নামাজ বেহেস্তের চাবী

মোঃবাহাদুর হোসেন বাদল

Friday, May 27, 2016

No comments :

ডাউনলোড করে নিন কিছু ইসলামিক বই। মুসলিম ভাই ও বোনেরা সবাই ডাউনলোড করুন । 

বন্ধরা সবাই ভালতো আশাকরি সবাই ভাল আছেন । আজকে আমি আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম কিছু ইসলামিক বই আশাকরি বই গুলো আপনাদের কাজে আসবে । সাইজ খুব বড় না খুব ছোটই আছে আর ডাউনলোড করতেও কোন সমস্যা হবে না । তাহলে আর এই বিষয়ে কথা না বাড়িয়ে নীচে থেকে এখুনি ডাউনলোড করুন । সব কটি বই পেতে নীচে যান ।



ডাউনলোড 

কিতাবুত তাওহীদ



Thursday, May 26, 2016

শির্ক থেকে সতর্ক ও তাওহীদের মাহাত্ম্য।

No comments :
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
পরম করুনাময় আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'লার নামে শুরু করছি।

শির্ক থেকে সতর্ক ও তাওহীদের মাহাত্ম্য। 

শির্ক

মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা'লা বলেনঃ
إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ
"নিশ্চয় শির্ক অতি বড় যুলুমের কাজ"। (সূরা লোকমান-১৩)
আল্লাহ্‌ তা'আলা আরো বলেনঃ
إِنَّ اللّهَ لاَ يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَن يَشَاء 
"আল্লাহ্‌ কেবল শির্কের গুনাহ মাফ করবেন না, শির্ক ব্যাতীত আর যত গুনাহ আছে তা আল্লাহ্‌ য়াকে ইচ্ছা তাকে মাফ করে দিবেন"। (সূরা নিসা-৪৮)
মহান আল্লাহ্ আরো বলেনঃ
وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
"তোমার প্রতি ও তোমার পূর্বে গত হওয়া সমস্ত নবী-রাসূলদের প্রতি এই অহী পাঠানো হয়েছে যে, তুমি যদি শির্ক কর, তাহলে তোমার আমল নষ্ট হয়ে যাবে, আর তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে"। (সূরা আল যুমার-৬৫)
তিনি আরো বলেনঃ
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
"আমি জ্বিন ও মানুষকে অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করি নাই, কেবল এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার এবাদত বন্দেগী করবে"। (সূরা আয য়ারিয়াত-৫৬)
আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা আরো বলেনঃ
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ
"আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে একজন করে রাসূল পাঠিয়েছি। আর তার সাহায্যে সকলকে সমাধান করে দিয়েছি যে, আল্লহর এবাদত বন্দেগী কর এবং তাগুতের এবাদত বন্দেগী থেকে দূরে থাক"। (সূরা নাহ্ল- ৩৬)
জাবের (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যে ব্যক্তি শীর্ক করা ব্যতিরকে আল্লাহর সম্মুখে উপস্হিত হতে পারবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে শির্ক নিয়ে উপস্হিত হবে, সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে"।(মুসলিম)
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ননা করেছেন। তিনি বলেছেন, "ধ্বংসকারী সাতটি বস্তু থেকে বাচো! সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! (সাঃ) সেই সাতটি বস্তু কি কি? তিনি উত্তরে বলেন, আল্লাহর সহিত শির্ক করা___। (বুখারী ও মুসলিম) মাআয বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি একটি গাধার উপরে আল্লাহর নবীর পশ্চাতে বসে ছিলাম। অতঃপর আল্লাহর রাসূল আমাকে সাক্ষ্য করে বললেন, হে মাআয! বান্দাদের উপর আল্লাহর এবং আল্লাহর উপর বান্দাদের অধিকার কি জান? আমি বললাম, আল্লাহ্‌ ও তার রাসূল সর্বাধিক জ্ঞাত।  রাসূল (সাঃ) বললেন, বান্দার উপর আল্লাহর হক তথা অধিকার হলো এই যে, তারা এবাদত করবে শুধুমাত্র তারই এবং তার সঙ্গে কোন কিছুকেই শরীক করবে না। আর আল্লাহর কাছে বান্দার আবদার হলো এই যে, তিনি শির্ক মুক্ত বান্দাকে শাস্তি দেবেন না। (বুখারী ও মুসলিম)
উক্ত আয়াত ও হাদীসসমূহের নির্দেশনাবলীঃ
১। শির্কের গুনাহ এত ভয়ংকর যে, তাওবা করা ব্যাতীত আল্লাহ্‌ তা মাফ করবেন না, যেমন অন্যান্য পাপসমূহ ইচ্ছে করলে আল্লাহ্‌ মাফ করে দিবেন।
২। যে শির্কের উপর মৃত্যু বরন করবে, তার আমল যেমন পন্ড ও বিফল হবে, তেমনি দোযখই অনন্ত কালের জন্য হবে অবধারিত পরিণতি।
৩। এতে তাওহীদ তথা একত্ববাদের মাহাত্ম্য প্রমানীত হয়, যা ছিল জ্বিন ও মানব সৃষ্টির মূল লক্ষ এবং জান্নাত লাভ ও দোযখ থেকে মুক্তির প্রধান পূর্বশর্ত।

আমাদের সকল মুসলমানদেরকে শির্ক থেকে বাচার তৌফিক দান করো, আমিন।

Saturday, May 21, 2016

আয়তুল কুরসি এর ফযীলতঃ

No comments :
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
আয়তুল কুরসি কুরআনুল কারিমের সবচেয়ে বড় সূরা 'সূরা আল বাকারার ২৫৫ নং আয়াত' যা কুরআনের সবচেয়ে বড় আয়াতও বটে এ সূরার রয়েছে অনেক ফযিলত এর ফযিলত সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম হযরত উবাই ইবনে কা'বকে জিজ্ঞাসা করলেন সবচেয়ে ফযিলত ও গুরুত্বপূর্ণ আয়াত কোনটি ? উবাই ইবনে কা'ব আরয করলেন, সেটি হচ্ছে আয়তুল কুরসি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম তা সমর্থন করলেন এবং বললেন, হে আবুল মানজার ! তোমাকে এই উত্তম জ্ঞনের জন্য ধন্যবাদ (মুসনাদে আহমদ) 

আয়তুল কুরসি আরবি ভাষায়ঃ

اللّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُلاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيم
উচ্চারনঃ আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম। লা তা খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি-ইজনিহি ইয়ালামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশি ইম মিন ইল মিহি ইল্লা বিমা শাআ ওয়াসিয়া কুরসিইউনহুস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যুল আজীম। 

বাংলা অনুবাদঃ 

আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনিই চিরিঞ্জীব; যাবতীয় সবকিছুর ধারক। তাকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমিনের যা কিছু রয়েছে সবই তার। কে আছে এমন, যে সুপারিশ করবে তার কাছে তার অনুমতি ছাড়া ? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সবই তিনি জানেন। তার জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেস্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তার সিংহাসন সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেস্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারন করা তার পক্ষে কঠিন নয়। তিনি সরবোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা আল বাকারা-২৫৫)

আয়তুল কুরসি ও এর ফযীলতঃ

www.bahadurhossen24.com
aytul kursi
জান্নাতের দরজাঃ আবূ উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি ফরিয নামাজ শেষে আয়তুল করসি পড়ে , তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোন কিছু বাধা হবে না। (সহীহ আল জামে-৬৪৬৪) হযরত আলী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শোনেছি, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাজের পর আয়তুল কুরসি নিয়মিত পড়ে তার জান্নাত প্রবেশ কেবল মৃত্যুই অন্তরায় হয়ে আছে। যে ব্যক্তি এ আয়াতটি বিছানায় শয়নের সময় পড়বে আল্লাহ তার ঘরে, প্রতিবেশীর ঘরে এবং আশপাশের সব ঘরে শান্তি বজায় রাখবেন।সুনানে বাইহাকী-২ঃ৩)

মর্যাদাসম্পন্ন মহান আয়াতঃ

 আদু জর জুনদুব ইবনে জানাদাহ (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আপনার প্রতি সবচেয়ে মরযাদাসম্পন্ন কন আয়াতটি নাযীল হিয়েছে ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, "আয়তুল কুরসি"। (নাসায়ি) উবাই বিন কা'ব থেকে বর্ণিতঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উবাই বিন কা'বকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, "তোমার কাছে কোরআন মাজীদের কোন আয়াতটি সর্ব মহান ? তিনি বলেছিলেন, (আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম) তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাত দ্বারা তার বক্ষে আঘাত করে বলেনঃ আবুল মুনযির ! এই ইল্মের কারনে তোমাকে ধন্যবাদ"। (সহীহ মুসলিম-১৭৫৫)

শয়তান এর প্রভাব থেকে বাঁচার উপায়ঃ

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ সূরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ট আয়াত রয়েছে, যে ঘরে আয়তুল কুরসি পাঠ করা হবে সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে। (মুসতাদরাকে হাকিম -২১০৩)

ফেরেস্তা নিযুক্তকারী আয়াতঃ

আবু হুরায়রা (রাঃ) একদিন দেখতে পেলেন একজন আগন্তক সদকার মাল চুরি করতেছে, তখন তিনি আগন্তকের হাত ধরে বললেন, আল্লয়াহ্র কসম আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূল  (সাঃ) এর কাছে নিয়ে যাব তখন বলে যে, আমি খুব অভাবী আর তার অনেক প্রয়োজন। তাই দয়া করে আবু হুরায়রা তাকে ছেড়ে দিলেন। পরদিন সকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসার পর তিনি আবু হুরায়রা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, গতকাল তোমার অপরাধি কি করেছে? আবু হুরায়রা (রাঃ) তাকে ক্ষমা করার কথা বললেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অবশ্য সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবার আসবে। পরদিন আবু হুরায়রা (রাঃ) চুরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন আর যখন সে আবারও চুরি করতে আসল তখন তিনি তাকে পাকড়াও করলেন আর বললেন এবার অবশ্যই আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূলের কাছে নিয়ে যাব। এবারও সে চুর বলে যে সে খুব অভাবী আর তার অনেক প্রয়োজন আর সপথ করে যে, আর আসবে না। পরদিন আবারও রাসূল তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি একই জবাব দেন আর তখন তিনি বললেন, আসলেই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবার আসবে। পরদিনও আবার আবু হুরায়রা (রাঃ) চুরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন আর যখন সে চুরি করতে আসল তখন তিনি তাকে পাকড়াও করলেন আর বললেন, এবার অবশ্যই আমি তোমাকে রাসূলের কাছে নিয়ে যাব। তুমি বার বার সপথ করো আর চুরি করতে আস। চুর যখন দেখল এবার সে সত্তিই রাসূল (সাঃ) এর কাছে নিয়ে যাবে তখন অবস্থা বেগতিক দেখে সে বলে, আমাকে মাফ করো। আমি তোমাকে এমন কিছু বলে দিব যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাকে কল্যান দান করবেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) জানতে চাইলে চুর বলে "যখন ঘুমাতে যাবে তখন আয়তুল কুরসি (আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল....) পড়ে ঘুমাবে। তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন পাহাড়াদার নিযুক্ত করবে যে তোমার সাথে থাকবে আর কনো শয়তান সকাল পর্যন্ত তার কাছে আসতে পারবে না। এটা শুনে আবু হুরায়রা (রাঃ) তাকে ছেড়ে দিলেন। পরদিন রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবার অপরাধীর কথা জানতে চায়লে তিনি আগের রাতের কথা বললেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যদিও সে চরম মিথ্যাবাদী কিন্ত সে সত্য বলেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু হুরায়রা (রাঃ) কে বললেন, তুমি কি জান সে কে? আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেন; না। রাসূল (সাঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেন, সে হচ্ছে শয়তান। (সহীহ বুখারী -২৩১১)

যিকিরের আয়াতঃ 

উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তার এক খেজুর রাখার থলি ছিল। সেটায় ক্রমশ তার খেজুর কমতে থাক্ত।মেক রাতে সে পাহারা দেয়। হঠাত যুবকের মত এক জন্তন্দেখা গেলে, তিনি তাকে সালাম দেন। সে সালামের উত্তর দেয়। তিনি বলেন তুমি কি ? জীন না মানুষ ? সে বলে জীন। উবাই (রাঃ) তার হাত দেখতে চান। সে তার হাত দেয়। তার হাত ছিল কুকুরের হাতের মত আর চুল ছিল কুকুরের চুলের মত। তিনি বলেন এটা জীনের সুরত। সে জন্ত বলে, জীন সম্প্রদায়ের মধ্যে আমি সবচাইতে সাহসী। উবাই (রাঃ) বলেন তোমার আসার কারন কি ? সে বলে, আমরা শুনেছি আপনি সাদকা পছন্দ করেন, তাই কিছু সাদকার খাদ্যসামগ্রি নিতে এসেছি। সাহাবি বললেন, তোমাদের থেকে পরিত্রানের উপায় কি ? সে বলে সূরা বাকারার এই আয়াতটি (আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম।) যে ব্যক্তি সন্ধায় এটি পড়বে, সকাল পর্যন্ত আমাদের থেকে পরিত্রান পাবে। আর যে ব্যক্তি সকালে এটি পড়বে, সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের থেকে নিরাপদে থাকবে। সকাল হলে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাসে আসেন এবং ঘটনার কথা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, খবীস সত্য বলেছে। (সহীহুত তারগীব -১/৪১৮)

আয়তুল কুরসির অঙ্গ রয়েছেঃ

উবাই বিন কা'ব (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী কারিম (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহর কসম! যার হাতে আমার প্রাণ আয়তুল কুরসির একটি জিহ্বা ও দু'টি ঠোঁট রয়েছে এটি আরশের পায়ার কাছে আল্লাহর প্রসংশা করতে থাকে। (মুসনাদে আহমদ -২১৬০২)

Monday, May 16, 2016

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্- এর অর্থ, মাহাত্ম্য ও মর্যাদা।

No comments :
আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতু।
بِسمِ اللَّهِ الرَّحمٰنِ الرَّحيمِ
পরম করুনাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি।

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু- এর অর্থ ও মাহাত্ব।

www.bahadurhossen24.comলা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু এ সংহ্মিপ্ত বাক্যটি দ্বীনের ভিত্তি ও বোনিয়াদ। ইসলাম ধর্মে এর রয়েছে বড় মর্যাদা ও মহান তাৎপর্য। এটি ইসলাম ধর্মের পাচটি মৌলিক বোনিয়াদ সমূহের সর্বপ্রথম বোনিয়াদ এবং ঈমানের সর্বোচ্চ শাখা। সাৎকার্য আল্লাহর দরবারে গৃহীত হওয়া না হওয়া এ কালেমার মৌখীক স্বীকৃতি দেওয়া এবং তদনুযায়ী আমল করার উপর নির্ভর করে। এ বাক্যটির সঠিক ও বিশুদ্ধ অর্থ যার দ্বিতীয় কোন ব্যাখ্যার অবকাশ নেই তা হলো, "আল্লাহ্ ব্যতীত সত্যিকারে কোন মা'বুদ বা উপাস্য নেই"। এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন সৃষ্টিকর্তা নেই, অথবা আল্লাহ্ ছাড়া আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের সহ্মম কেউ নেই, বা আল্লাহ্ ব্যতীত কেউ বিদ্যমান নেই। এ বাক্যটির দু'টি অংশ রয়েছে যথাঃ
১। "লা ইলাহা" এটি নেতিবাচক বা অস্বীকৃতিমূলক অংশ। এতে প্রত্যেক বস্তুর উপাস্য বা মা'বুদ হওয়ার যোগ্যতাকে অস্বীকার করা হয়েছে।
২। "ইল্লাল্লাহ্" এটি ইতিবাচক অংশ। যাতে শুধুমাত্র এক ও এককভাবে আল্লাহর জন্যই মা'বুদ হওয়ার উপযোক্ততাকে দৃড়ভাবে স্বীকার করা হয়েছে। অতএব আল্লাহ্‌ ব্যতীত কারো এবাদত করা যাবেনা। কোন প্রকার এবাদত আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো জন্য সম্পাদন করা বৈধ হবে না। যে ব্যক্তি এ কালেমার অর্থ অনুধাবন করে এবং তার অত্যাবশ্যকীয় বিধানগুলো সর্বপ্রকার শির্ক থেকে বিরত থাকে, একত্ববাদের স্বীকৃতি দিয়ে মেনে চলে, মুখে তার স্বীকৃতি দেয়, সাথে সাথে কালেমায় নিহিত বিষয়গুলোর উপর দৃঢ় বিশ্বাস ও প্রত্যয় রেখে তদানুযায়ী আমল করে, সেই প্রকৃত মুসলমান। আর যে অবিচল কোন আস্থা না রেখে তার উপর আমল করার ভান দেখায়, সে মুনাফিক ও কপট। আর যে কালেমার পরিপন্থী  (যথা শির্ক) কাজ করে, সে মুনাফিক ও কাফের যদিও সে তা মুখে উচ্চারন করুক না কেন।

লা-ইলাহা ইল্লল্লাহ্ এর মর্যাদা ও মাহাত্ম্যঃ

এ কালেমার অনেক উচ্চ মর্যাদা ও মাহাত্ম্য এবং বিপুল সফল রয়েছে। নিম্নে কিঞ্চিত পেশ করা হলোঃ
 (১) এ কালেমাটি দোযখের চিরস্থায়ী ও অনন্ত কালের ভয়াবহ শাস্তি থেকে মানুষকে নিষ্কৃতি দেয়, যদিও (গুনাহের কারনে সে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য) তাতে নিহ্মিপ্ত হয়। বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসটি তারই প্রমান। রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অর্থাৎ, "যে ব্যক্তি `লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্' এর স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তার অন্তরে যব পরিমান কল্যান আছে তাকে দোযখ থেকে বের করে আনা হবে। আর যে ব্যক্তি 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লা' এর উচ্চারন করেছে এবং তার অন্তরে গম পরিমান কল্যান আছে, তাকে দোযখ থেকে বের করে আনা হবে। আর সে ব্যক্তিকেও বের করে আনা হবে, যে এ বাক্যটি পড়েছে এবং তার অন্তরে অনু পরিমান কল্যান আছে"। (বুখারী)
(২) এ কালেমাটির জন্য মানুষ ও জ্বীন জাতিদ্বয়কে সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
وَما خَلَقتُ الجِنَّ وَالإِنسَ إِلّا لِيَعبُدونِ
"আমি জ্বীন ও মানুষকে অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করি নাই কেবল এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার এবাদত করবে"। (সূরা আয-যারীয়াত ৫৬)
(৩) এ কালেমাটি প্রচারের জন্যই যুগে যুগে অনেক  রাসূল (সাঃ) প্রেরিত হয়েছেন, অবতির্ন হয়েছে আসমানি কিতাব সমূহ। আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা বলেনঃ

Wednesday, May 11, 2016

ফরয নামাযের পর দোয়া ও যিকির।

No comments :
আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতু।
পরম করুনাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি।
আমরা মুসলিম ভাইয়েরা অনেকেই জানিনা ফরয নামাজ শেষে কি দোয়া দরুদ পড়তে হয় তাই আমার এ লেখা।
সালাম ফিরানোর পর যে দোয়া পড়তে হয় নিম্ন তা উল্লেখ করা হলঃ
ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
দোয়া নং ১
أَسْتَغْفِرُ الله
উচ্চারনঃ আস্তাগফিরুল্লা
দোয়া নং ২
۞اللهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَ مِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يَاذَا الْجَلاَلِ وَ الإِكْرَام
উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারাকতা ইয়া যালযালালি ওয়াল ইকরাম।
www.bahadurhossen24.com

দোয়া নং ৩
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
উচ্চারনঃ লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারিকা লাহু লাহুল মূলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়ীন কাদির।
দোয়া নং ৪
لا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَلَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ
উচ্চারনঃ লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারিকা লাহু লাহুল মূলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লা শাইয়ীন কাদির লা হাওলা কুয়াতা ইল্লাবিল্লাহি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়ালা নাফবুদু ইল্লা ইয়্য়াহু লাহুন্নাফহাতু ওয়ালাহুল ফাদলু ওয়ালা হুশ্শানাউল হাসানু লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু মুখলেছিনা লাহুদ্দাইনা ওয়ালাও কারিহাল কাফেরুন।
দোয়া নং ৫
اللهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ   أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَىْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
উচ্চারনঃ আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লাহুয়াল হায়্যুল কায়্যুম লা-তা খুজুহু শিনাতু ওয়ালা নাউম লাহু-মা ফিছ্ছামাওয়াতি ওয়ামা-ফিল আরদ্বি মান-জাল্লাজি ইয়াশফাও ইনদ্বাহু ইল্লা বি-ইজনিহি ইয়া-লামু মা-বাইনা আইদ্বিহিম ওয়ামা খালফাহুম ওয়ালা ইয়্যুহিতুনা বিশাইয়িমমীন ইলমিহি ইল্লা বিমাশা-আ অছিয়্যা কুরছিয়্যু হুছ্ছামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা ওয়ালা ইয়া-উদুহু হিফজুহুমা ওয়া-হুয়াল আলিয়্যুল আযীম।
দোয়া নং ৬
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ۞ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ ۞ وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ ۞ وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ۞ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ
উচ্চারণঃ কূল আ-উজুবি রাব্বিল ফালাক। মিন শাররি মা-খালাক। ওয়া-মিন শাররি গাসিকীন ইজা ওয়কাব। ওয়া-মিন শাররিন্নাফ্ফাসাতি ফিলউকাদ। ওয়া মিন শাররি হাসিদীন ইজা হাসাদ।
দোয়া নং ৭
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ ۞ مَلِكِ النَّاسِ ۞ إِلَهِ النَّاسِ ۞ مِنْ شَرِّ الْخَنَّاسِ ۞ الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ۞مِنَ الجِنَّةِ وَالنّاسِ
উচ্চারণঃ কূল আ-উজুবি রাব্বিন্নাস। মালিকিন্নাস। ইলাহিন্নাস। মিন শাররিল ওয়াস-ইসু ফি-ছু দুরিন্নাস। মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্নাস।
দোয়া নং ৮
۞اللّهُـمَّ إِنِّـي أَسْأَلُـكَ عِلْمـاً نافِعـاً وَرِزْقـاً طَيِّـباً ، وَعَمَـلاً مُتَقَـبَّلاً
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আস-আলুকা ইলমান নাফিয়ান ওয়া রিযকান তায়্যিবান, ওয়া আমালান মুতাকাব্বাল।
দোয়া নং ৯
۞اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আ-ইন্নি আ-লা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা।
দোয়া নং ১০
سُبْحَانَ الله  (তেত্রিশ বার)
উচ্চারণঃ সুবহানআল্লাহ্
الْحَمِدُ للهِ  (তেত্রিশ বার)
উচ্চারণঃ আলহামদুলিল্লাহ্
اللهَ اَكْبَر  (তেত্রিশ বার)
উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার
۞لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ  (এক বার) ۞قَدِيرٌ
উচ্চারনঃ লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারিকা লাহু লাহুল মূলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়ীন কাদির।

Sunday, May 8, 2016

জান্নাতে নারীরা কেমন থাকবে?

No comments :

জান্নাত জাহান্নাম।

ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করতে এখানে ক্লিক করুন।

 আল্লাহর ওপর ভরসা করে শুরু করা যাকঃ
কোরআন ও হাদিসের আলোকে জান্নাতে নারীরা কেমন থাকবে?
ফায়দা¬ ১
www.bahadurhossen24.comআমাদের উচিত হবে নারীরা জান্নাতে তাদের জন্য অপেক্ষমান নেকী ও নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তাদেরকে হতোদ্যম না করা। কারণ, মানব প্রকৃতি তার আগামী ও ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে পছন্দ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সাহাবা রাদিআল্লাহু আনহুমের জান্নাত ও জান্নাতের নেয়ামত সংক্রান্ত এ ধরনের প্রশ্ন শুনে অপছন্দ করেন নি। যেমন তাঁরা জিজ্ঞেস করেছেন। যেমন আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
‘আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, জান্নাত সম্পর্কে আমাদের ধারণা দিন। কী দিয়ে জান্নাত নির্মিত হয়েছে? তিনি বললেন, ‘তার দেয়ালের একটি করে ইট সোনা দিয়ে এবং আরেকটি ইট রুপা দিয়ে নির্মিত। তার সিমেন্ট হলো উন্নত মৃগনাভী, তার প্লাস্টার ইয়াকূত ও মোতি এবং তার মাটি ওয়ারছ (নামের সুগন্ধি) ও জাফরান। যারা এতে প্রবেশ করবে তারা অমর হবে; কখনো মারা যাবে না। সুখী হবে; অসুখী হবে না। তাদের যৌবন শীর্ণ হবে না। আর তাদের কাপড় ছিন্নভিন্ন করা হবে না।’ [মুসনাদ আহমদ : ৯৭৪৪; মুসনাদ দারেমী : ২৮৬৩]
আরেকবার তাঁরা জিজ্ঞেস করেন, যেমনটি বর্ণিত হয়েছে আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞেস করা হলো, জান্নাতে আমরা কি আমাদের স্ত্রীদের কাছে পৌঁছতে পারব? তিনি বললেন, ‘কোনো কোনো ব্যক্তি (জান্নাতে) দিনে একশত জন কুমারীর কাছে পৌঁছবে।’ [তাবরানী, আল-মু‘জামুল কাবীর : ১৩০৫]
ফায়দা- ২
মানব মন বলতেই- চাই তা নর বা নারী হোক- জান্নাত ও জান্নাতের মনোরম নেয়ামতসমূহের আলোচনা শুনতেই তা আগ্রহী ও প্রফুল্ল হয়ে ওঠে। নেক আমল বাদ দিয়ে কেবল স্বপ্ন বিলাস না হলে তা উত্তম বৈ কি। কারণ আল্লাহ তা‘আলা মু‘মিনদের উদ্দেশে বলেন,
۞وَتِلكَ الجَنَّةُ الَّتى أورِثتُموها بِما كُنتُم تَعمَلونَ
‘আর এটিই জান্নাত, নিজেদের আমলের ফলস্বরূপ তোমাদেরকে এর অধিকারী করা হয়েছে।’ [সূরা আয্-যুখরুফ, আয়াত : ৭২]
তাই দেখা যায় সাহাবায়ে কিরাম রাদিআল্লাহু আনহুম জান্নাতের বিবরণ শুনে নিজেদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। আর আমলের মাধ্যমে সেগুলোকে কার্যে পরিণত করেছেন।
ফায়দা¬ ৩
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
 ۞ وَسارِعوا إِلىٰ مَغفِرَةٍ مِن رَبِّكُم وَجَنَّةٍ عَرضُهَا السَّمٰوٰتُ وَالأَرضُ أُعِدَّت لِلمُتَّقينَ
‘আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।’ {সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৩}
এ আয়াত থেকে অনুধাবিত হয় যে জান্নাতকে প্রস্তুত করা হয়েছে মুক্তাকীদের জন্য। জান্নাত ও জান্নাতের নেয়ামতসমূহ নারী বাদে কেবল পুরুষদের জন্য নয়। বরং তা উভয় শ্রেণীর মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এ বিষয়টিকে দ্ব্যর্থহীন করে আল্লাহ সুবহানুহু ওয়া তা‘আলা বলেন,
وَمَن يَعمَل مِنَ الصّٰلِحٰتِ مِن ذَكَرٍ أَو أُنثىٰ وَهُوَ مُؤمِنٌ فَأُولٰئِكَ  يَدخُلونَ الجَنَّةَ وَلا يُظلَمونَ نَقيرًا
‘আর পুরুষ কিংবা নারীর মধ্য থেকে যে নেককাজ করবে এমতাবস্থায় যে, সে মুমিন, তাহলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি খেজুরবীচির আবরণ পরিমাণ যুলমও করা হবে না।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ১২৪}
ফায়দা¬ ৪
নারীদের কর্তব্য হবে জান্নাতে প্রবেশের বিস্তারিত তথ্যানুসন্ধান আর এ সংক্রান্ত অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নের তুবড়ি না ছুটানো। যেমন : জান্নাতে তাদের কী করা হবে, তারা কোথায় থাকবে ইত্যাকার প্রশ্ন। ভাবখানা এমন যে সে যেন কোনো জীবননাশা মরুতে পা রাখতে যাচ্ছে !
তার জন্য এ কথা জানাই যথেষ্ট হওয়া উচিত যে শুধু জান্নাতে প্রবেশের বদৌলতেই তার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাবৎ দুঃখ ও গ্লানী দূর হয়ে যাবে। সেসব রূপান্তরিত হবে অপার্থিব সৌভাগ্য এবং অনন্ত শান্তিতে। জান্নাত সম্পর্কে আল্লাহর এ বিবরণই তার জন্য যথেষ্ট হতে পারে, যেখানে তিনি ইরশাদ করেন :
لا يَمَسُّهُم فيها نَصَبٌ وَما هُم مِنها بِمُخرَجينَ
‘সেখানে তাদেরকে ক্লান্তি স্পর্শ করবে না এবং তারা সেখান থেকে বহিষ্কৃতও হবে না।’ {সূরা আল-হিজর, আয়াত : ৪৮}
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
‘স্বর্ণখচিত থালা ও পানপাত্র নিয়ে তাদেরকে প্রদক্ষিণ করা হবে, সেখানে মন যা চায় আর যাতে চোখ তৃপ্ত হয় তা-ই থাকবে এবং সেখানে তোমরা হবে স্থায়ী।’ {সূরা আয্-যুখরুফ, আয়াত : ৭১}
এসবের আগে তার জন্য যথেষ্ট হতে পারে জান্নাতের অধিবাসীদের সম্পর্কে আল্লাহর এই বাণী, যেখানে তিনি বলেন :
رَضِىَ اللَّهُ عَنهُم وَرَضوا عَنهُ ۚ ذٰلِكَ الفَوزُ العَظيمُ
‘আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। এটা মহাসাফল্য।’ {সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ১১৯}
ফায়দা¬ ৫
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেখানেই জান্নাতের নেয়ামতরাজির আলোচনা করেন, যার মধ্যে রয়েছে অসংখ্য পদের সুখাদ্য, অনির্বচনীয় সুন্দর দৃশ্যাবলি, সুরম্য সব আবাস এবং অনিন্দ্য বস্ত্রসামগ্রী, তার সবই নারী-পুরুষ উভয় শ্রেণীর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। পূর্বে উল্লেখিত নিয়ামতসম্ভার সবাই ভোগ করবে জান্নাতে।
বাকি থাকে কেবল এই প্রশ্ন, আল্লাহ তো পুরুষদেরকে ডাগর চোখ বিশিষ্ট হূর ও অপরূপা নারীদের কথা বলে জান্নাতের প্রতি আগ্রহী ও অনুপ্রাণিত করেছেন। অথচ নারীদের প্রলুব্ধকর এমন কিছু বলেন নি। নারীরা সাধারণ এরই কারণ জানতে চান।এর জবাবে আমি বলি:
لا يُسـَٔلُ عَمّا يَفعَلُ وَهُم يُسـَٔلونَ
প্রথমত আল্লাহর এই বাণীটি আমাদের মাথায় রাখতে হবে: ‘তিনি যা করেন সে ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করা যাবে না; বরং তাদেরকেই প্রশ্ন করা হবে।’ {সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত : ২৩} তবে শরী‘আতের সুনির্দিষ্ট উদ্ধৃতি এবং ইসলামের মূলনীতির আলোকে এর হিকমত ও তাৎপর্য অনুধাবনের মানসিকতায় কোনো দোষ নেই। এটা সুবিদিত যে নারী প্রকৃতি বলতেই লজ্জার ভূষণে শোভিত। এ জন্যই আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সে নেয়ামতের বর্ণনা দিয়ে জান্নাতের প্রতি লালায়িত করেন নি যা তাদেরকে লজ্জায় আরক্ত করে।
 এটাও সুবিদিত যে নরের প্রতি নারীর আকর্ষণ ঠিক তেমন নয় যেমন নারীর প্রতি নরের আকর্ষণ। তাই দেখা যায় আল্লাহ জান্নাতে নারীর কথা বলে পুরুষদের আগ্রহী করেছেন যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নোক্ত বাণীকেও সপ্রমাণ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘আমার পরে আমি পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে ক্ষতিকর আর কিছু রেখে যাই নি।’ [বুখারী : ৫০৯৬; মুসলিম : ৭১২২]
পক্ষান্তরে পুরুষের প্রতি আকর্ষণের চেয়েও নারীদের আকর্ষণ বেশি অলংকার ও পোশাকের সৌন্দর্যের প্রতি। কারণ এটি তাদের সহজাত প্রকৃতি। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
أَوَمَن يُنَشَّؤُا۟ فِى الحِليَةِ وَهُوَ فِى الخِصامِ غَيرُ مُبينٍ
‘আর যে অলংকারে লালিত পালিত হয়……।’ {সূরা আয্-যুখরুফ, আয়াত : ১৮} শায়খ উসাইমীন [রহ] বলেন, আল্লাহ তা‘আলা স্ত্রীদের কথা উল্লেখ করেছেন স্বামীদের জন্য। কারণ, স্বামীই হলেন স্ত্রীর কামনাকারী এবং তার প্রতি মোহিত। এ জন্যই জান্নাতে পুরুষদের জন্য স্ত্রীদের কথা বলা হয়েছে আর নারীদের জন্য স্বামীদের ব্যাপারে নিরবতা অবলম্বন করা হয়েছে। কিন্তু এর দাবী এই নয় যে তাদের স্বামী থাকবে না। বরং তাদের জন্যও আদম সন্তানদের মধ্য থেকে স্বামী থাকবে।
ফায়দা¬ ৬
দুনিয়ায় নারীদের অবস্থা নিম্নোক্ত প্রকারগুলোর বাইরে নয় :
১. হয়তো সে বিয়ের আগেই মারা যাবে।
২. কিংবা সে মারা যাবে তালাকের পর অন্য কারো সাথে বিয়ের আগে।
৩. কিংবা সে বিবাহিতা কিন্তু –আল্লাহ রক্ষা করুন- তার স্বামী তার সঙ্গে জান্নাতে যাবে না।
৪. কিংবা সে তার বিয়ের পরে মারা যায়।
৫. কিংবা তার স্বামী মারা গেল আর সে আমৃত্যু বিয়ে ছাড়াই রইল।
৬. কিংবা তার স্বামী মারা গেল। তারপর সে অন্য কাউকে বিয়ে করল।
দুনিয়াতে নারীদের এ কয়টি ধরনই হতে পারে। আর এসবের প্রত্যেকটির জন্যই জান্নাতে স্বতন্ত্র অবস্থা রয়েছে :
(১) যে নারী বিয়ের আগে মারা গেছেন আল্লাহ তাকে জান্নাতে দুনিয়ার কোনো পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দেবেন। কারণ আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
‘কিয়ামতের দিন যে দলটি সর্বপ্রথম জন্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের চেহারা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জ্বল; আর তৎপরবর্তী দলের চেহারা হবে আসমানে মুক্তার ন্যায় ঝলমলে নক্ষত্র সদৃশ উজ্জ্বল। তাদের প্রত্যেকের থাকবে দু’জন করে স্ত্রী, যাদের গোশতের ওপর দিয়েই তাদের পায়ের গোছার ভেতরস্থ মজ্জা দেখা যাবে। আর জান্নাতে কোনো অবিবাহিত থাকবে না।’ [মুসলিম : ৭৩২৫]
শায়খ উসাইমীন বলেন, যদি ইহকালে মহিলার বিয়ে না হয়ে থাকে তবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে এমন একজনের সঙ্গে বিয়ে দেবেন যা দেখে তার চোখ জুড়িয়ে যাবে। কারণ, জান্নাতের নেয়ামত ও সুখসম্ভার শুধু পুরুষদের জন্য নয়। বরং তা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য বরাদ্দ। আর জান্নাতের নিয়ামতসমূহের একটি এই বিয়ে।
(২) তালাক প্রাপ্ত হয়ে আর বিয়ে না করে মারা যাওয়া মহিলার অবস্থাও হবে অনুরূপ।
(৩) একই অবস্থা ওই নারীর, যার স্বামী জান্নাতে প্রবেশ করেন নি। শায়খ উসাইমীন বলেন, ‘মহিলা যদি জান্নাতবাসী হন আর তিনি বিয়ে না করেন কিংবা তাঁর স্বামী জান্নাতী না হন, সে ক্ষেত্রে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করলে সেখানে অনেক পুরুষ দেখতে পাবেন যারা বিয়ে করেন নি।’ অর্থাৎ তাদের কেউ তাকে বিয়ে করবেন।
(৪) আর যে নারী বিয়ের পর মারা গেছেন জান্নাতে তিনি সেই স্বামীরই হবেন যার কাছ থেকে ইহলোক ত্যাগ করেছেন।
(৫) যে নারীর স্বামী মারা যাবে আর তিনি পরবর্তীতে আমৃত্যু বিয়ে না করবেন, জান্নাতে তিনি এ স্বামীর সঙ্গেই থাকবেন।
(৬) যে মহিলার স্বামী মারা যায় আর তিনি তার পরে অন্য কাউকে বিয়ে করেন, তাহলে তিনি যত বিয়েই করুন না কেন জান্নাতে সর্বশেষ স্বামীর সঙ্গী হবেন। কারণ, আবূ দারদা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘মহিলা তার সর্বশেষ স্বামীর জন্যই থাকবে।’ [জামে‘ ছাগীর : ৬৬৯১; আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীস আস-সাহীহা : ৩/২৭৫]
হুযায়ফা রাদিআল্লাহু আনহু তাঁর স্ত্রীর উদ্দেশে বলেন,
‘যদি তোমাকে এ বিষয় খুশী করে যে তুমি জান্নাতে আমার স্ত্রী হিসেবে থাকবে তবে আমার পর আর বিয়ে করো না। কেননা জান্নাতে নারী তার সর্বশেষ দুনিয়ার স্বামীর সঙ্গে থাকবেন। এ জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীদের জন্য অন্য কারো সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে জড়ানো হারাম করা হয়েছে। কেননা তাঁরা জান্নাতে তাঁরই স্ত্রী হিসেবে থাকবেন।’ [বাইহাকী, আস-সুনান আল-কুবরা : ১৩৮০৩]
মাস’আলা : কেউ কেউ জিজ্ঞেস করেন, জানাযার দু‘আয় এসেছে আমরা যেমনটি বলে থাকি,
‘আর তার স্বামীর পরিবর্তে তাকে আরও উত্তম স্বামী দান করুন’। এর আলোকে তিনি যদি বিবাহিতা হন তাহলে আমরা কিভাবে তার জন্য এ দু‘আ করি? কারণ আমরা জানি, দুনিয়াতে তার স্বামী যিনি হবেন জান্নাতে তিনিই তার স্বামী থাকবেন? আর যদি তার বিয়ে না হয় তবে তার স্বামী কোথায়?
শায়খ ইবন উসাইমীনের ভাষায় এর জবাব :
যদি মহিলা বিবাহিতা না হন তবে দু‘আর উদ্দেশ্য হবে ‘তার জন্য বরাদ্দ পুরুষ’। আর যদি বিবাহিতা হন তবে তার জন্য আরও উত্তম স্বামীর উদ্দেশ্য হবে ‘দুনিয়ার স্বামীর চেয়ে গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্যে উত্তম স্বামী’। কারণ, বদল দুই ধরনের।এক হলো সত্তার বদল। যেমন কেউ ছাগলের বিনিময়ে উট কিনল। দুই হলো গুণের বদল। যেমন আপনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যক্তির কুফরকে ঈমানে বদলে দিয়েছেন। এখানে কিন্তু ব্যক্তি একইজন। পরিবর্তন কেবল তার বৈশিষ্ট্যে। আল্লাহ তা‘আলার বাণীতেও আমরা দৃষ্টান্ত দেখতে পাই। ইরশাদ হচ্ছেঃ
يَومَ تُبَدَّلُ الأَرضُ غَيرَ الأَرضِ وَالسَّمٰوٰتُ ۖ وَبَرَزوا لِلَّهِ الوٰحِدِ القَهّارِ
‘যেদিন এ যমীন ভিন্ন যমীনে রূপান্তরিত হবে এবং আসমানসমূহও। আর তারা পরাক্রমশালী এক আল্লাহর সামনে হাযির হবে।’ {সূরা ইবরাহীম, আয়াত : ৪৮}
আয়াতে উল্লেখিত যমীন বা ভূমি কিন্তু একই থাকবে। তবে তা কেবল প্রলম্বিত হয়ে যাবে। তেমনি আসমানও থাকবে সেটিই কিন্তু তা বিদীর্ণ হয়ে যাবে।
ফায়দা¬ ৭
আব্দুল্লাহ ইবন ওমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার ঈদের সালাতে খুতবায় নারীদের উদ্দেশে বলেন,
‘হে নারী সম্প্রদায়, তোমরা বেশি বেশি সদকা করো। কেননা, আমি জাহান্নামের অধিবাসী বেশি তোমাদের দেখেছি।’ মহিলারা বললেন, কেন হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, ‘তোমরা অধিকহারে অভিশাপ দাও এবং স্বামীর অকৃজ্ঞতা দেখাও। বুদ্ধিমান পুরুষকে নির্বুদ্ধি বানাতে অল্প বুদ্ধি ও খাটো দীনদারির আর কাউকে তোমাদের চেয়ে অধিক পটু দেখিনি।’ তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের জ্ঞান ও দীনদারির ঘাটতি কী? তিনি বললেন, ‘মহিলাদের সাক্ষী কি পুরুষদের সাক্ষীর অর্ধেক নয়?’ তাঁরা বললেন, জী, হ্যাঁ। তিনি বললেন, ‘এটিই তাদের জ্ঞানের অল্পতা। যখন তাদের মাসিক শুরু হয় তখন কি তারা সালাত ও সাওম (রোজা) বাদ দেয় না?’ তাঁরা বললেন, জী, হ্যাঁ। তিনি বললেন, ‘এটিই তাদের দীনদারিতে স্বল্পতা।’ [বুখারী : ৩০৪]
আরেক হাদীসে বলা হয়েছে, ইমরান ইবন হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘জান্নাতের সবচেয়ে কম অধিবাসী হবে নারী।’ [মুসলিম : ৭১১৮; মুসনাদ আহমদ : ১৯৮৫০]
অন্যদিকে আরেক সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে জান্নাতে দুনিয়াবাসীর স্ত্রী হবে তার দুনিয়ার স্ত্রী থেকে দু’জন।
যেমন ইমাম মুসলিম রহিমাহুল্লাহ বলেন, আমার কাছে আমর নাকেদ ও ইয়াকূব ইবন ইবরাহীম দাওরাকী ইবন উলাইয়া থেকে বর্ণনা করেন, আর শব্দগুলো ইয়াকূবের। উভয়ে বলেন, আমাদের কাছে ইসমাঈল ইবন উলাইয়া বর্ণনা করেন,
আমাদেরকে আইয়ূব মুহাম্মদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, জান্নাতে পুরুষ না নারীর সংখ্যা বেশি হবে তা নিয়ে তারা পরস্পর গর্ব বা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তখন আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, আবুল কাসেম (রাসূলুল্লাহ) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেন নি, ‘কিয়ামতের দিন যে দলটি সর্বপ্রথম জন্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের চেহারা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জ্বল; আর তৎপরবর্তী দলের চেহারা হবে আসমানে মুক্তার ন্যায় ঝলমলে নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বল। তাদের প্রত্যেকের থাকবে দু’জন করে স্ত্রী যাদের গোশতের ওপর দিয়েই তাদের পায়ের গোছার ভেতরস্থ মজ্জা দেখা যাবে। আর জান্নাতে কোনো অবিবাহিত থাকবে না।’ [মুসলিম : ৭৩২৫]
ইমাম মুসলিম রহ. আরও বলেন, আমার কাছে ইবন আবী উমর বর্ণনা করেন, তাঁর কাছে সুফইয়ান আর সুফইয়ান ইবন সীরীন থেকে বর্ণনা করেন, পুরুষ ও নারীদের মধ্যে কারা বেশি জান্নাতী হবে এ নিয়ে নারী ও পুরুষদের মধ্যে তর্ক শুরু হলো। তারা আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহুর কাছে গিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলেন। তিনি তাঁদের উদ্দেশে বললেন, আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,..। অতপর তিনি ইবন উয়াইনা বর্ণিত (পূর্বোক্ত) বর্ণনাটি উদ্ধৃত করেন।
এ কারণে আলিমগণ এই হাদীসগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানে নানা মত ব্যক্ত করেছেন। অর্থাৎ নারীরা কি অধিকাংশে জান্নাতে নাকি জাহান্নামে যাবে? জান্নাতে নারীর সংখ্যা বেশি হবে না জাহান্নামে?
কোনো কোনো আলিম বলেছেন, নারীরা অধিকাংশ জান্নাতবাসী হবে। আবার জাহান্নামের অধিবাসীর অধিকাংশও হবে নারী। কেননা কাযী ‘ইয়ায রহ. বলেন, আদম সন্তানের মধ্যে অধিকাংশই নারী।
অনেকে বলেছেন,পূর্বোক্ত হাদীসগুলোর ভিত্তিতে বুঝা যায়, জাহান্নামের অধিবাসীদের সিংহভাগহই হবেন নারী। তেমনি ‘ডাগর চোখবিশিষ্ট হূর’দের যোগ করলে জান্নাতের অধিকাংশ অধিবাসীও হবেন নারী।
অন্য আরেকদল আলিম বলেছেন, হ্যাঁ শুরুতে নারীরাই হবেন জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ। পরবর্তীতে মুসলিম নারীদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর জান্নাতে তারাই হবেন সংখ্যাগুরু।
‘হে নারী সম্প্রদায়, তোমরা বেশি বেশি সদকা করো। কেননা, আমি তোমাদের বেশি জাহান্নামের অধিবাসী দেখেছি।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ বাণীর ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন,
‘হতে পারে জাহান্নামে নারীদের সংখ্যা বেশি হবার বিষয়টি তারা জান্নাতে প্রবেশের আগের কথা। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলনেওয়ালা সবাই সুপারিশ লাভ ও আল্লাহর রহমত প্রাপ্তির পর জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করলে জান্নাতে নারীর সংখ্যাই হবে বেশি।’
সারকথা, নারীদের প্রত্যাশা ও আত্মবিশ্বাস রাখা উচিত যে তারা জাহান্নামের অধিবাসী হবেন না।
ফায়দা¬ ৮
নারীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবেন, আল্লাহ তাঁদের যৌবন ফিরিয়ে দেবেন। আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
একবার এক আনছারী বৃদ্ধা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহর কাছে দু‘আ করেন তিনি যেন আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘জান্নাতে তো কোনো বৃদ্ধ মানুষ প্রবেশ করবে না।’ এ কথা শুনে বৃদ্ধা বড় কষ্ট পেলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ যখন তাদের (বৃদ্ধদের) জান্নাতে দাখিল করাবেন, তিনি তাদের কুমারীতে রূপান্তরিত করে দেবেন।’ [তাবরানী, আল-মু‘জামুল ওয়াছিত : ৫৫৪৫]
ফায়দা- ৯
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, জান্নাতে প্রত্যেক অধিবাসীর জন্য অন্যের স্ত্রীদের কাছে ঘেঁষাও নিষিদ্ধ থাকবে।
শেষ কথা হলো, হে নারী সম্প্রদায়, এ জান্নাতকে আপনাদের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে যেমন একে সুসজ্জিত করা হয়েছে পুরুষদের জন্য। আল্লাহ বলেনঃ
فى مَقعَدِ صِدقٍ عِندَ مَليكٍ مُقتَدِرٍ
‘নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাধারার মধ্যে। যথাযোগ্য আসনে, সর্বশক্তিমান মহাঅধিপতির নিকটে।’ {সূরা আল-কামার, আয়াত : ৫৫}
অতএব হেলায় সুযোগ হারাবেন না। কারণ, এ নশ্বর জীবন আর কয় দিনের? এটা তো দেখতে দেখতেই বয়ে যাবে। আর এরপর অবশিষ্ট থাকবে কেবল অনন্ত জীবন। সুতরাং জান্নাতের চিরস্থায়ী বাসিন্দা হবার চেষ্টা করুন। আর জেনে রাখুন, অতিরিক্ত কল্পনা ও প্রত্যাশা নয়; জান্নাতের মোহরানা হলো ঈমান ও নেক আমল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীটি সর্বদা মনে রাখবেন। তিনি বলেন,
‘যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমযানের সিয়াম পালন করে, আপন সতীত্ব রক্ষা করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, তাকে বলা হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে জান্নাতে প্রবেশ কর।’ [মুসনাদ আহমাদ : ১৬৬১]
আপনাদেরকে সকল বিশৃঙ্খলাকারী ও বিনাশকারীদের আহ্বান সম্পর্কে পুরোপুরি সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। যারা চায় আপনাদের ক্ষতি করতে। আপনাদের অশ্লীল বানাতে। যাদের লক্ষ্য জান্নাতের নিয়ামত লাভে ধন্য হওয়া থেকে আপনাদের বিচ্যুত করা। এসব তথাকথিত স্বাধীন নারী ও পুরুষ, লেখক-লেখিকা এবং টিভি চ্যানেলের লোকদের চাকচিক্য ও শ্লোগানে প্রতারিত হবেন না। কারণ তারা হলো আল্লাহ যেমন বলেনঃ
‘তারা কামনা করে, যদি তোমরা কুফরী করতে যেভাবে তারা কুফরী করেছে। অতঃপর তোমরা সমান হয়ে যেতে।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৮৯}
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন মুসলিম নারীদেরকে জান্নাতুন নাঈম দানে কামিয়াব করুন। আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াতের পথের পথিক ও পথিকৃত বানিয়ে দেন এবং তাদের কাছ থেকে নারীর শত্রু ও ধ্বংসকারী নারী ও পুরুষ শয়তানকে দূরে সরিয়ে দেন। সবশেষে আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর ওপর শান্তি বর্ষণ করুন। আমীন।
★★★★★★★★★★★★★★

Sunday, May 1, 2016

সালাত/নামাজ প্রতিষ্ঠা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ?

No comments :

সালাত প্রতিষ্ঠা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ?

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা:) এর উপর বিশ্বাস স্হাপন ও তাওহীদ সাক্ষ্য দেওয়ার পর যে বিষয়টি সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ তা হল সালাত (নামাজ) কায়েম করা। অর্থাৎ নিজে সালাত আদায় করা এবং অধিনস্ত সবাইকে সালাতের দিকে ডাকা ও সালাত প্রতিষ্ঠা করা ।

  ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করতে এখানে ক্লিক করুন।

আর যারা এই সালাতকে অবহেলা করে ছেড়ে দিবে তারা কুফরি করলো। আর কুফরি ইসলাম থেকে বের করে দেয় । অর্থাৎ নিজেকে মুসলিম দাবি করতে হলে সালাত অবশ্যই পড়তে হবে।
আর কিয়ামত দিবসে যে বিষয়টার হিসাব সর্ব প্রথম নেওয়া হবে তা হল ‘সালাত’। আর যার সালাত ঠিক হবে তার অন্যন্য বিষয়গুলোও ঠিক হবে বলে আশা করা যায়।
এছাড়া যারা সালাত আদায় করে তাঁরা অশ্লীল এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকে। তাই সালাত আদায় না করে নেক আমল করা অসম্ভব।
আবার এই সালাতকে মহান আল্লাহ সুবাহানওয়া তাআ’লা তাঁর ও বান্দার মাঝে ভাগ করে নিয়েছেন। তাই একজন মুসলিম সালাতের মাধ্যমে আল্লাহকে যতটুকু কাছে পায়, অন্য কোন ইবাদতের মাধ্যমে তা সম্ভব নয়।
তাই নিজেকে মুসলিম পরিচয় দিতে অবশ্যই রাসূল (সা:) এর পদ্ধতিতে সালাত আদায় করতে হবে। আর যারা সালাত কে ছেড়ে দিয়ে একজন মুসলিম দাবি করে তা তো যাদুকর এর ধোঁকার চেয়ে আরো বড় অবাস্তব।মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَاستَعينوا بِالصَّبرِ وَالصَّلوٰةِ ۚ وَإِنَّها لَكَبيرَةٌ إِلّا عَلَى الخٰشِعينَ
“ধৈর্যের সাথে সাহায্য প্রার্থনা কর নামজের মাধ্যমে অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন । কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব ।” (বাক্বারাহঃ ৪৫)
وَأمُر أَهلَكَ بِالصَّلوٰةِ وَاصطَبِر عَلَيها ۖ لا نَسـَٔلُكَ رِزقًا ۖ نَحنُ نَرزُقُكَ ۗ وَالعٰقِبَةُ لِلتَّقوىٰ
“তোমার পরিবার পরিজনকে সালাত আদায় করার নির্দেশ দাও এবং তুমি নিজেও তা দৃঢ়তার সাথে পালন করতে থাক।”-(সূরা ত্বা-হা: ১৩২)

حٰفِظوا عَلَى الصَّلَوٰتِ وَالصَّلوٰةِ الوُسطىٰ وَقوموا لِلَّهِ قٰنِتينَ
“সকল নামাযের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে দিনের মধ্যবর্তী নামাযের ব্যাপারে। আর নামাজের সময়ে আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও। -(আল কুরআনঃ সুরা আল বাকারাহঃ ২৩৮)
قُل إِنَّ صَلاتى وَنُسُكى وَمَحياىَ وَمَماتى لِلَّهِ رَبِّ العٰلَمين 
“আপনি বলুনঃ আমার সালাত, আমার কোরবানী, এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য।” -(সূরা আল আন-আমঃ ১৬২)
অর্থাৎ সালাত আদায়ের একমাত্র উদ্দেশ্য আল্লাহর আদেশ পালন ও সন্তুষ্টি অর্জন হতে হবে । যেখানে থাকবেনা কোন লোকদেখানো অহমিকা ও বড়ত্ব । তবে অবশ্যই থাকতে হবে আল্লাহভিতি ।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন-
মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেন- সালাতকে অর্ধেক অর্ধেক করে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে ভাগ করা হয়েছে। আমার বান্দা আমার কাছে যা প্রার্থনা করে তা তার জন্য। বান্দা যখন বলে -“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি বিশ্ব পালনকর্তা” তখন আল্লাহ বলেন – আমার বান্দা আমার যথাযথ প্রশংসা করেছে। অতঃপর সে যখন বলে- “তিনি করুনাময় ও অসীম দয়ালু”, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার গুণকীর্তন করেছে। এরপর সে যখন বলে -“তিনি বিচার দিনের মালিক”, তখন আল্লাহ বলেন -আমার বান্দা আমার মর্যাদা প্রকাশ করেছে। সে যখন বলে – “আমরা তোমারই এবাদত করি আর তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি”, তখন আল্লাহ বলেন, “এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধাঅর্ধি। আমার বান্দা যা চায় তা তার জন্য।” অতঃপর যখন সে বলে- “আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত কর তাদের পথে, যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছ, অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্টদের পথে নয়” তখন আল্লাহ বলেন – “এটা আমার বান্দার অংশ। আর আমার কাছে আমার বান্দা যা চায় তা তার জন্য।”
( আহমদ ও মুসলিম)
রাসূূলুল্লাহ্ (সাঃ) আরো বলেনঃ
বান্দার কাছ থেকে কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে বিষয়ের হিসেব গ্রহণ করা হবে তা হল তার সালাত। সে যদি তা পুরোপুরীভাবে আদায় করে থাকে তবে তা পুরো লেখা হবে। আর সে যদি তা পুরোপুরী আদায় না করে থাকে, তবে মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে বলবেন -“দেখ, আমার বান্দার কোন নফল সালাত আছে কিনা, যার দ্বারা তোমরা তার ফরজ পুরো করে নিতে পার।” অতঃপর যাকাত সম্বন্ধে অনুরূপভাবে হিসেব গ্রহণ করা হবে। তারপর তার সমূদয় আমলের হিসেব অনুরূপভাবে নেয়া হবে।"
( আহমদ ও আবূ দাউদ)
আবু হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল(সাঃ) বলেন, “ফিরিশতাবর্গ তোমাদের প্রত্যকের জন্য দুয়া ক’রে থাকেন, যতক্ষণ সে সেই স্থানে অবস্থান করে, যেখানে সে সালাত আদায় করেছে; যতক্ষণ পর্যন্ত না তার ওযূ নষ্ট হয়েছে; বলেন, ‘হে আল্লাহ! ওকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! ওর প্রতি সদয় হও।” 
(সহীহ বুখারী ৪৪৫; সহীহ মুসলিম ৬৪৯)
আবু হুরায়রা(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি রাসূল(সাঃ) কে বলতে শুনেছেনঃ
“তোমরা কি মনে কর, তোমাদের কারো ঘরের/বাড়ির সামনে দিয়ে যদি একটি নদী প্রবাহিত থাকে এবং প্রতিদিন সে উহাতে পাঁচবার গোসল করে, তবে তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে কি? সাহাবাগণ বললেন, তার শরীরে কোন ময়লাই বাকী থাকতে পারেনা। তিনি বললেন, এরূপ উদাহরণ হল পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের ক্ষেত্রেও। এভাবে সালাতেরর মাধ্যমে আল্লাহ নামাযীর যাবতীয় পাপ মোচন করে দেন”।
 (বুখারী; মুসলিম)
আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “বান্দা যখন সিজদায় থাকে তখন তার রবের সবচাইতে নিকটবর্তী হয়। কাজেই তোমরা (সিজদায় গিয়ে) বেশি করে দু’আ কর।”
(মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন- ১৪৯৮)
“তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত পড়তে দেখো সেভাবে সালাত পড়ো”-(বুখারী -১ম খণ্ড হা:-৬৩১, আল-মাদানী প্রকাশনী)
অর্থাৎ উপরের আলোচনা থেকে বুঝা গেলো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আল্লাহভিতিসহকারে সঠিকভাবে পালন করতে পারা অনেক বড় নিয়ামাহ ।আর যারা সালাত আদায় নিয়ে অবহেলা করে তাদের প্রতি ইসলাম কতটুকু কঠিন তা বুঝতে নিচের হাদীসগুলোর প্রতি লক্ষ্য করিঃ

(১) “নবী(সা:) এর সাহাবীগণ সালাত ব্যতীত কোন আমল পরিত্যাগ করার কারণে কাউকে কাফের মনে করতেন না” 
(২) “মুসলিম বান্দা এবং কাফের-মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত পরিত্যাগ করা।” 
(৩) “তাদের মাঝে এবং আমাদের মাঝে চুক্তি হচ্ছে সালাতের, যে ব্যক্তি সালাত পরিত্যাগ করবে সে কাফের হয়ে যাবে।”
(৪) “যদি তারা তাওবা করে ও সালাত আদায় করে এবং যাকাত প্রদান করে তবে তারাই তোমাদের দ্বিনী ভাই।” 
(৫) “অতঃপর এদের পর এল অপদার্থ লোকেরা। তারা সালাত নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। সুতরাং তারা অচিরেই পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে। কিন্তু তারা ব্যতীত যারা তওবা করেছে এবং ঈমান এনেছে।” 
(৬) “যে ব্যক্তি সালাত পরিত্যাগ করে, ইসলামে তার কোন অংশ নেই।”অর্থাৎ সালাত আদায় না করে মুসলিম দাবি করা হাস্যকর ও লজ্জাজনক । তাই আমাদের মধ্যে যাদের এই ভয়ংকর অভ্যাস রয়েছে তারা যেন শীঘ্রই তাওবা করে সালাত প্রতিষ্ঠা করি । আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা আমাদেরকে সালাতের ব্যাপারে সতর্ক ও নিয়মিত করুক । আমীন।
(১) তিরমিযী, কিতাবুল ঈমান। হাকেম
(২) সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান
(৩) আহমাদ, তিরমিযী, কিতাবুল ঈমান। নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, কিতাবুছ সালাত
(৪) সূরা তওবাঃ ১১
(৫) সূরা মারইয়ামঃ ৫৯-৬০
(৬) ইবনু আবী শায়রা, কিতাবুল ঈমান ।
আমার এই লেখাগুলো আপনাদের ভাল লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। 
ওয়ামা আখেরি দওয়ানা আলহামদুলিল্লাহ্‌হি রাব্বিল আলামিন।