নামাজ বেহেস্তের চাবী

মোঃবাহাদুর হোসেন বাদল

Friday, April 29, 2016

ক্বুরানের পাতা থেকে

No comments :

ক্বুরানের পাতা থেকে

ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করতে এখানে ক্লিক করেন।
“আ'উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম।”
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। 

“তোমাদের উপর যেসমস্ত বিপদ-আপদ আসে,  তা তোমাদের নিজ হাতের কামাই। আর তিনি তোমাদের অনেক গুনাহ মাফ করে দেন।” (সুরা শুরাঃ ৩০)
“দুর্ভোগ ঐ সমস্ত নামাযীদের জন্য, যারা তাদের নামাযের ব্যাপারে উদাসীন।”
(সুরা আল-মাউ’নঃ ৪-৫)
*********************
يٰأَيُّهَا النَّبِىُّ إِنّا أَرسَلنٰكَ شٰهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذيرًا
وَداعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذنِهِ وَسِراجًا مُنيرًا
“হে নবী! আমি আপনাকে (মানবজাতির জন্যে) স্বাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি। এবং আল্লাহর আদেশে তাঁর (আল্লাহর) দিকে আহবানকারী এবং উজ্জ্বল প্রদীপ হিসেবে আপনাকে প্রেরণ করেছি।”
(সুরা আল-আহজাবঃ ৪৫-৪৬)
************************
ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا رَجُلًا فيهِ شُرَكاءُ مُتَشٰكِسونَ وَرَجُلًا سَلَمًا لِرَجُلٍ هَل يَستَوِيانِ مَثَلًا ۚ الحَمدُ لِلَّهِ ۚ بَل أَكثَرُهُم لا يَعلَمونَ
“আল্লাহ একটি উপমা বর্ণনা করছেনঃ তা হচ্ছে যে, একটি লোকের উপর পরস্পর বিরোধী কয়েকজন মালিক রয়েছে, আর অন্য এক ব্যক্তির মালিক মাত্র একজন। তাদের উভয়ের অবস্থা কি সমান হবে? সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।”
সুরা আল-যুমারঃ ২৯।
************************
فَاصدَع بِما تُؤمَرُ وَأَعرِض عَنِ المُشرِكينَ
إِنّا كَفَينٰكَ المُستَهزِءينَ
“সুতরাং (হে নবী!) আপনি প্রকাশ্যে তাদেরকে শুনিয়ে দিন, যা আপনাকে আদেশ করা হয় এবং মুশরিকদের কোন পরওয়া করবেন না। বিদ্রুপকারীদের জন্যে আপনার পক্ষ থেকে আমি একাই যথেষ্ঠ।”
সুরা আল-হিজরঃ ৯৪-৯৫।
***********************
فَإِذا قُضِيَتِ الصَّلوٰةُ فَانتَشِروا فِى الأَرضِ وَابتَغوا مِن فَضلِ اللَّهِ وَاذكُرُوا اللَّهَ كَثيرًا لَعَلَّكُم تُفلِحونَ
“অতঃপর নামায শেষ হলে তোমরা জমীনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করো, আর অধিক পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ কর, যাতে করে তোমরা সফলকাম হও।”
সুরা আল-জুমুয়া’হঃ ১০।
**********************
وَلَقَد خَلَقنَا الإِنسٰنَ وَنَعلَمُ ما تُوَسوِسُ بِهِ نَفسُهُ ۖ وَنَحنُ أَقرَبُ إِلَيهِ مِن حَبلِ الوَريدِ
إِذ يَتَلَقَّى المُتَلَقِّيانِ عَنِ اليَمينِ وَعَنِ الشِّمالِ قَعيدٌ
ما يَلفِظُ مِن قَولٍ إِلّا لَدَيهِ رَقيبٌ عَتيدٌ
وَجاءَت سَكرَةُ المَوتِ بِالحَقِّ ۖ ذٰلِكَ ما كُنتَ مِنهُ تَحيدُ
“আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে খারাপ চিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী। যখন দুই ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমল গ্রহণ করে। সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে। আর মৃত্যুযন্ত্রণা অবশ্যই আসবে। এ থেকেই তো তুমি টাল-বাহানা করতে!”
সুরা আল-ক্বাফঃ ১৬-১৯।
**********************
إِنَّما وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسولُهُ وَالَّذينَ ءامَنُوا الَّذينَ يُقيمونَ الصَّلوٰةَ وَيُؤتونَ الزَّكوٰةَ وَهُم رٰكِعونَ
وَمَن يَتَوَلَّ اللَّهَ وَرَسولَهُ وَالَّذينَ ءامَنوا فَإِنَّ حِزبَ اللَّهِ هُمُ الغٰلِبونَ
তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং মুমিনবৃন্দ, যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং বিনয়ী। আর যারা আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং মুমিমদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, তারাই হচ্ছে হিজবুল্লাহ (আল্লাহর দল), আর তারাই হচ্ছে বিজয়ী।”
সুরা আল-মায়ি’দাহঃ ৫৫-৫৬।
***********************
وَما أَرسَلنا قَبلَكَ إِلّا رِجالًا نوحى إِلَيهِم ۖ فَسـَٔلوا أَهلَ الذِّكرِ إِن كُنتُم لا تَعلَمونَ
 আপনার পূর্বে আমি মানুষই প্রেরণ করেছি, যাদের কাছে আমি ওহী পাঠাতাম। অতএব তোমরা যদি না জান তবে যারা স্মরণ রাখে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর
সুরা আল-আম্বিয়াঃ ৭।
**********************

Friday, April 22, 2016

আহলে কিতাব (ইহুদী খৃষ্টানরা) কি মু'মিন?

No comments :
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করতে এখানে ক্লিক করেন।
আহলে কিতাব (ইহুদী খৃষ্টানরা) কি মু'মিন?
ইহুদী-খৃষ্টান এবং অন্যান্য ধর্মের সকলেই কাফের। যদিও তারা এমন ধর্মের অনুসরন করে, যার মূল হচ্ছে সঠিক। নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আগমনের পর যে লোক নিজের ধর্ম পরিত্যাগ না করবে এবং ইসলাম গ্রহন না করবে, এ প্রসংঙ্গে আল্লাহ্ সুবহানা'হু তা'আলা বলেনঃ
 وَمَن يَبتَغِ غَيرَ الإِسلٰمِ دينًا فَلَن يُقبَلَ مِنهُ وَهُوَ فِى الءاخِرَةِ مِنَ الخٰسِرينَ
"যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, তার নিকট থেকে ওটা (তার ধর্ম) গ্রহণ করা হবে না এবং পরকালে সে হ্মতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে"। (সূরা আল ইমরান-৮৫)
কোন মুসলিম যদি তাদেরকে কাফের না বলে বা তাদের ধর্ম বাতিল হওয়ার ব্যাপারে সন্দহ-শংসয় করে, তবে সেও কাফের হয়ে যাবে। কেননা সে তাদের কাফের হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ্ ও তার নবীর বিধানের বিরোধীতা করেছে। কোরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেনঃ
وَمَن يَكفُر بِهِ مِنَ الأَحزابِ فَالنّارُ مَوعِدُهُ
"আর অন্যান্য সম্প্রদায়ের যে ব্যক্তি এই কোরআন অস্বীকার করবে,  তবে জাহান্নাম হবে তার প্রতিশ্রুত স্হান।" (সূরা হুদ-১৭)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
"শপথ সেই সত্বার যার হাতে আমার প্রাণ, এই উম্মতের মধ্য থেকে ইহুদী হোক বা খৃষ্টান হোক, কোন ব্যক্তি যদি আমার সম্পর্কে শুনে অতঃপর আমাকে যে শরীয়ত দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছে তার উপর ঈমান না এনেই মৃত্যু বরন করে, তবে সে জাহান্নমের অধিবাসী হবে।" (মুসলিম)

Thursday, April 21, 2016

ইসলামে নারীর মর্যাদাঃ

No comments :
ফেসবুক গ্রুপ এ জয়েন করতে এখানে ক্লিক কারুন

ইসলামে নারীর মর্যাদাঃ

ঈমান ও আমল অনুযায়ী মর্যাদা ও প্রতিদানের দিক থেকে নারী-পুরুষে ভেদাভেদ নেই। উভয়ে আল্লাহর নিকট সমান। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "নারীরা তো পুরুষদের সহোদর"।(আবু দাঊদ)। নারী হকদার হলে তা দাবী করার অধিকার আছে তার, অথবা নিপীড়িত হলে তা থেকে মুক্ত হওয়ার অধিকারও আছে। কেননা ইসলাম ধর্মে সম্বোধন সূচক যে সকল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তাতে নারী পুরুষের সাথেই। তবে যে সমস্ত বিষয়ে উভয়ের মাঝে পার্থক্য উল্লেখ করা হয়েছে তা অবশ্যই ভিন্ন। ইসলামের অবশিষ্ট ভিধি-ভিধানের তুলনায় সেই পার্থক্য খুবই সামান্য। তাছাড়া ইসলাম সৃষ্টিগত ও শক্তি-সামর্থগত দিক থেকে নারী-পুরুষের বৈশিষ্টের প্রতি গুরুত্বসহ লক্ষ্য রেখেছে। আল্লাহ্‌ বলেনঃ
 أَلا يَعلَمُ مَن خَلَقَ وَهُوَ اللَّطيفُ الخَبيرُ
"সে কি জানেনা কে সৃষ্টি করেছে? আর তিনিই সুক্ষ্মদর্শী সংবাদ রক্ষক"। (সূরা মূলক)
নারীর কিছু কর্ম আছে যা তার জন্যেই বিশেষ। পুরুষের কিছু কর্ম আছে যা তার জন্যেই বিশেষ। একজনের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অপরের অনুপ্রবেশ সংসার জীবনের ভারসাম্য নষ্ট করে দিবে। নারী নিজ গৃহে অবস্হান করলেও তাকে পুরুষের সমপরিমাণ প্রতিদান দেয়া হবে। আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্নিত, একদা তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আগমন করলেন।  তখন নবীজি সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে বসে ছিলেন। আসমা বললেন, আপনার জন্য আমার বাবা-মা কোরবান হোক! আমি নারী সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে আপনার নিকট আগমন করেছি। আপনাকে জানাচ্ছি যে, আমার প্রান আপনার জন্য উৎসর্গ। পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্তের নারী মাত্রেই যে কেউ আমার এই আগমনের সংবাদ শুনুক বা না শুনুক সে আমার অনুরুপ মত পোষণ করবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্‌ আপনাকে সত্য দ্বীনসহ নারী-পুরুষ উভয় শ্রেণীর নিকট প্রেরন করেছেন। তাই আমরা আপনার প্রতি এবং সেই মা'বুদের ঈমান এনেছি যিনি আপনাকে প্রেরন করেছেন। আমরা নারী সমাজ চার দেয়ালের ঘেরার মধ্যে আপনাদের গৃহের মধ্যে বসে বন্দি অবস্হায় দিন যাপন করি, আপনাদের প্রবৃত্তি চরিতার্থ করি, আপনাদের সন্তান গর্ভে ধারন করি। আর আপনারা পুরুষ সমাজকে আমাদের উপর মর্যাদাবান করা হয়েছে। জুমআ, জামাআত,রুগির পরিচর্যা, জানাযায় অংশ গ্রহন, হাজ্জের পর হাজ্জ সম্পাদন এবং সর্বোত্তম কাজ আল্লাহর পথে জিহাদে আপনারা অংশ নিয়ে থাকেন। আপনাদের মধ্যে কোন পুরুষ হাজ্জ বা উমরা বা জিহাদের পথে বের হলে আমরা আপনাদের ধন-সম্পদ সংরহ্মন করে থাকি। আপনাদের সন্তানদের লালন-পালন করে থাকি। অতএব হে আল্লাহর রাসূল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনারা যে প্রতিদান পেয়ে থাকেন তাতে কি আমরা শরীক হব না? বর্ননাকারী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের প্রতি পূরাপূরি মুখ ফিরালেন, তারপর বললেন, তোমরা কি কখনও শুনেছ ধর্মীয় বিষয়ে এ নারীর প্রশ্নের চেয়ে উত্তম কথা বলতে কোন নারীকে?  তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা ভাবতেই পারিনি একজন নারী এত সুন্দর কথা বলতে পারে। এবার নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলার দিকে দৃষ্টিপাত করলেন অতঃপর বললেন, ওহে নারী তুমি ফিরে যাও এবং তোমার পিছনের সকল নারীকে জানিয়ে দাও যে, তোমাদের কারো নিজ স্বামীর সাথে সদ্ভাবে সংসার করা,স্বামীর সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করা এবং তার মতামতের অনুসরণ করা উপরোক্ত সকল ইবাদতের ছওয়াবের বরাবর। (বায়হাকী) 
নবী (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি দু'জন কন্যা বা দু'জন ভগ্নি বা নিকটাত্মীয় দু'জন নারীর ভরন-পোষণ বহন করবে এমনকি আল্লাহ্‌ তাদের উভয়কে যথেষ্ট করে দিবেন, তবে তারা জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য পর্দা স্বরুপ হয়ে যাবে। (আহমাদ, ত্বাবরানী, হাদীসটি হাসান, বিঃদ্রঃ সহীহ তারগীব তারহীব হা/২৫৪৭)
♦♦নারীদের কতীপয় বিধি-বিধানঃ♦♦
গায়র মাহরাম নারীর সাথে নির্জনে মিলিত হওয়া পুরুষের জন্য হারাম। নবী (সাঃ) বলেন, "মাহরাম ব্যতীত কোন পুরুষ যেন কোন নরীর সাথে নির্জনে মিলিত না হয়"।(বুখারী ও মুসলিম)
মসজিদে গিয়ে নারীর নামাজ আদায় করা বৈধ। কিন্তু ফেৎনার আশংকা থাকলে মসজিদে যাওয়া উচিত নয়। আয়েশা (রাঃ) বলেন, নারীরা এখন যা করছে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা দেকলে হয়তো তাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করতেন। যেমনটি বানী ইসরাঈলের নারীদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল। (বুখারী ও মুসলিম) পুরুষ মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করলে যেমন তাকে বহুগুন ছওয়াব দেয়া হয়; নারী নিজ গৃহে নামাজ আদায় করলেও তাকে অনুরুপ ছওয়াব দেয়া হবে। জৈনক নারী নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে আবেদন করল হে আল্লাহর রাসূল! আপনার সাথে আমি নামাজ আদায় করতে ভালবাসি। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি জানি তুমি আমার সাথে নামাজ আদায় করতে ভালবাস। কিন্তু তোমার জন্যে হ্মুদ্র কুঠরিতে নামাজ পড়া, বাড়িতে নামাজ পড়ার চাইতে উত্তম। আর বাড়িতে নামাজ পড়া মহল্লার মসজিদে নামাজ পড়ার চাইতে উত্তম। আর মহল্লার মসজিদে নামাজ পড়া আমার মসজিদে (মসজিদে নববীতে) নামাজ পড়ার চেয়ে উত্তম। (আহমাদ, হাদীসটি হাসান বিঃদ্রঃ সহীহ তারগীব তারহীব হা/৩৪০) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন, নারীদের সর্বোত্তম মসজিদ হচ্ছে তার ঘরের সবচেয়ে নির্জনতম স্থান।(আহমাদ, হাদীসটি হাসান বিঃদ্রঃ সহীহ তারগীব তারহীব হা/৩৪১) 
মাহরাম সাথী না পেলে নারীর হাজ্জ উমরা করা ফরয নয়। কেননা মাহরাম ব্যতীত নারীর সফর বৈধ নয়। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোন নারী মাহরাম ব্যতীত যেন তিন দিনের অধিক দূরত্ব স্হানে সফর না করে। অপর বর্ননায় একদিন ও একরাতের অধিক দূরত্ব সপর করতে নিষেধ করা হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)
নারীর কবর যিয়ারত ও লাশের সাথে গমন নিষেধ। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, অধিকহারে কবর যিয়ারতকারী নারীদের উপর আল্লাহর লা'নত। (তিরমিযী) ইম্মে আত্বিয়া (রা) বলেন, জানাযার লাশের সাথে চলতে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের উপর কঠোরতা আরোপ করা হয়নি। (বুারী ও মুসলিম)
নারী চুলে যেকোন রং ব্যবহার করতে পারে, তবে বিবাহের প্রস্তাবকারী পুরুষকে ধোকা দেয়ার উদ্দেশ্য না থাকলে কালো রং ব্যবহার করা মাকরূহ।
উত্তরাধিকার সম্পদে নারীর জন্যে আল্লাহ যে অংশ নির্ধারন করেছেন তা তাকে প্রদান করা ওয়াজীব; তা থেকে তাকে বঞ্চিত করা হারাম। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি উত্তরাধীকারীকে প্রাপ্য মীরাছ থেকে বঞ্চিত করবে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্‌ তাকে জান্নাতের মীরাছ থেকে বঞ্চিত করবেন।(ইবনে মাজাহ্)
স্বামীর উপর ওয়াজীব হচ্ছে স্ত্রীর প্রয়োজনিয় ব্যয়ভার বহন করা। যা ছাড়া স্ত্রী চলতে পারবেনা যেমন- খাদ্য, পানীয়, বস্ত্র ও বাসস্থান প্রভৃতির উত্তমভাবে ব্যবস্হা করা। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
 لِيُنفِق ذو سَعَةٍ مِن سَعَتِهِ ۖ وَمَن قُدِرَ عَلَيهِ رِزقُهُ فَليُنفِق مِمّا ءاتىٰهُ اللَّهُ
"বিত্তশালী ব্যক্তি তার বিত্ত অনুযায়ী ব্যয় করবে। যে ব্যক্তি সিমীত পরিমাণে রিযিকপ্রাপ্ত, সে আল্লাহ যা দিয়েছেন তা থেকে ব্যয় করবে"।(সূরা আত্ব-ত্বালাক-৭)
নারীর স্বামী না থাকলে তার পিতা বা ভ্রাতা বা পুত্রের উপর আবশ্যক হচ্ছে তার খরচ বহন করা। নিকটাত্মীয় না থাকলে ুলাকার স্হানীয় লোকদের তার ভরন-পোষনের ব্যবস্হা করা মুস্তাহাব। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, বিধবা এবং অভাবী-মিসকিনদের প্রয়োজন পূরনে প্রচেষ্টাকারী আল্লাহর পথে মুজাহীদের ন্যায় অথবা রাত্রে তাহাজ্জুদ আদায়কারী ও দিনে নফল সিয়াম আদায়কারী ন্যায় প্রতিদান লাভ করবে।(বুখারী ও মুসলিম)
তালাকপ্রাপ্তা নারী বিবাহ না করলে তার শিশু সন্তানের লালন-পালন করার হকদার তারই বেশী। আর যত দিন শিশু মায়ের কোলে থাকবে ততদিন শিশুর ভরন-পোষন চালানো পিতার উপর ওয়াজীব।
নারীকে প্রথমে সালাম দেয়া মুস্তাহাব নয়; বিশেষ করে সে যদি যুবতী হয় বা তাকে সালাম দিলে ফেৎনার আশংকা থাকে।
প্রতি শুক্রবার (সপ্তাহে একবার) নারীর নাভীমূল ও বগল পরিষ্কার করা এবং নখ কাটা মুস্তাহাব। তবে চল্লিশ দিনের বেশী দেরী করা নাজায়েয।
মুখমন্ডলের চুল উঠানো হারাম- বিশেষ করে ভ্রুযুগলের চুল উপড়ানো নিষেধ। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে নারী চুল উপড়ানোর কাজ করে এবং যার উপড়ানো হয় গার উপর আল্লাহর লা'নত।(আবু দাউদ)
শোক পালনঃ মৃতের জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন করা কোন নারীর জন্য জায়েয নেই। তবে মৃত ব্যক্তি স্বামী হলে চার মাস দশ দিন শোক পালন করা ওয়াজিব। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ্‌ এবং শেষ দিবসে বিশ্বাসী নারীর তার স্বামী ব্যতীত কোন মৃত ব্যক্তির জন্য  তিন দিনের বেশী শোক পালন করা হালাল নয়। (মুসলিম) শোক পালনের জন্য নারী নিজের সৌন্দর্য গ্রহণ, যাফরান ইত্যাদির সুগন্ধি লাগানো থেকে বিরত থাকবে। যে কোন ধরনের গয়না, রঙিন লাল, হলুদ ইত্যাদি কাপড় পরিধান করবে না। মেহেদি বা রং (মেকআর) কালো সুরমা বা সুগন্ধিযুক্ত তৈল ব্যবহার করবেনা। তবে নখ কাটা,  নাভীমূল পরিষ্কার করা,  গোসল করা জায়েয আছে। যে গৃহে স্বামী মারা গেছে সেখানেই নারীর ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। একান্ত প্রয়োজন ব্যতীত সেই গৃহ থেকে বের হওয়া হারাম। কোন প্রয়োজনে বের হতে চাইলে দিনের বেলায় বের হবে।
পর্দাঃ নারী নিজ গৃহ থেকে বের হলে সমস্ত শরীর চাদর বা বোরকা দ্বারা আবৃত করা ওয়াজিব। শরীয়ত সম্মত পর্দার শর্তাবলীঃ (১) নারী তার সমস্ত শরীর ডেকে দেবে। (২) পর্দার পোষাকটি যেন নিজেই সৌনর্য না হয়। (৩) পর্দার কাপড় মোটা হবে পাতলা নয়। (৪) প্রশস্ত ঢিলা-ঢালা হবে; সংকির্ন হবে না। (৫) আতর সুভাশ মিশ্রিত হবে না। (৬) কাফের নারীদের পোষাকের সাথে সদৃশপূর্ন হবে না। (৭) পুরুষের পোষাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ন হবে না।
নারী যাদের সাথে পর্দা করবে বা করবে না তারা তিন শ্রেনীর লোকঃ
(১) স্বামী তার সাথে কোন পর্দা নেই। স্বামী যেভাবে ইচ্ছা স্ত্রীকে দেখতে পারে। (২) নারী এবং মাহরাম পুরুষ, সাধারনত নারীর শরীরের যে অংশ বাইরে থাকে এরা তা দেখতে পারবে। যেমনঃ মুখমন্ডল, মাথার চুল, কাধ, হাত, বাহু, পদযুগল ইত্যাদি। (৩) অন্যান্য পুরুষ(পরপুরুষ) একান্ত প্রয়োজন ছাড়া এরা নারীর শরীরের কোন অংশ দেখতে পাবে না। যেমনঃ বিবাহ ও চিকিৎসার উদ্দেশ্যে নরীকে দেখা জায়েয। নারীর সৌন্দর্য তার মুখমন্ডলেই। তাই মুখমন্ডল দেখেই বেশীর ভাগ মানুষ ফেৎনায় জড়িয়ে পড়ে। ফাতেমা বিনতে মুনযের (রাঃ) বলেন, " আমরা পরপুরুষের সামনে মুখমন্ডল ঢেকে ফেলতাম"। (হাকেম) আয়শা (রাঃ) বলেন, "আমরা ইহরাম অবস্হায় বিদায় হাজ্জে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম। উষ্টারোহী পুরুষরা আমাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করত। তারা আমাদের নিকটবর্তী হলে আমরা মাথার উপরের উড়নাকে মুখমন্ডলের উপর ঝুলিয়ে দিতাম। ওরা চলে গেলে আবার মুখমন্ডল খুলে দিতাম"। (আবু দাউদ)
ইদ্দতঃ ইদ্দত কয়েক প্রকারঃ
(১) গর্ভবতী নারীর ইদ্দতঃ গর্ভবতী স্ত্রীকে তালাক দেয়া হোক বা তার স্বামী মৃত্যু বরন করুক গর্ভের সন্তান প্রসব হলেই ইদ্দত শেষ।
(২) যে নারীর স্বামী মারা গেছেঃ তার ইদ্দত হচ্ছে চার মাস দশ দিন।
(৩) হায়েয অবস্হায় যাকে তালাক দেয়া হয়েছেঃ তার ইদ্দত হচ্ছে তিন হায়েয। তৃতীয় হায়েয শেষ হওয়ার পর পবিত্রতা শুরু হলেই গার ইদ্দত শেষ।
(৪) পবিত্রাবস্হায় যাকে তালাক দেয়া হয়েছেঃ তার ইদ্দত হচ্ছে তিন মাস। রেজঈ তালাকের ইদ্দত পালনকারীনির উপর ওয়াজিব হচ্ছে স্বামীর কাছেই থাকা। এই ইদ্দত চলাবস্হায় স্বামী তার যেকোন অঙ্গ দেখার ইচ্ছা করলে বা তার সাথে নির্জন হতে চাইলে তা জায়েয আছে। হতে পারে স্বামী যদি স্ত্রীকে বলে 'আমি তোমাকে ফেরত নিলাম' বা তার সাথে 'সহবাসে লিপ্ত হয়' তবেই তাকে ফেরত নেয়া হয়ে যাবে। ফেরত নেয়ার হ্মেত্রে স্ত্রীর অনুমতির দরকার নেই।
নারী অভিভাবক ব্যতীত নিজেই নিজের বিবাহ বসবে না। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া নিজের বিবাহ সম্পন্ন করবে, তার বিবাহ বাতিল,তার বিবাহ বাতিল,তার বিবাহ বাতিল। (তিরমিযী, আবু দাউদ)
পরচুলা ব্যবহার করা, শরীরের খোদাই করে অংকন করা নারীর জন্য হারাম। এ দু' টি কাজ কবিরা গুনাহের অন্তর্গত। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে নারী পরচুলা ব্যবহার করে ও যে পরচুলা লাগিয়ে দেয় এবং যে নারী শরীরে খোদাই করে অংকন করে ও যে করিয়ে দেয় তাদের সকলের উপর আল্লাহর লা'নত। (বুখারী ও মুসলিম)
বিনা কারনে স্বামীর নিকট তালাক চাওয়া হারাম। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "যে নারী কোনরূপ অসুবিধা ছড়াই (বিনা কারনে) স্বামীর নিকট তালাক চায়, তার জন্য জান্নাতের সুঘ্রান হারাম"। (আবু দাউদ)
সদ্ভাবে স্বামীর অনুগত্য করা নারীর উপর ওয়াজিব। বিশেষ করে স্ত্রীকে যদি বিছানায় (সহবাসের জন্য) আহবান জানায়। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোন স্বামী যদি স্ত্রীকে বিছানায় আহবান করে, কিন্তু স্ত্রী  তার আহবান প্রত্যাখ্যান করে, অতঃপর স্বামী রাগান্বিত অবস্হায় রাত কাটায়, প্রভাত হওয়া পর্যন্ত ফেরেস্তাগন সে স্ত্রীকে অভিশাপ দেয়। (বুখারী ও মুসলিম)
নারী যদি জানে যে রাস্তায় পরপুরুষ থাকবে, তবে বাইরে যাওয়ার সময় আতর-সুগন্ধি লাগানো হারাম। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, " নারী আতর সুগন্ধি লাগিয়ে যদি মানুষের সামনে দিয়ে হেটে যায়-যাতে তারা সুঘ্রাণ পায়, তবে নারী এরূপ এরূপ অর্থাৎ ব্যভিচারীনি"। (আবু দাউদ)

Tuesday, April 19, 2016

No comments :
বিসমিল্লাহহির রাহমানুর রাহিম।

 মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় ফিৎনা কি?


এ প্রশ্নের উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "আদম (আঃ) এর সৃষ্টির পর থেকে কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত দাজ্জালের চাইতে বড় কোন ফিৎনা নেই"।(মুসলিম)
দাজ্জাল আদমের এক সন্তান। শেষ যুগে আগমন করবে। তার দু'চোখের মধ্যবর্তী স্হানে লিখা থাকবে (كافر) 'কাফের' প্রত্যেক শিক্ষিত-অশিক্ষিত মু'মিন ব্যক্তি লিখাটি পড়তে পারবে। তার ডান চোখ অন্ধ থাকবে যেন চোখটি আঙ্গুরের থোকা। সর্বপ্রথম বের হয়ে সে সংস্কারের দাবী করবে। অতঃপর নবী হিসাবে তারপর সে নিজেই প্রভু আল্লাহ্ হিসাবে দাবী করবে। মানুষের কাছে নিজের দাবী নিয়ে আসলে লোকেরা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে এবং তার আহবান প্রত্যাখ্যান করবে। সে তাদের কাছ থেকে যখন ফিরে যাবে, তখন তাদের ধন সম্পদ তার পিছে পিছে চলতে থাকবে। মানুষ সকালে উঠে দেখবে তাদের হাতে কোন সম্পদ নেই। আবার দাজ্জাল নিজের উপর ঈমান আনার জন্য মানুষকে আহবান করবে, তখন লোকেরা তার ডাকে সাড়া দিবে ও তাকে সত্য বলে বিশ্বাস করবে। তখন সে আসমানকে আদেশ করবে, আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষন হবে। যমিনকে আদেশ করবে, সেখানে উদ্ভিদ উৎপাদন হবে। সে যখন মানুষের কাছে আসবে তখন তার সাথে থাকবে পানি ও আগুন। কিন্তু প্রকৃতপহ্মে তার পানি হবে আগুন আর আগুন হবে ঠান্ডা পানি। মু'মিন ব্যক্তির উচিত প্রত্যেক নামাজের তাশাহুদের শেষে দাজ্জালের ফিৎনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা। যদি দাজ্জাল বের হয়ে যায়, তবে তার সামনে সূরা কাহাফের প্রথমাংশ পাঠ করবে। ফিৎনায় পড়ার ভয়ে তার সম্মুখীন হওয়া থেকে বিরত থাকবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,  "যে ব্যক্তি দাজ্জাল সম্পর্কে শোনবে সে যেন তার থেকে দুরে থাকে। আল্লাহর শপথ একজন মানুষ নিজেকেমু'মিন ভেবে তার সাথে সাক্ষাত করতে যাবে, কিন্তু দাজ্জালের সাথে সংশয় সৃষ্টিকারী যে সকল বিষয় থাকবে তা দেখে সে তার অনুসরন করে ফেলবে।" (আবু দাউদ)
দাজ্জাল পৃথিবীতে মাত্র চল্লিশ দিন অবস্হান করবে। কিন্তু প্রথম দিন হবে এক বছরের সমান, পরের দিন একমাসের সমান, পরবর্তী দিন এক সপ্তাহের সমান। আর বাকি দিনগুলো হবে সাধারন দিনের মত। মক্কা ও মদিনা ছাড়া পৃথিবীর বুকে এমন কোন শহর বা স্হান বাকি থাকবে না, যেখানে দাজ্জাল প্রবেশ করবে না। মক্কা -মদিনায় প্রবেশ করা তার জন্য নিষেধ। অতঃপর ঈসা (আঃ) অবতরন করে তাকে হত্যা করবেন।
আমাদের সকলকে দাজ্জালের হাত থেকে বাচার তৌফিক দান করুন, "আমিন"


Sunday, April 17, 2016

কোরআন পাঠের ফযীলতঃ

No comments :

কোরআন পাঠের ফযীলতঃ

[ফেসবুকে জয়েন করতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।]
কোরআন আল্লাহর বানী। সৃষ্টিকুলের উপর যেমন স্রষ্টার সম্মান ও মর্যাদা অপরিসীম,  তেমনি সকল বানীর উপর কোরআনের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব অতুলনীয়। মানুষের মুখ থেকে যা উচ্চারিত হয়, তন্মধ্যে 

কোরআন পাঠ সর্বাধিক উত্তম।
কোরআন শিক্ষা করা, অন্যকে শিক্ষা দান করা ও কোরআন অধ্যয়ন করার মধ্যে রয়েছে অফুরন্ত ফযীলত। নিম্নে কতিপয় উল্লেখ করা হলঃ

★কোরআন শিখানোর প্রতিদান ঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের মাঝে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজে কোরআন শিক্ষা করে ও অন্যকে কোরআন শিক্ষা দেয়। (বুখারী)
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি পবিত্র কোরআনের একটি অহ্মর পড়বে, সে একটি নেকী পাবে। আর একটি নেকী দশটি নেকীর সমপরিমান। (তিরমিয়ী)
ইবনে রজব (রহঃ) বলেন, প্রতিটি নেক কাজেরই ছওয়াব দশগুন বৃদ্ধি হয়। এর প্রমান হচ্ছে আল্লাহর বানীঃ
مَن جاءَ بِالحَسَنَةِ فَلَهُ عَشرُ أَمثالِها
"যে একটি নেক কাজ করবে, তার জন্য রয়েছে অনুরুপ দশগুণ প্রতিদান"। (সূরা আল-আনআম-১৬০) আর আল্লাহ্‌ যাকে চান তাকে দশগুনেরও বেশী প্রতিদান দিবেন।

★কোরআন শিক্ষা করা, মুখস্হ করা ও তাতে দক্ষতা লাভ করার ফযীলতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করবে এবং তা মুখস্হ করবে (এবং বিধি বিধানের) প্রতি যত্নবান হবে, সে উচ্চ সম্মানিত ফেরেস্তাদের সাথে অবস্হান করবে। আর যে ব্যক্তি কষ্ট হওয়া সত্বেও কোরআন পাঠ করবে এবং তার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখবে সে দ্বিগুণ ছওয়াবের অধিকারী হবে"। (বুখারী ও মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "কিয়ামত দিবসে কোরআন অধ্যয়নকারীকে বলা হবে, কোরআন পড় এবং উপরে উঠ। যেভাবে দুনিয়াতে তারতীলের সাথে কোরআন পড়তে সেভাবে পড়। যেখানে তোমার আয়াত পাঠ করা শেষ হবে, জান্নাতের সেই সুউচ্চ স্হানে হবে তোমার বাসস্থান "।(তিরমিযী)
যার সন্তান কোরআন শিক্ষা করবে তার প্রতিদান ঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করবে, শিক্ষা করবে ও তদানুযায়ী আমল করবে, তার পিতা-মাতাকে কিয়ামত দিবসে একটি নূরের তাজ পরানো হবে, যার আলো হবে সূর্যের আলোর মত উজ্জল। তাদেরকে এমন দু'টি পোষাক পরিধান করানো হবে, যা দুনিয়ার সকল বস্তুর চেয়ে অধিক মুল্যবান। তারা বলবেঃ কোন আমলের কারনে আমাদেরকে এত মুল্যবান পোষাক পরানো হয়েছে? বলা হবে তোমাদের সন্তানের কোরআন গ্রহন করার কারনে"।(হাকেম)

★পরকালে কোরআন সুপারিশ করবেঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "তোমরা কোরআন পাঠ কর। কেননা কিয়ামত দিবসে কোরআন তার পাঠকের জন্যে সুপারিশকারী হবে"। (মুসলিম)
নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন, "কিয়ামত দিবসে সিয়াম ও কোরআন বান্দার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে"। (আহমাদ, হাকেম, সহীহ তারগীব তারহীব হা/৯৮৪)

★কোরআন তেলাওয়াত, অধ্যয়ন এবং কোরআন নিয়ে গবেষনার জন্য একত্রিত হওয়ার ফযীলতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ "কোন সম্প্রদায় যদি আল্লাহর কোন ঘরে একত্রিত হয়ে কোরআন পাঠ করে এবং তা পরস্পরে শিক্ষা লাভ করে, তবে তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল হয়, আল্লাহর রহমত তাদেরকে আচ্ছাদিত করে এবং ফেরেস্তারা তাদেরকে ঘিরে রাখে। আর আল্লাহ্‌ তার নিকটস্থ ফেরেস্তাদের সামনে তাদের কথা আলোচনা করেন"। (মুসলিম)

★উপদেশঃ

অতএব সম্মানিত পাঠক! আপনার সময়ের নির্দিষ্ট একটা অংশ কোরআন পাঠের জন্য  নির্ধারন করুন। যত ব্যস্তই থাকুন না কেন ঐ অংশটুকু পড়ে নিতে সচেষ্ট হোন। কেননা যে কাজ সর্বদা করা হয় তা অল্প হলেও বিচ্ছিন্নভাবে বেশী কাজ করার চেয়ে উত্তম। যদি কখনো উদাসিন হয়ে পড়েন বা ভূলে যান তবে পরবর্তী দিন তা পড়ে ফেলবেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোরআনের নির্দিষ্ট অংশ না পড়েই ঘুমিয়ে পড়ে তবে ফযর ও যোহর নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে যেন তা পড়ে নেয়। তাহলে তার আমল নামায় উহা রাতে পড়ার মত ছওয়াব লিখে দেয়া হবে। (মুসলিম)
যারা কোরআন ছেড়ে দেয় বা কোরআন ভূলে যায় আপনি তাদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না। 
আল্লাহ্‌ আমাদের সকলকে কোরআন পড়ার এবং বোঝার তৌফিক দান করুন। (আমিন)

Saturday, April 9, 2016

জাহান্নামের আগুন

No comments :
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জাহান্নামের আগুন 


জাহান্নামের বেশি শাস্তি আগুনেরই হবে,যে ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এরশাদ করেছেন যে,জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার আগুনের চেয়ে সত্তর গুন গরম বেশি হবে (মুসলিম)।
কোরআনের কোন কোন স্হানে তাকে "বড় আগুন" নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে (সূরা আলা ১২)
আবার কোথাও "আল্লাহর প্রজ্জলিত অগ্নি" নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে (সূরা হুমাজা -৫)
আবার কোথাও "লেলিহান জাহান্নাম " ও বলা হয়েছে 
(সূরা লাইল-১৪)
আবার কোথাও "জলন্ত অগ্নি"ও বলা হয়েছে (সূরা গাসিয়া-৪)
শাস্তি হিসাবে যদি মানুষকে জ্বালিয়ে দেয়াই উদ্দেশ্য হত,তাহলে দুনিয়ার আগুনই যতেষ্ট ছিল যাতে মানুষ হ্মনিকের মধ্যেই জ্বলে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু জাহান্নামের আগুনত মূলত কাফের ও মুশরিককে বিশেষ ভাবে আযাব দেওয়ার জন্যই উত্তপ্ত করা হয়েছে, তাই তা পৃথিবীর আগুনের চাইতে কয়েক গুন বেশি গরম হওয়া সত্বেও এ আগুন জাহান্নামিদেরকে একেবারে শেষ করে দিবে না,বরং তাদেরকে ধারাবাহিক ভাবে আযাবে নিমজ্জিত করে রাখবে।
আল্লাহ্‌ বলেনঃ
অর্থঃ"(জাহান্নাম) সে মরবেও না বাচবেও না "(সূরা ত্বা-হা-৭৮)
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে সপ্ন যোগে এক বিস্রি আকৃতি ও বিবর্ন চেহারার লোক দেখানো হল,সে আগুন জ্বালিয়ে যাচ্ছে এবং তাকে উত্তপ্ত করছে,রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) জিবরীল (আঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন এ কে? জিবরীল উত্তরে বললেনঃ তার নাম মালেক সে জাহান্নামের দারওয়ান (বোখারী)
জাহান্নামের আগুনকে আজও উত্তপ্ত করা হচ্ছে,কিয়ামত পর্যন্ত তাকে উত্তপ্ত করা হতে থাকবে। জাহান্নামিদের জাহান্নাম যাওয়ার পরও তাকে উত্তপ্ত করার  ধারাবাহিকতা চলতে থাকবে।
আল্লাহর বানীঃ

وَمَن يَهدِ اللَّهُ فَهُوَ المُهتَدِ ۖ وَمَن يُضلِل فَلَن تَجِدَ لَهُم أَولِياءَ مِن دونِهِ ۖ وَنَحشُرُهُم يَومَ القِيٰمَةِ عَلىٰ وُجوهِهِم عُميًا وَبُكمًا وَصُمًّا ۖ مَأوىٰهُم جَهَنَّمُ ۖ كُلَّما خَبَت زِدنٰهُم سَعيرًا

অর্থঃ "আল্লাহ্‌ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, সেই তো সঠিক পথ প্রাপ্ত  এবং যাকে পথ ভ্রষ্ট করেন, তাদের জন্যে আপনি আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন সাহায্যকারী পাবেন না। আমি কিয়ামতের দিন তাদের সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়, অন্ধ অবস্থায় এবং বধির অবস্থায়। তাদের আবাস্থল জাহান্নাম। যখনই নির্বাপিত হওয়ার উপক্রম হবে আমি তখন তাদের জন্যে অগ্নি  আরও বৃদ্ধি করে দেব।(সূরা বানী ইসরাঈল-৯৭)
জাহান্নামর আগুন কত উত্তপ্ত হবে তার হুবহু পরিমান বর্ননা করা অসম্ভব,তবে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর বর্ননা অনুযায়ী জাহান্নামের আগুনের তাপদাহ পৃথিবীর আগুনের চেয়ে সত্তর গুন বেশি হবে।সাধারন  অনুমানে পৃথিবীর আগুনের উত্তাপ ২০০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড ধরা হলে ' জাহান্নামের আগুনের তাপমাত্রা হয় এক লহ্ম ৩৮ হাজার ডিগ্রী সেন্টিগ্রে, এ কঠিন  গরম আগুন দিয়ে জাহান্নামিদের পোষাক ও তাদের বিছানা তৈরি করা হবে, ঐ আগুন দিয়ে তাদের ছাতা ও তাবু তৈরি করা হবে।কঠিন আযাবের এ নিকৃষ্ট স্হানে মানুষের জীবন যাপন কেমন হবে, যারা নিজের হাতে সামান্য একটি আগুনের কয়লাও রাখার হ্মমতা রাখেনা? কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুন দেখে সমস্ত নবীগন এত ভীত হবে তারা বলবে যে,
হে আমার প্রভু!  আমাকে বাচাও, হে আমার প্রভু! আমাকে বাচাও। এবলে আল্লাহর নিকট স্বীয় জীবনের নিরাপত্তা কামনা করবে। উম্মুল মু'মেনীন আয়েশা সিদ্দিকি (রাঃ) জাহান্নামের আগুনের কথা স্মরণ করে পৃথিবীতে কাঁদতেন, পৃথিবীতে থাকা অবস্থায়ই জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশ জন সাহাবীর একজন ওমর (রাঃ) কোরআন তিলোয়াত করার সময় জাহান্নামের আযাবের কথা আসলে বেহুস হয়ে যেতেন, মুয়াজ বিন জাবাল,আবদুল্লাহ্ বিন রাওয়াহা,ওবাদা বিন সামেত (রাঃ) দের মত সম্মানিত সাহাবাগন জাহান্নামের আগুনের কথা স্মরণ করে এত কাদতেন যে,তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় যেতেন। আবদুল্লাহ্ বিন মাসউদ (রাঃ) কামারের দোকানের পাশে দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে প্রজ্জলিত আগুন দেখে জাহান্নামের কথা স্মরণ করে কাদতে থাকতেন।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্‌ তা'লা এরশাদ করেনঃ
অর্থঃ"তোমার প্রতিপালকের শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ"
(সূরা বনী ইসরাঈল-৫৭)
আল্লাহর স্বীয় দয়া ও অনুগ্রহে সমস্ত মুসলমানদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিন ""আমিন""


Friday, April 1, 2016

মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কেমন ছিলেন? 

No comments :

মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কেমন ছিলেন? 

আলহা’মদুলিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াসসালামু আ’লা রাসুলিল্লাহ। আম্মা বাআ’দু।
আল্লাহ সুবহা’নাহু তা'আলা বলেন,

 وَإِنَّكَ لَعَلىٰ خُلُقٍ عَظيمٍ

“(হে নবী!) নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রেরঅধিকারী।” [সুরা ক্বলমঃ ৪]
আল্লাহ্‌ আরো বলেছেন,

 لَقَد كانَ لَكُم فى رَسولِ اللَّهِ أُسوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَن كانَ يَرجُوا اللَّهَ وَاليَومَ الءاخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثيرًا

“যারা আল্লাহ্‌ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহ্‌কে অধিক স্মরন করে, তাদের জন্যে রাসূল (সাঃ) এর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে।” 
[সুরা আল আহজাবঃ ২১]
আল্লাহ্‌ সুবহা'নাহু তা'আলা বলেছেন, 

النَّبِىُّ أَولىٰ بِالمُؤمِنينَ مِن أَنفُسِهِم ۖ وَأَزوٰجُهُ أُمَّهٰتُهُم ۗ وَأُولُوا الأَرحامِ بَعضُهُم أَولىٰ بِبَعضٍ فى كِتٰبِ اللَّهِ مِنَ المُؤمِنينَ وَالمُهٰجِرينَ إِلّا 

أَن تَفعَلوا إِلىٰ أَولِيائِكُم مَعروفًا ۚ كانَ ذٰلِكَ فِى الكِتٰبِ مَسطورًا

“নবী (আপনি) মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চাইতে বেশি আপন এবং আপনার স্ত্রীগন তাদের মাতা। আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মুমিন ও মুহাজিরগনের মধ্যে যারা আত্বীয়, তারা পরষ্পরে অধিক ঘনিষ্ঠ। তবে তোমরা যদি তোমাদের বন্ধুদের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্য করতে চাও, করতে পার। এটা লওহে-মাহফুযে লিখিত আছে।"
 [সুরা আহজাবঃ ৬]
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদীসের উপর ভিত্তি করে তিনি দেখতে কেমন ছিলেন, তার ব্যক্তিত্ব কেমন ছিলো এবং তাঁর জীবনীর ছোট-বড় যাবতীয় খুটিনাটি বিষয়ের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিয়ে ইমাম তিরমিযী রাহিমাহুল্লাহর সুন্দর একটি বই লিখেছিলেন। বইটির নাম হচ্ছে “শামাইলুন নাবিয়্যি”। বইটি “শামায়েলে তিরমিযী” নামেও পরিচিত। বইটি বাংলা ইংরেজীসহ বিভিন্ন ভাষাতে অনুদিত হয়েছে, আপনারা সংগ্রহ করতে পারেন।
www.bahadurhossn24.com

সেই বই থেকে কিছু বর্ণনাঃ
(১) আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম খুব লম্বাও ছিলেন না, আবার খুব বেটেও ছিলেন না বরং, তিনি ছিলেন মাঝারি উচ্চতার। তাঁর দেহের গড়ন ছিলো সুঠাম আকৃতির, অর্থাৎতিনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। তার উভয় বাহু এবং পা ছিলো মাংসল। তাঁর অংগ-প্রত্যংগের জোড়াগুলো ছিলো মজবুত।
(২) তাঁর গায়ের রঙ ছিলো অতিশয় সুন্দর গৌর বর্ণের, রক্তিমাভ। তিনি ধবধবে সাদাও ছিলেন না, আবার বেশি তামাটে বর্ণেরও ছিলেন না।সাহাবীরা বলেছেন, তাঁর চেহারা চাঁদের চাইতেও বেশি সুন্দর ছিল।
(৩) তাঁর চুল ছিলো ঈষৎ ঢেউ খেলানো ও সামান্য কোঁকড়ানো। চুলগুলো লম্বা হলে তার বাবড়ি দুই কানের লতি পর্যন্ত ঝুলানো থাকতো। তিনি কখনো চুলে সিথি করতেন এবং চুলে তেল দিতেন।
(৪) তার চোখের ভ্রুগুলো ছিলো স্পষ্ট ও কালো, কিছুটা বাঁকানো ও একটা থেকে আরেকটা পৃথক। তার দুই ভ্রুর মাঝখানে একটা রগ ছিলো, যা তিনি রেগে গেলে ফুলে যেতো এবং মুখ লাল হয়ে যেত, যা থেকে স্পষ্ট বোঝা যেত যে, তিনি রাগন্বিত হয়েছেন। তিনি চোখে সুরমা দিতেন।
(৫) তার দাঁতগুলো ছিলো চিকন ও উজ্জ্বল বর্ণের, এবং তাঁর সামনের দুটি দাতের মাঝে কিঞ্চিত ফাঁক ছিলো। তিনি কথা বলার সময় মনে হতো তার সামনের দাঁত থেকে যেন নূর বের হচ্ছে।
(৬) তাঁর চেহারা বা মুখমন্ডল ছিলো চাঁদের মতো উজ্জ্বল, কিছুটা প্রশস্ত। চোখের শুভ্রতার মধ্যে রক্তিম রেখাগুলো স্পষ্ট দেখা যেত। তাঁর নাক ছিলো চেহারার সাথে মানানসই রকমের তীক্ষ্ণ ও উন্নত। তাঁর দাঁড়ি ছিলো ঘন ও ভরপুর। ইব্রাহীম আ’লাইহিস সালাম এর সাথে তাঁর চেহারার বিশেষ মিল ছিলো।
(৭) তিনি সামনের দিকে একটু ঝুঁকে হাটতেন, মনে হতো যেন উঁচু জায়গা থেকে নিচে অবতরণ করছেন। তিনি হাঁটার সময় মাটিতে পা ফেলতেন মৃদুভাবে, হাটতেন পাতলা পদক্ষেপে কিন্তু দ্রুত গতিতে।
(৮) তাঁর দুই কাঁধের মাঝামাঝি জায়গায়‘মোহরে নবুওত’ বা সর্বশেষ নবুওতের সীল ছিলো। যা কবুতরের ডিমের মতো বড় লাল গোশতের টুকরা যা পশম দ্বারা ঢাকা ছিলো এবং চারপাশে তিল ছিলো।
(৯) তিনি কুমারী পর্দানশীল নারীদের চাইতে বেশি লজ্জাশীল ছিলেন।
(১০) তিনি যখন কারো দিকে তাকাতেন তখন সর্বশরীর ফিরিয়ে তাকাতেন। প্রায়ই দৃষ্টি নিচু করে রাখতেন। আসমানের চাইতে জমীনের দিকেই তাঁর দৃষ্টি বেশি নিবদ্ধ থাকতো। স্বভাবত লাজুকতার দরুণ তিনি কারো দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেন না। পথ চলার সময় সংগীদের আগে দিতেন (এবং নিজে পেছনে থাকতেন)। কারো সাথে সাক্ষাত হলে তিনিই আগে সালাম দিতেন।
(১১) তিনি ছিলেন ‘খাতামুন নাবিয়্যিন’, নবীগণের মোহর বা সর্বশেষ নবী। তিনি ছিলেন মানুষের মাঝে প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী ও দানশীল, বাক্যালাপে সত্যবাদী, কোমন হৃদয়ের অধিকারী এবং সংগী-সাথী ও বন্ধুদের সাথে সম্মানের সাথে বসবাসকারী। যে কেউ তাঁকে প্রথমবারের মতো দেখেই প্রভাবান্বিত হয়ে পড়ত। যে ব্যক্তি তাঁর সাথে মিশত এবং তাঁর সম্পর্কে অবহিত হতে সে তাঁর প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন হয়ে যেত। তাঁর প্রশংসাকারী বলতো, তাঁর আগে বা পরে তাঁর মতো আমি আর কাউকে দেখিনি। তাঁর উপর আল্লাহর করুণা ও শান্তি বর্ষিত হোক।
(১২) চাঁদের বছর অনুযায়ী দুনিয়ার জীবনে তিনি ৬৩ বছর হায়াত পেয়েছিলেন। তিনি ৪০ বছরে নবুওতপ্রাপ্ত হন। এরপর মক্কায় ১৩ বছর মানুষকে আল্লাহর দ্বীনের দিকে, কালিমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহার দিকে দাওয়াত দেন। মক্কার মুশরিকরা যখন তাঁকে হত্যা করার ষড়যযন্ত্র করছিলো, তখন তিনি মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনাতে চলে যান। সেখান থেকে তিনি জীবনের বাকি ১০টি বছর আল্লাহর দ্বীনের জন্য উৎসর্গ করেন।
(১৩) জীবনের শেষের দিকে তাঁর কিছু (প্রায় ২০টির মতো) চুল পেকে সাদা হয়ে গিয়েছিলো। এটা দেখে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আ’নহু একদিন বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনিতো বার্ধক্যে পৌঁছে গেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “সুরা হুদ, সুরা ওয়াকিয়া, সুরা মুরসালাত, সুরা নাবা, সুরা তাকবীর – এ সুরাগুলো আমাকে বৃদ্ধ করে দিয়েছে। ”অর্থাৎ, এই সুরাগুলোতে বর্ণিত কিয়ামতের ভয়াবহতা, আখেরাতের কঠিন হিসাব-নিকাশ, জাহান্নামের কঠোর শাস্তি ইত্যাদি বিষয়ের ভীতিকর ও মর্মস্পর্শী বর্ণনা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম-কে দ্রুত বৃদ্ধ করে দিয়েছিলো। এই পৃথিবীতে বসবাসকারী এবং ভবিষ্যতে আগমনকারী সমস্ত মানুষের মাঝে শ্রেষ্ঠ, সমস্ত নবী এবং রাসূলদের সর্দার, ‘রাহমাতুল্লিল আলামীন’, জগতবাসীদের জন্যে রহমত স্বরূপ – মুহাম্মাদ, রাসুলু্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর চরিত্র সৌন্দর্য বর্ণনা করা এবং তাঁর যথাযথ প্রশংসা লিখা আমাদের মতো মানুষের

জন্যে সত্যিই কঠিন একটা ব্যপার। তাঁর ব্যপারে আমাদের কি করণীয়, সে ব্যপারে স্বয়ং আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লা আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, 

 إِنَّ اللَّهَ وَمَلٰئِكَتَهُ يُصَلّونَ عَلَى النَّبِىِّ ۚ يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنوا صَلّوا عَلَيهِ وَسَلِّموا تَسليمً 

নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর ফিরেশতাগণ নবীর প্রতি দরুদ পেশ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ পেশ করো এবং তাঁকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।”
[সুরা আহজাবঃ ৫৬]
আসুন আমরা সকলেই পড়িঃ
“আল্লাহুম্মা সাল্লি আ’লা মুহা’ম্মাদিও ওয়া-আ’লা আলি মুহা’ম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আ’লা ইব্রাহীমা ওয়া-আ’লা আলি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হা’মীদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আ’লা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া-আ’লা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারা-কতা আ’লা ইব্রাহীমা ওয়া-আ’লা আলি
ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ

***********************************