Showing posts with label লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ. Show all posts
Monday, May 16, 2016
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্- এর অর্থ, মাহাত্ম্য ও মর্যাদা।
আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতু।
بِسمِ اللَّهِ الرَّحمٰنِ الرَّحيمِ
পরম করুনাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি।
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু- এর অর্থ ও মাহাত্ব।
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু এ সংহ্মিপ্ত বাক্যটি দ্বীনের ভিত্তি ও বোনিয়াদ। ইসলাম ধর্মে এর রয়েছে বড় মর্যাদা ও মহান তাৎপর্য। এটি ইসলাম ধর্মের পাচটি মৌলিক বোনিয়াদ সমূহের সর্বপ্রথম বোনিয়াদ এবং ঈমানের সর্বোচ্চ শাখা। সাৎকার্য আল্লাহর দরবারে গৃহীত হওয়া না হওয়া এ কালেমার মৌখীক স্বীকৃতি দেওয়া এবং তদনুযায়ী আমল করার উপর নির্ভর করে। এ বাক্যটির সঠিক ও বিশুদ্ধ অর্থ যার দ্বিতীয় কোন ব্যাখ্যার অবকাশ নেই তা হলো, "আল্লাহ্ ব্যতীত সত্যিকারে কোন মা'বুদ বা উপাস্য নেই"। এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন সৃষ্টিকর্তা নেই, অথবা আল্লাহ্ ছাড়া আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের সহ্মম কেউ নেই, বা আল্লাহ্ ব্যতীত কেউ বিদ্যমান নেই। এ বাক্যটির দু'টি অংশ রয়েছে যথাঃ
১। "লা ইলাহা" এটি নেতিবাচক বা অস্বীকৃতিমূলক অংশ। এতে প্রত্যেক বস্তুর উপাস্য বা মা'বুদ হওয়ার যোগ্যতাকে অস্বীকার করা হয়েছে।
২। "ইল্লাল্লাহ্" এটি ইতিবাচক অংশ। যাতে শুধুমাত্র এক ও এককভাবে আল্লাহর জন্যই মা'বুদ হওয়ার উপযোক্ততাকে দৃড়ভাবে স্বীকার করা হয়েছে। অতএব আল্লাহ্ ব্যতীত কারো এবাদত করা যাবেনা। কোন প্রকার এবাদত আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো জন্য সম্পাদন করা বৈধ হবে না। যে ব্যক্তি এ কালেমার অর্থ অনুধাবন করে এবং তার অত্যাবশ্যকীয় বিধানগুলো সর্বপ্রকার শির্ক থেকে বিরত থাকে, একত্ববাদের স্বীকৃতি দিয়ে মেনে চলে, মুখে তার স্বীকৃতি দেয়, সাথে সাথে কালেমায় নিহিত বিষয়গুলোর উপর দৃঢ় বিশ্বাস ও প্রত্যয় রেখে তদানুযায়ী আমল করে, সেই প্রকৃত মুসলমান। আর যে অবিচল কোন আস্থা না রেখে তার উপর আমল করার ভান দেখায়, সে মুনাফিক ও কপট। আর যে কালেমার পরিপন্থী (যথা শির্ক) কাজ করে, সে মুনাফিক ও কাফের যদিও সে তা মুখে উচ্চারন করুক না কেন।
লা-ইলাহা ইল্লল্লাহ্ এর মর্যাদা ও মাহাত্ম্যঃ
এ কালেমার অনেক উচ্চ মর্যাদা ও মাহাত্ম্য এবং বিপুল সফল রয়েছে। নিম্নে কিঞ্চিত পেশ করা হলোঃ
(১) এ কালেমাটি দোযখের চিরস্থায়ী ও অনন্ত কালের ভয়াবহ শাস্তি থেকে মানুষকে নিষ্কৃতি দেয়, যদিও (গুনাহের কারনে সে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য) তাতে নিহ্মিপ্ত হয়। বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসটি তারই প্রমান। রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অর্থাৎ, "যে ব্যক্তি `লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্' এর স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তার অন্তরে যব পরিমান কল্যান আছে তাকে দোযখ থেকে বের করে আনা হবে। আর যে ব্যক্তি 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লা' এর উচ্চারন করেছে এবং তার অন্তরে গম পরিমান কল্যান আছে, তাকে দোযখ থেকে বের করে আনা হবে। আর সে ব্যক্তিকেও বের করে আনা হবে, যে এ বাক্যটি পড়েছে এবং তার অন্তরে অনু পরিমান কল্যান আছে"। (বুখারী)
(২) এ কালেমাটির জন্য মানুষ ও জ্বীন জাতিদ্বয়কে সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
وَما خَلَقتُ الجِنَّ وَالإِنسَ إِلّا لِيَعبُدونِ
"আমি জ্বীন ও মানুষকে অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করি নাই কেবল এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার এবাদত করবে"। (সূরা আয-যারীয়াত ৫৬)
(৩) এ কালেমাটি প্রচারের জন্যই যুগে যুগে অনেক রাসূল (সাঃ) প্রেরিত হয়েছেন, অবতির্ন হয়েছে আসমানি কিতাব সমূহ। আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা বলেনঃ
وَما أَرسَلنا مِن قَبلِكَ مِن رَسولٍ إِلّا نوحى إِلَيهِ أَنَّهُ لا إِلٰهَ إِلّا أَنا۠ فَاعبُدونِ
অর্থাৎ, "আমি তোমার পূর্বে যে রাসূলই প্রেরন করেছি, তাকে এ অহী দান করেছি যে, আমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই; অতএব তোমরা আমারই এবাদত কর"। (সূরা আম্বিয়া ২৫)
(৪) এ কালেমাটি সমস্ত রাসূলগনের দাওয়াতের এক অভিন্ন বিষয় ছিল। তারা সকলেই কালেমার দিকে আহ্বান করে স্বীয় জাতীকে বলতেন,
قالَ يٰقَومِ اعبُدُوا اللَّهَ ما لَكُم مِن إِلٰهٍ غَيرُهُ
"আল্লাহর এবাদত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন মা'বুদ নাই"। (সূরা আল-আ'রাফ ৭৩)
(৫) এ কালেমাটি হলো সর্বোত্তম যিকর। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগন সর্বোত্তম যে যিকরটি করতাম সেটি হলোঃ
لا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ
অর্থাৎ, "আল্লাহ্ ছাড়া সত্যিকারে কোন মা'বুদ নাই। গিনি একক তার কোন অংশিদার নেই"। (মুআত্তা)
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ এর শর্তাবলীঃ
আমরা যে কলেমাটি উচ্চারণ করে ইসলামের সুশীতল ছায়া তলে সমবেত হয়েছি, সে কালেমার এমন কিছু শর্তাবলী আছে, যা একত্রে আমাদের মধ্যে বর্তমান হলে এবং একটি শর্তেরও বিরোধিতা না করে এ সব গুলো দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতে পারলে প্রকৃত মুমিন বলে পরিগনিত হবো। নিম্নে সে শর্তাবলী সংহ্মিপ্ত ভাবে উল্লেখ করা হলোঃ
(১) ইলম (জ্ঞান)। কালেমার ইতিবাচক ও নেতিবাচক অর্থ এবং তার অবিচ্ছেদ্য জ্ঞান থাকা আবশ্যক। বান্দা যখন মহান প্রভুকে এক ও একক মা'বুদ বলে জানবে, তিনি ব্যতীরকে অন্য যে কোন সত্তার এবাদত করাকে ভ্রান্তি বলে বিশ্বাস করবে এবং সে জ্ঞান অনুযায়ী আমল করবে, সেই প্রকৃতার্থে কালেমার মর্ম ও তাৎপর্যের খাটি জ্ঞানী বলে গন্য হবে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
فَاعلَم أَنَّهُ لا إِلٰهَ إِلَّا اللَّهُ
অর্থাৎ, "হে নবী! জেনে রাখো! আল্লাহ্ ছাড়া কোন উপাস্য নেই"। (সূরা মুহাম্মদ ১৯)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
অর্থাৎ, "যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই-এর জ্ঞান রেখে মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে"। (মুসলিম)
(২) দৃঢ় বিশ্বাস। এ কালেমার মৌখিক স্বীকৃতি এমন দৃঢ় বিশ্বাস ও অবিচল প্রত্যয় সহকারে দিতে হবে যাতে থাকবে অন্তরের প্রশান্তি। জ্বীন ও মানব শয়তানের বপন করা কোন প্রকারের সন্দেহের বীজ সেখানে থাকবে না। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
إِنَّمَا المُؤمِنونَ الَّذينَ ءامَنوا بِاللَّهِ وَرَسولِهِ ثُمَّ لَم يَرتابوا
অর্থাৎ, "প্রকৃত পহ্মে মুমিন তো তারাই যারা আল্লাহ্ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে। অতঃপর কোন সন্দেহ পোষন করে না"। (সূরা আল হুজরাত ১৫)
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ অর্থাৎ, "আমি সাহ্ম্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া সত্যিকারে কোন মা'বুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। যেকোন বান্দা এ দু'টি বাক্যের সন্দেহমুক্ত বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর দরবারে উপস্হিত হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে"। (মুসলিম)
(৩) গ্রহন। এ কালেমার প্রত্যেকটি দাবিকে মুখে ও অন্তরে সাদরে গ্রহন করতে হবে। অতএব অতীত ও বর্তমানের বিভিন্ন ঘটনাবলী কোরআন ও হাদিসে এসেছে তা বিশ্বাস করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ ভাবে যা বর্নিত হয়েছে, তার প্রতি ঈমান আনতঃ প্রত্যেকটিকে গ্রহন করে নিতে হবে। কোন কিছুকেই প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
ءامَنَ الرَّسولُ بِما أُنزِلَ إِلَيهِ مِن رَبِّهِ وَالمُؤمِنونَ ۚ كُلٌّ ءامَنَ بِاللَّهِ وَمَلٰئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لا نُفَرِّقُ بَينَ أَحَدٍ مِن رُسُلِهِ ۚ وَقالوا سَمِعنا وَأَطَعنا ۖ غُفرانَكَ رَبَّنا وَإِلَيكَ المَصيرُ
অর্থাৎ, "রাসূল সেই হেদায়াতকেই বিশ্বাস করেছেন, যা তার পরোয়ারদিগারের নিকট হতে তার প্রতি নাযিল হয়েছে।আর যারা এই রাসূলের প্রতি বিশ্বাস করেছে তারাও সেই হেদায়াতকে মন দিয়ে মেনে নিয়েছে।সকলেই আল্লাহ্, ফেরেস্তা, তার কিতাব এবং তার রাসূলগনকে বিশ্বাস করে ও মানে এবং তাদের কথা এই, আমরা আল্লাহর রাসূলদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না। আমরা নির্দেশ শুনেছি এবং বাস্তব হ্মেত্রে মেনে নিয়েছি। হে আল্লাহ্! আমরা তোমার নিকট গুনাহ মাফের জন্য পার্থনা করি, আমাদেরকে তোমার দিকেই ফিরে য়েতে হবে"। (সূরা আল বাকারাহ্ ২৮৫)
শরীয়তের কোন বিধান বা তার নির্ধারিত শাস্তি ও দন্ডবিধির উপর আপত্তি ও অভিযোগ উত্থাপন করা, বা তা প্রত্যাখ্যান করা ঈমানের সমস্ত দাবিকে গ্রহন না করারই শামিল। যেমন কেউ কেউ চুরি ও ব্যভিচারের দন্ড-বিধি, বহুবিবাহ প্রথা ও উত্তরাধীকার বিধি বিধান প্রভৃতির উপর চরম ধৃষ্টতার সাথে তথাকথিত অসার অভিযোগ খাড়া করে থাকে। আল্লাহ তা' আলা বলেনঃ
وَما كانَ لِمُؤمِنٍ وَلا مُؤمِنَةٍ إِذا قَضَى اللَّهُ وَرَسولُهُ أَمرًا أَن يَكونَ لَهُمُ الخِيَرَةُ مِن أَمرِهِم
অর্থাৎ, "কোন মুমিন পূরুষ ও কোন মুমিন স্ত্রীলোকের এই অধিকার নাই যে, আল্লাহ্ ও তার রাসূল যখন কোন বিষয়ে ফয়সালা করে দিবেন, তখন সে নিজেই সেই ব্যাপারে নিজে কোন ফায়সালা করবার ইখতিয়ার রাখবে"। (সূরা আহজাব ৩৬)
(৪) আনুগত্য। এর অর্থ মেনে নেয়া ও আনুগত্য করা। অর্থাৎ কালেমা যে সমস্ত বিষয়কে আরোপ করে, তা স্বীকৃতি দেওয়া। আর আনুগত্য হলো কর্মের মাধ্যমে তার অনুসরন করা। তাই কেউ "লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্" এর অর্থ বুঝলো, এর প্রতি বিশ্বাস স্হাপন করলো, এবং মৌখিক স্বীকৃতিও দিল, কিন্তু সে জ্ঞান অনুযায়ী আমল করলো না, করলো না আনুগত্য ও অনুসরণ, এমতাবস্থায় তার সেই জ্ঞান, বিশ্বাস ও মৌখিক স্বীকৃতি তার কোন উপকারে আসবে না। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
وَأَنيبوا إِلىٰ رَبِّكُم وَأَسلِموا لَهُ
অর্থাৎ, "ফিরে এসো তোমার রবের দিকে এবং অনুগত হও তার"। আল্লাহ্পাক আরো বলেনঃ
فَلا وَرَبِّكَ لا يُؤمِنونَ حَتّىٰ يُحَكِّموكَ فيما شَجَرَ بَينَهُم ثُمَّ لا يَجِدوا فى أَنفُسِهِم حَرَجًا مِمّا قَضَيتَ وَيُسَلِّموا تَسليمًا
অর্থাৎ, " হে মুহাম্মদ! তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা কিছুতেই মুমিন হতে পারে না, যতহ্মণ না তারা তাদের পারস্পরিক মতভেদের বিষয় ও ব্যপারসমূহে তোমাকে বিচারপতি রুপে মেনে নবে। অতঃপর তুমি যাই ফয়সালা করবে, তারা নিজেদের মনে তৎসম্পর্কে কোন কুন্ঠাবোধ করবে না বরং তা সর্বান্তঃকরনে মেনে নেবে "। (সূরা নিসা ৬৫)
(৫) সত্যানিষ্ঠা। সে নিজের ঈমান ও মৌখিক ধর্ম বিশ্বাসে সত্যবাদী হবে। আল্লাহ্ তা' আলা বলেনঃ
يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكونوا مَعَ الصّٰدِقينَ
অর্থাৎ, " হে ঈমানদার লোকেরা! আল্লাহ্কে ভয় কর এবং সত্যাদর্শ লোকদের সঙ্গী হও "। (সূরা তাওবাহ্ ১১৯) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
অর্থাৎ, "যে ব্যক্তি অন্তর থেকে সত্যানিষ্ঠা সহকারে 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ ' বললো, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে"। (মুসনাদে আহমদ) কেউ যদি এ কালেমাটি মৌখিক স্বীকৃতি দেয় আর অন্তরে তার দাবিকে প্রত্যাখ্যান ও অস্বীকার করে, তাহলে তার মৌখিক স্বীকৃতি তাকে মুক্তি দিতে পারবে না। বরং সে মুনাফিকের অন্থর্ভুক্ত হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনিত বিষয়কে বা তার কোন কিছুকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা সত্য নিষ্ঠার পরিপন্থী বস্তু। কেননা আল্লাহ্ তা'আলা নিজের আনুগত্য নির্দেশ প্রদানের সঙ্গে রাসূলের আনুগত্য ও তার সত্যায়ন করাকে সংযুক্ত করেছেন। যেমন আল্লাহ্ বলেনঃ
قُل أَطيعُوا اللَّهَ وَأَطيعُوا الرَّسولَ
অর্থাৎ, "বলো, আল্লাহর অনুগত হও এবং রাসূলের অনুসরনকারী হও"। (সূরা নূর ৫৪)
(৬) ইখলাস। বান্দা নিয়ত তথা সংকল্পকে শির্কের সমস্ত পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত রেখে স্বীয় আমলকে স্বচ্ছ রাকবে।সুতরাং তার সমস্ত কাজ ও কথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের নিমিত্তে হবে। তাতে লোক দেখানোর উদ্দেশ্য বা খ্যাতি অর্জনের অভিলাষ অথবা কোন লাভের আকাঙ্হ্মা কিংবা ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধ করার সাধ অথবা প্রকাশ্য বা গোপনীয় কোন প্রবৃত্তির সিদ্ধি, আল্লাহর হেদায়াতকে অপেহ্মা করে কোন ব্যক্তি মাযহাব বা দলের অত্যাধিক ভালবাসার বশবর্তী হয়ে আমল করার প্রবনতা থাকতে পারে না। বরঞ্চ সকল কাজ আল্লাহর সন্তুষ্ট বিধান এবং পরলৌকিক উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য হতে হবে। কোন মানুষের বিনিময় প্রদান বা কৃতজ্ঞতা পাওয়ার প্রতি ভ্রুহ্মেপও করবে না। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
أَلا لِلَّهِ الدّينُ الخالِصُ
অর্থাৎ, "সাবধান! বিশুদ্ধ আনুগত্য একমাত্র আল্লাহরই হক"। (সূরা যূমার ৩) আল্লাহ আরো বলেনঃ
وَما أُمِروا إِلّا لِيَعبُدُوا اللَّهَ مُخلِصينَ لَهُ الدّينَ
অর্থাৎ, "আর তাদেরকে এটা ব্যতীত কোন নির্দেশ দেওয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহর এবাদত করবে, নিজেদের দ্বীনকে একমাত্র তারই জন্য খালিস করবে"। (সূরা বায়্যিনাহ
(৫) বুখারী ও মুসলিম শরীফে ইতবান (রাঃ) থেকে একটি হাদিস বর্নিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
(৫) বুখারী ও মুসলিম শরীফে ইতবান (রাঃ) থেকে একটি হাদিস বর্নিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
অর্থাৎ, "যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য "লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ" বলল, আল্লাহ্ তাকে দোযখের উপর হারাম করে দেন"।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ-এর অর্থঃ
এ বাক্যটির অর্থ হলো, মৌখিক ও আন্তরিক ভাবে স্বীকার করা যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল মানবকুলের প্রতি প্রেরিত রাসূল। আর এ স্বীকৃতির দাবি হলো, তার নির্দেশাবলীর আনুগত্য করা। অতীত ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তার দেওয়া সংবাদ সত্য বলে বিশ্বাস করা। তিনি যেসব কাজ নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা। আর আল্লাহর এবাদত তারই প্রদত্ত বিধি-বিধান অনুযায়ী সম্পাদন করা।
এ বাক্যটির দু'টি অংশ রয়েছে যথাঃ
(১) মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা।
(২) মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল।
আর এ অংশ দু'টি তার ব্যপারে বাড়াবাড়ি করার ব্যপারে অস্বীকৃতি ঘোষনা করে। তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আর এই উভয় গুনের দ্বারাই তিনি সৃষ্টির সৃষ্ট মানব। এখানে (আবদ্) এর অর্থ হলো অধীনস্হ বান্দা অর্থাৎ তিনি মানুষ। অন্যান্য সৃষ্টির ন্যায় তিনিও সৃষ্ট। মানুষ হিসেবে তাদের উপরে যা প্রযোজ্য তার উপরেও সমভাবে তা প্রযোজ্য। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
قُل إِنَّما أَنا۠ بَشَرٌ مِثلُكُم
অর্থাৎ, "হে নবী বলে দাও, আমি তোমাদের মতনই একজন মানুষ। (সূরা কাহ্ফ ১১০) আল্লাহ্ তা'আলা আরো বলেনঃ
الحَمدُ لِلَّهِ الَّذى أَنزَلَ عَلىٰ عَبدِهِ الكِتٰبَ وَلَم يَجعَل لَهُ عِوَجا
অর্থাৎ, "সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি তার বান্দার উপর কিতাব নাযিল করেছেন এবং তাতে কোনরুপ বক্রতার অবকাশ রাখেন নাই"। (সূরা কাহ্ফ ১) আর "রাসূল" এর অর্থ হলো তিনি সকল মানব সম্প্রদায়কে আল্লাহর প্রতি আহ্বানকারী, সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা হিসাবে প্রেরিত হয়েছিলেন। এই উভয় গুনের সাহ্ম প্রদান তার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করাকে অস্বীকার করে। অনেক মানুষ যারা নিজেকে নবীর উম্মত বলে দাবি করে, তার ব্যাপারে অতিরঞ্জিত ও বাড়াবাড়ি করতঃতাকে বান্দার মর্যাদা থেকে সরিয়ে মা'বুদের মর্যাদায় ভূষিত করে থাকে। তাই আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার নিকট ফরিয়াদ ও প্রয়োজন পূরনের প্রার্থনা এবং বিপদ মুক্তির কামনা করে থাকে। অথচ। এসব কেবল মাত্র আল্লাহরই হ্মমতাধীন। আবার অনেকে তার রিসালাতকে অস্বীকার করে অথবা তার অনুসরনে বাড়াবাড়ি করে এবং তার প্রতি প্রেরিত বিধানের পরিপন্থী উক্তির উপর নির্ভর করে।
আমাদের সকলকে এ কালেমার অর্থ বোঝার তৌফিক দান করুন, আমিন।
Subscribe to:
Posts
(
Atom
)