হুরায়রা (রাঃ) তাকে ক্ষমা করার কথা বললেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অবশ্য সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবার আসবে। পরদিন আবু হুরায়রা (রাঃ) চুরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন আর যখন সে আবারও চুরি করতে আসল তখন তিনি তাকে পাকড়াও করলেন আর বললেন এবার অবশ্যই আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূলের কাছে নিয়ে যাব। এবারও সে চুর বলে যে সে খুব অভাবী আর তার অনেক প্রয়োজন আর সপথ করে যে, আর আসবে না। পরদিন আবারও রাসূল তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি একই জবাব দেন আর তখন তিনি বললেন, আসলেই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবার আসবে। পরদিনও আবার আবু হুরায়রা (রাঃ) চুরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন আর যখন সে চুরি করতে আসল তখন তিনি তাকে পাকড়াও করলেন আর বললেন, এবার অবশ্যই আমি তোমাকে রাসূলের কাছে নিয়ে যাব। তুমি বার বার সপথ করো আর চুরি করতে আস। চুর যখন দেখল এবার সে সত্তিই রাসূল (সাঃ) এর কাছে নিয়ে যাবে তখন অবস্থা বেগতিক দেখে সে বলে, আমাকে মাফ করো। আমি তোমাকে এমন কিছু বলে দিব যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাকে কল্যান দান করবেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) জানতে চাইলে চুর বলে "যখন ঘুমাতে যাবে তখন আয়তুল কুরসি (আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল....) পড়ে ঘুমাবে। তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন পাহাড়াদার নিযুক্ত করবে যে তোমার সাথে থাকবে আর কনো শয়তান সকাল পর্যন্ত তার কাছে আসতে পারবে না। এটা শুনে আবু হুরায়রা (রাঃ) তাকে ছেড়ে দিলেন। পরদিন রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবার অপরাধীর কথা জানতে চায়লে তিনি আগের রাতের কথা বললেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যদিও সে চরম মিথ্যাবাদী কিন্ত সে সত্য বলেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু হুরায়রা (রাঃ) কে বললেন, তুমি কি জান সে কে? আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেন; না। রাসূল (সাঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেন, সে হচ্ছে শয়তান। (সহীহ বুখারী -২৩১১)

যিকিরের আয়াতঃ 

উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তার এক খেজুর রাখার থলি ছিল। সেটায় ক্রমশ তার খেজুর কমতে থাক্ত।মেক রাতে সে পাহারা দেয়। হঠাত যুবকের মত এক জন্তন্দেখা গেলে, তিনি তাকে সালাম দেন। সে সালামের উত্তর দেয়। তিনি বলেন তুমি কি ? জীন না মানুষ ? সে বলে জীন। উবাই (রাঃ) তার হাত দেখতে চান। সে তার হাত দেয়। তার হাত ছিল কুকুরের হাতের মত আর চুল ছিল কুকুরের চুলের মত। তিনি বলেন এটা জীনের সুরত। সে জন্ত বলে, জীন সম্প্রদায়ের মধ্যে আমি সবচাইতে সাহসী। উবাই (রাঃ) বলেন তোমার আসার কারন কি ? সে বলে, আমরা শুনেছি আপনি সাদকা পছন্দ করেন, তাই কিছু সাদকার খাদ্যসামগ্রি নিতে এসেছি। সাহাবি বললেন, তোমাদের থেকে পরিত্রানের উপায় কি ? সে বলে সূরা বাকারার এই আয়াতটি (আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম।) যে ব্যক্তি সন্ধায় এটি পড়বে, সকাল পর্যন্ত আমাদের থেকে পরিত্রান পাবে। আর যে ব্যক্তি সকালে এটি পড়বে, সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের থেকে নিরাপদে থাকবে। সকাল হলে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাসে আসেন এবং ঘটনার কথা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, খবীস সত্য বলেছে। (সহীহুত তারগীব -১/৪১৮)

আয়তুল কুরসির অঙ্গ রয়েছেঃ

উবাই বিন কা'ব (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী কারিম (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহর কসম! যার হাতে আমার প্রাণ আয়তুল কুরসির একটি জিহ্বা ও দু'টি ঠোঁট রয়েছে এটি আরশের পায়ার কাছে আল্লাহর প্রসংশা করতে থাকে। (মুসনাদে আহমদ -২১৬০২)

No comments :