নামাজ বেহেস্তের চাবী

মোঃবাহাদুর হোসেন বাদল

Sunday, May 8, 2016

জান্নাতে নারীরা কেমন থাকবে?

No comments :

জান্নাত জাহান্নাম।

ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করতে এখানে ক্লিক করুন।

 আল্লাহর ওপর ভরসা করে শুরু করা যাকঃ
কোরআন ও হাদিসের আলোকে জান্নাতে নারীরা কেমন থাকবে?
ফায়দা¬ ১
www.bahadurhossen24.comআমাদের উচিত হবে নারীরা জান্নাতে তাদের জন্য অপেক্ষমান নেকী ও নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তাদেরকে হতোদ্যম না করা। কারণ, মানব প্রকৃতি তার আগামী ও ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে পছন্দ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সাহাবা রাদিআল্লাহু আনহুমের জান্নাত ও জান্নাতের নেয়ামত সংক্রান্ত এ ধরনের প্রশ্ন শুনে অপছন্দ করেন নি। যেমন তাঁরা জিজ্ঞেস করেছেন। যেমন আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
‘আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, জান্নাত সম্পর্কে আমাদের ধারণা দিন। কী দিয়ে জান্নাত নির্মিত হয়েছে? তিনি বললেন, ‘তার দেয়ালের একটি করে ইট সোনা দিয়ে এবং আরেকটি ইট রুপা দিয়ে নির্মিত। তার সিমেন্ট হলো উন্নত মৃগনাভী, তার প্লাস্টার ইয়াকূত ও মোতি এবং তার মাটি ওয়ারছ (নামের সুগন্ধি) ও জাফরান। যারা এতে প্রবেশ করবে তারা অমর হবে; কখনো মারা যাবে না। সুখী হবে; অসুখী হবে না। তাদের যৌবন শীর্ণ হবে না। আর তাদের কাপড় ছিন্নভিন্ন করা হবে না।’ [মুসনাদ আহমদ : ৯৭৪৪; মুসনাদ দারেমী : ২৮৬৩]
আরেকবার তাঁরা জিজ্ঞেস করেন, যেমনটি বর্ণিত হয়েছে আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞেস করা হলো, জান্নাতে আমরা কি আমাদের স্ত্রীদের কাছে পৌঁছতে পারব? তিনি বললেন, ‘কোনো কোনো ব্যক্তি (জান্নাতে) দিনে একশত জন কুমারীর কাছে পৌঁছবে।’ [তাবরানী, আল-মু‘জামুল কাবীর : ১৩০৫]
ফায়দা- ২
মানব মন বলতেই- চাই তা নর বা নারী হোক- জান্নাত ও জান্নাতের মনোরম নেয়ামতসমূহের আলোচনা শুনতেই তা আগ্রহী ও প্রফুল্ল হয়ে ওঠে। নেক আমল বাদ দিয়ে কেবল স্বপ্ন বিলাস না হলে তা উত্তম বৈ কি। কারণ আল্লাহ তা‘আলা মু‘মিনদের উদ্দেশে বলেন,
۞وَتِلكَ الجَنَّةُ الَّتى أورِثتُموها بِما كُنتُم تَعمَلونَ
‘আর এটিই জান্নাত, নিজেদের আমলের ফলস্বরূপ তোমাদেরকে এর অধিকারী করা হয়েছে।’ [সূরা আয্-যুখরুফ, আয়াত : ৭২]
তাই দেখা যায় সাহাবায়ে কিরাম রাদিআল্লাহু আনহুম জান্নাতের বিবরণ শুনে নিজেদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। আর আমলের মাধ্যমে সেগুলোকে কার্যে পরিণত করেছেন।
ফায়দা¬ ৩
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
 ۞ وَسارِعوا إِلىٰ مَغفِرَةٍ مِن رَبِّكُم وَجَنَّةٍ عَرضُهَا السَّمٰوٰتُ وَالأَرضُ أُعِدَّت لِلمُتَّقينَ
‘আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।’ {সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৩}
এ আয়াত থেকে অনুধাবিত হয় যে জান্নাতকে প্রস্তুত করা হয়েছে মুক্তাকীদের জন্য। জান্নাত ও জান্নাতের নেয়ামতসমূহ নারী বাদে কেবল পুরুষদের জন্য নয়। বরং তা উভয় শ্রেণীর মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এ বিষয়টিকে দ্ব্যর্থহীন করে আল্লাহ সুবহানুহু ওয়া তা‘আলা বলেন,
وَمَن يَعمَل مِنَ الصّٰلِحٰتِ مِن ذَكَرٍ أَو أُنثىٰ وَهُوَ مُؤمِنٌ فَأُولٰئِكَ  يَدخُلونَ الجَنَّةَ وَلا يُظلَمونَ نَقيرًا
‘আর পুরুষ কিংবা নারীর মধ্য থেকে যে নেককাজ করবে এমতাবস্থায় যে, সে মুমিন, তাহলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি খেজুরবীচির আবরণ পরিমাণ যুলমও করা হবে না।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ১২৪}
ফায়দা¬ ৪
নারীদের কর্তব্য হবে জান্নাতে প্রবেশের বিস্তারিত তথ্যানুসন্ধান আর এ সংক্রান্ত অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নের তুবড়ি না ছুটানো। যেমন : জান্নাতে তাদের কী করা হবে, তারা কোথায় থাকবে ইত্যাকার প্রশ্ন। ভাবখানা এমন যে সে যেন কোনো জীবননাশা মরুতে পা রাখতে যাচ্ছে !
তার জন্য এ কথা জানাই যথেষ্ট হওয়া উচিত যে শুধু জান্নাতে প্রবেশের বদৌলতেই তার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাবৎ দুঃখ ও গ্লানী দূর হয়ে যাবে। সেসব রূপান্তরিত হবে অপার্থিব সৌভাগ্য এবং অনন্ত শান্তিতে। জান্নাত সম্পর্কে আল্লাহর এ বিবরণই তার জন্য যথেষ্ট হতে পারে, যেখানে তিনি ইরশাদ করেন :
لا يَمَسُّهُم فيها نَصَبٌ وَما هُم مِنها بِمُخرَجينَ
‘সেখানে তাদেরকে ক্লান্তি স্পর্শ করবে না এবং তারা সেখান থেকে বহিষ্কৃতও হবে না।’ {সূরা আল-হিজর, আয়াত : ৪৮}
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
‘স্বর্ণখচিত থালা ও পানপাত্র নিয়ে তাদেরকে প্রদক্ষিণ করা হবে, সেখানে মন যা চায় আর যাতে চোখ তৃপ্ত হয় তা-ই থাকবে এবং সেখানে তোমরা হবে স্থায়ী।’ {সূরা আয্-যুখরুফ, আয়াত : ৭১}
এসবের আগে তার জন্য যথেষ্ট হতে পারে জান্নাতের অধিবাসীদের সম্পর্কে আল্লাহর এই বাণী, যেখানে তিনি বলেন :
رَضِىَ اللَّهُ عَنهُم وَرَضوا عَنهُ ۚ ذٰلِكَ الفَوزُ العَظيمُ
‘আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। এটা মহাসাফল্য।’ {সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ১১৯}
ফায়দা¬ ৫
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেখানেই জান্নাতের নেয়ামতরাজির আলোচনা করেন, যার মধ্যে রয়েছে অসংখ্য পদের সুখাদ্য, অনির্বচনীয় সুন্দর দৃশ্যাবলি, সুরম্য সব আবাস এবং অনিন্দ্য বস্ত্রসামগ্রী, তার সবই নারী-পুরুষ উভয় শ্রেণীর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। পূর্বে উল্লেখিত নিয়ামতসম্ভার সবাই ভোগ করবে জান্নাতে।
বাকি থাকে কেবল এই প্রশ্ন, আল্লাহ তো পুরুষদেরকে ডাগর চোখ বিশিষ্ট হূর ও অপরূপা নারীদের কথা বলে জান্নাতের প্রতি আগ্রহী ও অনুপ্রাণিত করেছেন। অথচ নারীদের প্রলুব্ধকর এমন কিছু বলেন নি। নারীরা সাধারণ এরই কারণ জানতে চান।এর জবাবে আমি বলি:
لا يُسـَٔلُ عَمّا يَفعَلُ وَهُم يُسـَٔلونَ
প্রথমত আল্লাহর এই বাণীটি আমাদের মাথায় রাখতে হবে: ‘তিনি যা করেন সে ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করা যাবে না; বরং তাদেরকেই প্রশ্ন করা হবে।’ {সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত : ২৩} তবে শরী‘আতের সুনির্দিষ্ট উদ্ধৃতি এবং ইসলামের মূলনীতির আলোকে এর হিকমত ও তাৎপর্য অনুধাবনের মানসিকতায় কোনো দোষ নেই। এটা সুবিদিত যে নারী প্রকৃতি বলতেই লজ্জার ভূষণে শোভিত। এ জন্যই আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সে নেয়ামতের বর্ণনা দিয়ে জান্নাতের প্রতি লালায়িত করেন নি যা তাদেরকে লজ্জায় আরক্ত করে।
 এটাও সুবিদিত যে নরের প্রতি নারীর আকর্ষণ ঠিক তেমন নয় যেমন নারীর প্রতি নরের আকর্ষণ। তাই দেখা যায় আল্লাহ জান্নাতে নারীর কথা বলে পুরুষদের আগ্রহী করেছেন যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নোক্ত বাণীকেও সপ্রমাণ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘আমার পরে আমি পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে ক্ষতিকর আর কিছু রেখে যাই নি।’ [বুখারী : ৫০৯৬; মুসলিম : ৭১২২]
পক্ষান্তরে পুরুষের প্রতি আকর্ষণের চেয়েও নারীদের আকর্ষণ বেশি অলংকার ও পোশাকের সৌন্দর্যের প্রতি। কারণ এটি তাদের সহজাত প্রকৃতি। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
أَوَمَن يُنَشَّؤُا۟ فِى الحِليَةِ وَهُوَ فِى الخِصامِ غَيرُ مُبينٍ
‘আর যে অলংকারে লালিত পালিত হয়……।’ {সূরা আয্-যুখরুফ, আয়াত : ১৮} শায়খ উসাইমীন [রহ] বলেন, আল্লাহ তা‘আলা স্ত্রীদের কথা উল্লেখ করেছেন স্বামীদের জন্য। কারণ, স্বামীই হলেন স্ত্রীর কামনাকারী এবং তার প্রতি মোহিত। এ জন্যই জান্নাতে পুরুষদের জন্য স্ত্রীদের কথা বলা হয়েছে আর নারীদের জন্য স্বামীদের ব্যাপারে নিরবতা অবলম্বন করা হয়েছে। কিন্তু এর দাবী এই নয় যে তাদের স্বামী থাকবে না। বরং তাদের জন্যও আদম সন্তানদের মধ্য থেকে স্বামী থাকবে।
ফায়দা¬ ৬
দুনিয়ায় নারীদের অবস্থা নিম্নোক্ত প্রকারগুলোর বাইরে নয় :
১. হয়তো সে বিয়ের আগেই মারা যাবে।
২. কিংবা সে মারা যাবে তালাকের পর অন্য কারো সাথে বিয়ের আগে।
৩. কিংবা সে বিবাহিতা কিন্তু –আল্লাহ রক্ষা করুন- তার স্বামী তার সঙ্গে জান্নাতে যাবে না।
৪. কিংবা সে তার বিয়ের পরে মারা যায়।
৫. কিংবা তার স্বামী মারা গেল আর সে আমৃত্যু বিয়ে ছাড়াই রইল।
৬. কিংবা তার স্বামী মারা গেল। তারপর সে অন্য কাউকে বিয়ে করল।
দুনিয়াতে নারীদের এ কয়টি ধরনই হতে পারে। আর এসবের প্রত্যেকটির জন্যই জান্নাতে স্বতন্ত্র অবস্থা রয়েছে :
(১) যে নারী বিয়ের আগে মারা গেছেন আল্লাহ তাকে জান্নাতে দুনিয়ার কোনো পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দেবেন। কারণ আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
‘কিয়ামতের দিন যে দলটি সর্বপ্রথম জন্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের চেহারা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জ্বল; আর তৎপরবর্তী দলের চেহারা হবে আসমানে মুক্তার ন্যায় ঝলমলে নক্ষত্র সদৃশ উজ্জ্বল। তাদের প্রত্যেকের থাকবে দু’জন করে স্ত্রী, যাদের গোশতের ওপর দিয়েই তাদের পায়ের গোছার ভেতরস্থ মজ্জা দেখা যাবে। আর জান্নাতে কোনো অবিবাহিত থাকবে না।’ [মুসলিম : ৭৩২৫]
শায়খ উসাইমীন বলেন, যদি ইহকালে মহিলার বিয়ে না হয়ে থাকে তবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে এমন একজনের সঙ্গে বিয়ে দেবেন যা দেখে তার চোখ জুড়িয়ে যাবে। কারণ, জান্নাতের নেয়ামত ও সুখসম্ভার শুধু পুরুষদের জন্য নয়। বরং তা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য বরাদ্দ। আর জান্নাতের নিয়ামতসমূহের একটি এই বিয়ে।
(২) তালাক প্রাপ্ত হয়ে আর বিয়ে না করে মারা যাওয়া মহিলার অবস্থাও হবে অনুরূপ।
(৩) একই অবস্থা ওই নারীর, যার স্বামী জান্নাতে প্রবেশ করেন নি। শায়খ উসাইমীন বলেন, ‘মহিলা যদি জান্নাতবাসী হন আর তিনি বিয়ে না করেন কিংবা তাঁর স্বামী জান্নাতী না হন, সে ক্ষেত্রে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করলে সেখানে অনেক পুরুষ দেখতে পাবেন যারা বিয়ে করেন নি।’ অর্থাৎ তাদের কেউ তাকে বিয়ে করবেন।
(৪) আর যে নারী বিয়ের পর মারা গেছেন জান্নাতে তিনি সেই স্বামীরই হবেন যার কাছ থেকে ইহলোক ত্যাগ করেছেন।
(৫) যে নারীর স্বামী মারা যাবে আর তিনি পরবর্তীতে আমৃত্যু বিয়ে না করবেন, জান্নাতে তিনি এ স্বামীর সঙ্গেই থাকবেন।
(৬) যে মহিলার স্বামী মারা যায় আর তিনি তার পরে অন্য কাউকে বিয়ে করেন, তাহলে তিনি যত বিয়েই করুন না কেন জান্নাতে সর্বশেষ স্বামীর সঙ্গী হবেন। কারণ, আবূ দারদা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘মহিলা তার সর্বশেষ স্বামীর জন্যই থাকবে।’ [জামে‘ ছাগীর : ৬৬৯১; আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীস আস-সাহীহা : ৩/২৭৫]
হুযায়ফা রাদিআল্লাহু আনহু তাঁর স্ত্রীর উদ্দেশে বলেন,
‘যদি তোমাকে এ বিষয় খুশী করে যে তুমি জান্নাতে আমার স্ত্রী হিসেবে থাকবে তবে আমার পর আর বিয়ে করো না। কেননা জান্নাতে নারী তার সর্বশেষ দুনিয়ার স্বামীর সঙ্গে থাকবেন। এ জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীদের জন্য অন্য কারো সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে জড়ানো হারাম করা হয়েছে। কেননা তাঁরা জান্নাতে তাঁরই স্ত্রী হিসেবে থাকবেন।’ [বাইহাকী, আস-সুনান আল-কুবরা : ১৩৮০৩]
মাস’আলা : কেউ কেউ জিজ্ঞেস করেন, জানাযার দু‘আয় এসেছে আমরা যেমনটি বলে থাকি,
‘আর তার স্বামীর পরিবর্তে তাকে আরও উত্তম স্বামী দান করুন’। এর আলোকে তিনি যদি বিবাহিতা হন তাহলে আমরা কিভাবে তার জন্য এ দু‘আ করি? কারণ আমরা জানি, দুনিয়াতে তার স্বামী যিনি হবেন জান্নাতে তিনিই তার স্বামী থাকবেন? আর যদি তার বিয়ে না হয় তবে তার স্বামী কোথায়?
শায়খ ইবন উসাইমীনের ভাষায় এর জবাব :
যদি মহিলা বিবাহিতা না হন তবে দু‘আর উদ্দেশ্য হবে ‘তার জন্য বরাদ্দ পুরুষ’। আর যদি বিবাহিতা হন তবে তার জন্য আরও উত্তম স্বামীর উদ্দেশ্য হবে ‘দুনিয়ার স্বামীর চেয়ে গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্যে উত্তম স্বামী’। কারণ, বদল দুই ধরনের।এক হলো সত্তার বদল। যেমন কেউ ছাগলের বিনিময়ে উট কিনল। দুই হলো গুণের বদল। যেমন আপনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যক্তির কুফরকে ঈমানে বদলে দিয়েছেন। এখানে কিন্তু ব্যক্তি একইজন। পরিবর্তন কেবল তার বৈশিষ্ট্যে। আল্লাহ তা‘আলার বাণীতেও আমরা দৃষ্টান্ত দেখতে পাই। ইরশাদ হচ্ছেঃ
يَومَ تُبَدَّلُ الأَرضُ غَيرَ الأَرضِ وَالسَّمٰوٰتُ ۖ وَبَرَزوا لِلَّهِ الوٰحِدِ القَهّارِ
‘যেদিন এ যমীন ভিন্ন যমীনে রূপান্তরিত হবে এবং আসমানসমূহও। আর তারা পরাক্রমশালী এক আল্লাহর সামনে হাযির হবে।’ {সূরা ইবরাহীম, আয়াত : ৪৮}
আয়াতে উল্লেখিত যমীন বা ভূমি কিন্তু একই থাকবে। তবে তা কেবল প্রলম্বিত হয়ে যাবে। তেমনি আসমানও থাকবে সেটিই কিন্তু তা বিদীর্ণ হয়ে যাবে।
ফায়দা¬ ৭
আব্দুল্লাহ ইবন ওমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার ঈদের সালাতে খুতবায় নারীদের উদ্দেশে বলেন,
‘হে নারী সম্প্রদায়, তোমরা বেশি বেশি সদকা করো। কেননা, আমি জাহান্নামের অধিবাসী বেশি তোমাদের দেখেছি।’ মহিলারা বললেন, কেন হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, ‘তোমরা অধিকহারে অভিশাপ দাও এবং স্বামীর অকৃজ্ঞতা দেখাও। বুদ্ধিমান পুরুষকে নির্বুদ্ধি বানাতে অল্প বুদ্ধি ও খাটো দীনদারির আর কাউকে তোমাদের চেয়ে অধিক পটু দেখিনি।’ তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের জ্ঞান ও দীনদারির ঘাটতি কী? তিনি বললেন, ‘মহিলাদের সাক্ষী কি পুরুষদের সাক্ষীর অর্ধেক নয়?’ তাঁরা বললেন, জী, হ্যাঁ। তিনি বললেন, ‘এটিই তাদের জ্ঞানের অল্পতা। যখন তাদের মাসিক শুরু হয় তখন কি তারা সালাত ও সাওম (রোজা) বাদ দেয় না?’ তাঁরা বললেন, জী, হ্যাঁ। তিনি বললেন, ‘এটিই তাদের দীনদারিতে স্বল্পতা।’ [বুখারী : ৩০৪]
আরেক হাদীসে বলা হয়েছে, ইমরান ইবন হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘জান্নাতের সবচেয়ে কম অধিবাসী হবে নারী।’ [মুসলিম : ৭১১৮; মুসনাদ আহমদ : ১৯৮৫০]
অন্যদিকে আরেক সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে জান্নাতে দুনিয়াবাসীর স্ত্রী হবে তার দুনিয়ার স্ত্রী থেকে দু’জন।
যেমন ইমাম মুসলিম রহিমাহুল্লাহ বলেন, আমার কাছে আমর নাকেদ ও ইয়াকূব ইবন ইবরাহীম দাওরাকী ইবন উলাইয়া থেকে বর্ণনা করেন, আর শব্দগুলো ইয়াকূবের। উভয়ে বলেন, আমাদের কাছে ইসমাঈল ইবন উলাইয়া বর্ণনা করেন,
আমাদেরকে আইয়ূব মুহাম্মদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, জান্নাতে পুরুষ না নারীর সংখ্যা বেশি হবে তা নিয়ে তারা পরস্পর গর্ব বা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তখন আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, আবুল কাসেম (রাসূলুল্লাহ) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেন নি, ‘কিয়ামতের দিন যে দলটি সর্বপ্রথম জন্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের চেহারা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জ্বল; আর তৎপরবর্তী দলের চেহারা হবে আসমানে মুক্তার ন্যায় ঝলমলে নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বল। তাদের প্রত্যেকের থাকবে দু’জন করে স্ত্রী যাদের গোশতের ওপর দিয়েই তাদের পায়ের গোছার ভেতরস্থ মজ্জা দেখা যাবে। আর জান্নাতে কোনো অবিবাহিত থাকবে না।’ [মুসলিম : ৭৩২৫]
ইমাম মুসলিম রহ. আরও বলেন, আমার কাছে ইবন আবী উমর বর্ণনা করেন, তাঁর কাছে সুফইয়ান আর সুফইয়ান ইবন সীরীন থেকে বর্ণনা করেন, পুরুষ ও নারীদের মধ্যে কারা বেশি জান্নাতী হবে এ নিয়ে নারী ও পুরুষদের মধ্যে তর্ক শুরু হলো। তারা আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহুর কাছে গিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলেন। তিনি তাঁদের উদ্দেশে বললেন, আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,..। অতপর তিনি ইবন উয়াইনা বর্ণিত (পূর্বোক্ত) বর্ণনাটি উদ্ধৃত করেন।
এ কারণে আলিমগণ এই হাদীসগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানে নানা মত ব্যক্ত করেছেন। অর্থাৎ নারীরা কি অধিকাংশে জান্নাতে নাকি জাহান্নামে যাবে? জান্নাতে নারীর সংখ্যা বেশি হবে না জাহান্নামে?
কোনো কোনো আলিম বলেছেন, নারীরা অধিকাংশ জান্নাতবাসী হবে। আবার জাহান্নামের অধিবাসীর অধিকাংশও হবে নারী। কেননা কাযী ‘ইয়ায রহ. বলেন, আদম সন্তানের মধ্যে অধিকাংশই নারী।
অনেকে বলেছেন,পূর্বোক্ত হাদীসগুলোর ভিত্তিতে বুঝা যায়, জাহান্নামের অধিবাসীদের সিংহভাগহই হবেন নারী। তেমনি ‘ডাগর চোখবিশিষ্ট হূর’দের যোগ করলে জান্নাতের অধিকাংশ অধিবাসীও হবেন নারী।
অন্য আরেকদল আলিম বলেছেন, হ্যাঁ শুরুতে নারীরাই হবেন জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ। পরবর্তীতে মুসলিম নারীদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর জান্নাতে তারাই হবেন সংখ্যাগুরু।
‘হে নারী সম্প্রদায়, তোমরা বেশি বেশি সদকা করো। কেননা, আমি তোমাদের বেশি জাহান্নামের অধিবাসী দেখেছি।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ বাণীর ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন,
‘হতে পারে জাহান্নামে নারীদের সংখ্যা বেশি হবার বিষয়টি তারা জান্নাতে প্রবেশের আগের কথা। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলনেওয়ালা সবাই সুপারিশ লাভ ও আল্লাহর রহমত প্রাপ্তির পর জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করলে জান্নাতে নারীর সংখ্যাই হবে বেশি।’
সারকথা, নারীদের প্রত্যাশা ও আত্মবিশ্বাস রাখা উচিত যে তারা জাহান্নামের অধিবাসী হবেন না।
ফায়দা¬ ৮
নারীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবেন, আল্লাহ তাঁদের যৌবন ফিরিয়ে দেবেন। আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
একবার এক আনছারী বৃদ্ধা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহর কাছে দু‘আ করেন তিনি যেন আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘জান্নাতে তো কোনো বৃদ্ধ মানুষ প্রবেশ করবে না।’ এ কথা শুনে বৃদ্ধা বড় কষ্ট পেলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ যখন তাদের (বৃদ্ধদের) জান্নাতে দাখিল করাবেন, তিনি তাদের কুমারীতে রূপান্তরিত করে দেবেন।’ [তাবরানী, আল-মু‘জামুল ওয়াছিত : ৫৫৪৫]
ফায়দা- ৯
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, জান্নাতে প্রত্যেক অধিবাসীর জন্য অন্যের স্ত্রীদের কাছে ঘেঁষাও নিষিদ্ধ থাকবে।
শেষ কথা হলো, হে নারী সম্প্রদায়, এ জান্নাতকে আপনাদের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে যেমন একে সুসজ্জিত করা হয়েছে পুরুষদের জন্য। আল্লাহ বলেনঃ
فى مَقعَدِ صِدقٍ عِندَ مَليكٍ مُقتَدِرٍ
‘নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাধারার মধ্যে। যথাযোগ্য আসনে, সর্বশক্তিমান মহাঅধিপতির নিকটে।’ {সূরা আল-কামার, আয়াত : ৫৫}
অতএব হেলায় সুযোগ হারাবেন না। কারণ, এ নশ্বর জীবন আর কয় দিনের? এটা তো দেখতে দেখতেই বয়ে যাবে। আর এরপর অবশিষ্ট থাকবে কেবল অনন্ত জীবন। সুতরাং জান্নাতের চিরস্থায়ী বাসিন্দা হবার চেষ্টা করুন। আর জেনে রাখুন, অতিরিক্ত কল্পনা ও প্রত্যাশা নয়; জান্নাতের মোহরানা হলো ঈমান ও নেক আমল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীটি সর্বদা মনে রাখবেন। তিনি বলেন,
‘যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমযানের সিয়াম পালন করে, আপন সতীত্ব রক্ষা করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, তাকে বলা হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে জান্নাতে প্রবেশ কর।’ [মুসনাদ আহমাদ : ১৬৬১]
আপনাদেরকে সকল বিশৃঙ্খলাকারী ও বিনাশকারীদের আহ্বান সম্পর্কে পুরোপুরি সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। যারা চায় আপনাদের ক্ষতি করতে। আপনাদের অশ্লীল বানাতে। যাদের লক্ষ্য জান্নাতের নিয়ামত লাভে ধন্য হওয়া থেকে আপনাদের বিচ্যুত করা। এসব তথাকথিত স্বাধীন নারী ও পুরুষ, লেখক-লেখিকা এবং টিভি চ্যানেলের লোকদের চাকচিক্য ও শ্লোগানে প্রতারিত হবেন না। কারণ তারা হলো আল্লাহ যেমন বলেনঃ
‘তারা কামনা করে, যদি তোমরা কুফরী করতে যেভাবে তারা কুফরী করেছে। অতঃপর তোমরা সমান হয়ে যেতে।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৮৯}
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন মুসলিম নারীদেরকে জান্নাতুন নাঈম দানে কামিয়াব করুন। আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াতের পথের পথিক ও পথিকৃত বানিয়ে দেন এবং তাদের কাছ থেকে নারীর শত্রু ও ধ্বংসকারী নারী ও পুরুষ শয়তানকে দূরে সরিয়ে দেন। সবশেষে আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর ওপর শান্তি বর্ষণ করুন। আমীন।
★★★★★★★★★★★★★★

Sunday, May 1, 2016

সালাত/নামাজ প্রতিষ্ঠা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ?

No comments :

সালাত প্রতিষ্ঠা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ?

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা:) এর উপর বিশ্বাস স্হাপন ও তাওহীদ সাক্ষ্য দেওয়ার পর যে বিষয়টি সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ তা হল সালাত (নামাজ) কায়েম করা। অর্থাৎ নিজে সালাত আদায় করা এবং অধিনস্ত সবাইকে সালাতের দিকে ডাকা ও সালাত প্রতিষ্ঠা করা ।

  ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করতে এখানে ক্লিক করুন।

আর যারা এই সালাতকে অবহেলা করে ছেড়ে দিবে তারা কুফরি করলো। আর কুফরি ইসলাম থেকে বের করে দেয় । অর্থাৎ নিজেকে মুসলিম দাবি করতে হলে সালাত অবশ্যই পড়তে হবে।
আর কিয়ামত দিবসে যে বিষয়টার হিসাব সর্ব প্রথম নেওয়া হবে তা হল ‘সালাত’। আর যার সালাত ঠিক হবে তার অন্যন্য বিষয়গুলোও ঠিক হবে বলে আশা করা যায়।
এছাড়া যারা সালাত আদায় করে তাঁরা অশ্লীল এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকে। তাই সালাত আদায় না করে নেক আমল করা অসম্ভব।
আবার এই সালাতকে মহান আল্লাহ সুবাহানওয়া তাআ’লা তাঁর ও বান্দার মাঝে ভাগ করে নিয়েছেন। তাই একজন মুসলিম সালাতের মাধ্যমে আল্লাহকে যতটুকু কাছে পায়, অন্য কোন ইবাদতের মাধ্যমে তা সম্ভব নয়।
তাই নিজেকে মুসলিম পরিচয় দিতে অবশ্যই রাসূল (সা:) এর পদ্ধতিতে সালাত আদায় করতে হবে। আর যারা সালাত কে ছেড়ে দিয়ে একজন মুসলিম দাবি করে তা তো যাদুকর এর ধোঁকার চেয়ে আরো বড় অবাস্তব।মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَاستَعينوا بِالصَّبرِ وَالصَّلوٰةِ ۚ وَإِنَّها لَكَبيرَةٌ إِلّا عَلَى الخٰشِعينَ
“ধৈর্যের সাথে সাহায্য প্রার্থনা কর নামজের মাধ্যমে অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন । কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব ।” (বাক্বারাহঃ ৪৫)
وَأمُر أَهلَكَ بِالصَّلوٰةِ وَاصطَبِر عَلَيها ۖ لا نَسـَٔلُكَ رِزقًا ۖ نَحنُ نَرزُقُكَ ۗ وَالعٰقِبَةُ لِلتَّقوىٰ
“তোমার পরিবার পরিজনকে সালাত আদায় করার নির্দেশ দাও এবং তুমি নিজেও তা দৃঢ়তার সাথে পালন করতে থাক।”-(সূরা ত্বা-হা: ১৩২)

حٰفِظوا عَلَى الصَّلَوٰتِ وَالصَّلوٰةِ الوُسطىٰ وَقوموا لِلَّهِ قٰنِتينَ
“সকল নামাযের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে দিনের মধ্যবর্তী নামাযের ব্যাপারে। আর নামাজের সময়ে আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও। -(আল কুরআনঃ সুরা আল বাকারাহঃ ২৩৮)
قُل إِنَّ صَلاتى وَنُسُكى وَمَحياىَ وَمَماتى لِلَّهِ رَبِّ العٰلَمين 
“আপনি বলুনঃ আমার সালাত, আমার কোরবানী, এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য।” -(সূরা আল আন-আমঃ ১৬২)
অর্থাৎ সালাত আদায়ের একমাত্র উদ্দেশ্য আল্লাহর আদেশ পালন ও সন্তুষ্টি অর্জন হতে হবে । যেখানে থাকবেনা কোন লোকদেখানো অহমিকা ও বড়ত্ব । তবে অবশ্যই থাকতে হবে আল্লাহভিতি ।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন-
মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেন- সালাতকে অর্ধেক অর্ধেক করে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে ভাগ করা হয়েছে। আমার বান্দা আমার কাছে যা প্রার্থনা করে তা তার জন্য। বান্দা যখন বলে -“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি বিশ্ব পালনকর্তা” তখন আল্লাহ বলেন – আমার বান্দা আমার যথাযথ প্রশংসা করেছে। অতঃপর সে যখন বলে- “তিনি করুনাময় ও অসীম দয়ালু”, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার গুণকীর্তন করেছে। এরপর সে যখন বলে -“তিনি বিচার দিনের মালিক”, তখন আল্লাহ বলেন -আমার বান্দা আমার মর্যাদা প্রকাশ করেছে। সে যখন বলে – “আমরা তোমারই এবাদত করি আর তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি”, তখন আল্লাহ বলেন, “এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধাঅর্ধি। আমার বান্দা যা চায় তা তার জন্য।” অতঃপর যখন সে বলে- “আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত কর তাদের পথে, যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছ, অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্টদের পথে নয়” তখন আল্লাহ বলেন – “এটা আমার বান্দার অংশ। আর আমার কাছে আমার বান্দা যা চায় তা তার জন্য।”
( আহমদ ও মুসলিম)
রাসূূলুল্লাহ্ (সাঃ) আরো বলেনঃ
বান্দার কাছ থেকে কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে বিষয়ের হিসেব গ্রহণ করা হবে তা হল তার সালাত। সে যদি তা পুরোপুরীভাবে আদায় করে থাকে তবে তা পুরো লেখা হবে। আর সে যদি তা পুরোপুরী আদায় না করে থাকে, তবে মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে বলবেন -“দেখ, আমার বান্দার কোন নফল সালাত আছে কিনা, যার দ্বারা তোমরা তার ফরজ পুরো করে নিতে পার।” অতঃপর যাকাত সম্বন্ধে অনুরূপভাবে হিসেব গ্রহণ করা হবে। তারপর তার সমূদয় আমলের হিসেব অনুরূপভাবে নেয়া হবে।"
( আহমদ ও আবূ দাউদ)
আবু হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল(সাঃ) বলেন, “ফিরিশতাবর্গ তোমাদের প্রত্যকের জন্য দুয়া ক’রে থাকেন, যতক্ষণ সে সেই স্থানে অবস্থান করে, যেখানে সে সালাত আদায় করেছে; যতক্ষণ পর্যন্ত না তার ওযূ নষ্ট হয়েছে; বলেন, ‘হে আল্লাহ! ওকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! ওর প্রতি সদয় হও।” 
(সহীহ বুখারী ৪৪৫; সহীহ মুসলিম ৬৪৯)
আবু হুরায়রা(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি রাসূল(সাঃ) কে বলতে শুনেছেনঃ
“তোমরা কি মনে কর, তোমাদের কারো ঘরের/বাড়ির সামনে দিয়ে যদি একটি নদী প্রবাহিত থাকে এবং প্রতিদিন সে উহাতে পাঁচবার গোসল করে, তবে তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে কি? সাহাবাগণ বললেন, তার শরীরে কোন ময়লাই বাকী থাকতে পারেনা। তিনি বললেন, এরূপ উদাহরণ হল পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের ক্ষেত্রেও। এভাবে সালাতেরর মাধ্যমে আল্লাহ নামাযীর যাবতীয় পাপ মোচন করে দেন”।
 (বুখারী; মুসলিম)
আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “বান্দা যখন সিজদায় থাকে তখন তার রবের সবচাইতে নিকটবর্তী হয়। কাজেই তোমরা (সিজদায় গিয়ে) বেশি করে দু’আ কর।”
(মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন- ১৪৯৮)
“তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত পড়তে দেখো সেভাবে সালাত পড়ো”-(বুখারী -১ম খণ্ড হা:-৬৩১, আল-মাদানী প্রকাশনী)
অর্থাৎ উপরের আলোচনা থেকে বুঝা গেলো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আল্লাহভিতিসহকারে সঠিকভাবে পালন করতে পারা অনেক বড় নিয়ামাহ ।আর যারা সালাত আদায় নিয়ে অবহেলা করে তাদের প্রতি ইসলাম কতটুকু কঠিন তা বুঝতে নিচের হাদীসগুলোর প্রতি লক্ষ্য করিঃ

(১) “নবী(সা:) এর সাহাবীগণ সালাত ব্যতীত কোন আমল পরিত্যাগ করার কারণে কাউকে কাফের মনে করতেন না” 
(২) “মুসলিম বান্দা এবং কাফের-মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত পরিত্যাগ করা।” 
(৩) “তাদের মাঝে এবং আমাদের মাঝে চুক্তি হচ্ছে সালাতের, যে ব্যক্তি সালাত পরিত্যাগ করবে সে কাফের হয়ে যাবে।”
(৪) “যদি তারা তাওবা করে ও সালাত আদায় করে এবং যাকাত প্রদান করে তবে তারাই তোমাদের দ্বিনী ভাই।” 
(৫) “অতঃপর এদের পর এল অপদার্থ লোকেরা। তারা সালাত নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। সুতরাং তারা অচিরেই পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে। কিন্তু তারা ব্যতীত যারা তওবা করেছে এবং ঈমান এনেছে।” 
(৬) “যে ব্যক্তি সালাত পরিত্যাগ করে, ইসলামে তার কোন অংশ নেই।”অর্থাৎ সালাত আদায় না করে মুসলিম দাবি করা হাস্যকর ও লজ্জাজনক । তাই আমাদের মধ্যে যাদের এই ভয়ংকর অভ্যাস রয়েছে তারা যেন শীঘ্রই তাওবা করে সালাত প্রতিষ্ঠা করি । আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা আমাদেরকে সালাতের ব্যাপারে সতর্ক ও নিয়মিত করুক । আমীন।
(১) তিরমিযী, কিতাবুল ঈমান। হাকেম
(২) সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান
(৩) আহমাদ, তিরমিযী, কিতাবুল ঈমান। নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, কিতাবুছ সালাত
(৪) সূরা তওবাঃ ১১
(৫) সূরা মারইয়ামঃ ৫৯-৬০
(৬) ইবনু আবী শায়রা, কিতাবুল ঈমান ।
আমার এই লেখাগুলো আপনাদের ভাল লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। 
ওয়ামা আখেরি দওয়ানা আলহামদুলিল্লাহ্‌হি রাব্বিল আলামিন।

Friday, April 29, 2016

ক্বুরানের পাতা থেকে

No comments :

ক্বুরানের পাতা থেকে

ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করতে এখানে ক্লিক করেন।
“আ'উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম।”
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। 

“তোমাদের উপর যেসমস্ত বিপদ-আপদ আসে,  তা তোমাদের নিজ হাতের কামাই। আর তিনি তোমাদের অনেক গুনাহ মাফ করে দেন।” (সুরা শুরাঃ ৩০)
“দুর্ভোগ ঐ সমস্ত নামাযীদের জন্য, যারা তাদের নামাযের ব্যাপারে উদাসীন।”
(সুরা আল-মাউ’নঃ ৪-৫)
*********************
يٰأَيُّهَا النَّبِىُّ إِنّا أَرسَلنٰكَ شٰهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذيرًا
وَداعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذنِهِ وَسِراجًا مُنيرًا
“হে নবী! আমি আপনাকে (মানবজাতির জন্যে) স্বাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি। এবং আল্লাহর আদেশে তাঁর (আল্লাহর) দিকে আহবানকারী এবং উজ্জ্বল প্রদীপ হিসেবে আপনাকে প্রেরণ করেছি।”
(সুরা আল-আহজাবঃ ৪৫-৪৬)
************************
ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا رَجُلًا فيهِ شُرَكاءُ مُتَشٰكِسونَ وَرَجُلًا سَلَمًا لِرَجُلٍ هَل يَستَوِيانِ مَثَلًا ۚ الحَمدُ لِلَّهِ ۚ بَل أَكثَرُهُم لا يَعلَمونَ
“আল্লাহ একটি উপমা বর্ণনা করছেনঃ তা হচ্ছে যে, একটি লোকের উপর পরস্পর বিরোধী কয়েকজন মালিক রয়েছে, আর অন্য এক ব্যক্তির মালিক মাত্র একজন। তাদের উভয়ের অবস্থা কি সমান হবে? সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।”
সুরা আল-যুমারঃ ২৯।
************************
فَاصدَع بِما تُؤمَرُ وَأَعرِض عَنِ المُشرِكينَ
إِنّا كَفَينٰكَ المُستَهزِءينَ
“সুতরাং (হে নবী!) আপনি প্রকাশ্যে তাদেরকে শুনিয়ে দিন, যা আপনাকে আদেশ করা হয় এবং মুশরিকদের কোন পরওয়া করবেন না। বিদ্রুপকারীদের জন্যে আপনার পক্ষ থেকে আমি একাই যথেষ্ঠ।”
সুরা আল-হিজরঃ ৯৪-৯৫।
***********************
فَإِذا قُضِيَتِ الصَّلوٰةُ فَانتَشِروا فِى الأَرضِ وَابتَغوا مِن فَضلِ اللَّهِ وَاذكُرُوا اللَّهَ كَثيرًا لَعَلَّكُم تُفلِحونَ
“অতঃপর নামায শেষ হলে তোমরা জমীনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করো, আর অধিক পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ কর, যাতে করে তোমরা সফলকাম হও।”
সুরা আল-জুমুয়া’হঃ ১০।
**********************
وَلَقَد خَلَقنَا الإِنسٰنَ وَنَعلَمُ ما تُوَسوِسُ بِهِ نَفسُهُ ۖ وَنَحنُ أَقرَبُ إِلَيهِ مِن حَبلِ الوَريدِ
إِذ يَتَلَقَّى المُتَلَقِّيانِ عَنِ اليَمينِ وَعَنِ الشِّمالِ قَعيدٌ
ما يَلفِظُ مِن قَولٍ إِلّا لَدَيهِ رَقيبٌ عَتيدٌ
وَجاءَت سَكرَةُ المَوتِ بِالحَقِّ ۖ ذٰلِكَ ما كُنتَ مِنهُ تَحيدُ
“আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে খারাপ চিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী। যখন দুই ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমল গ্রহণ করে। সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে। আর মৃত্যুযন্ত্রণা অবশ্যই আসবে। এ থেকেই তো তুমি টাল-বাহানা করতে!”
সুরা আল-ক্বাফঃ ১৬-১৯।
**********************
إِنَّما وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسولُهُ وَالَّذينَ ءامَنُوا الَّذينَ يُقيمونَ الصَّلوٰةَ وَيُؤتونَ الزَّكوٰةَ وَهُم رٰكِعونَ
وَمَن يَتَوَلَّ اللَّهَ وَرَسولَهُ وَالَّذينَ ءامَنوا فَإِنَّ حِزبَ اللَّهِ هُمُ الغٰلِبونَ
তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং মুমিনবৃন্দ, যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং বিনয়ী। আর যারা আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং মুমিমদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, তারাই হচ্ছে হিজবুল্লাহ (আল্লাহর দল), আর তারাই হচ্ছে বিজয়ী।”
সুরা আল-মায়ি’দাহঃ ৫৫-৫৬।
***********************
وَما أَرسَلنا قَبلَكَ إِلّا رِجالًا نوحى إِلَيهِم ۖ فَسـَٔلوا أَهلَ الذِّكرِ إِن كُنتُم لا تَعلَمونَ
 আপনার পূর্বে আমি মানুষই প্রেরণ করেছি, যাদের কাছে আমি ওহী পাঠাতাম। অতএব তোমরা যদি না জান তবে যারা স্মরণ রাখে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর
সুরা আল-আম্বিয়াঃ ৭।
**********************

Friday, April 22, 2016

আহলে কিতাব (ইহুদী খৃষ্টানরা) কি মু'মিন?

No comments :
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করতে এখানে ক্লিক করেন।
আহলে কিতাব (ইহুদী খৃষ্টানরা) কি মু'মিন?
ইহুদী-খৃষ্টান এবং অন্যান্য ধর্মের সকলেই কাফের। যদিও তারা এমন ধর্মের অনুসরন করে, যার মূল হচ্ছে সঠিক। নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আগমনের পর যে লোক নিজের ধর্ম পরিত্যাগ না করবে এবং ইসলাম গ্রহন না করবে, এ প্রসংঙ্গে আল্লাহ্ সুবহানা'হু তা'আলা বলেনঃ
 وَمَن يَبتَغِ غَيرَ الإِسلٰمِ دينًا فَلَن يُقبَلَ مِنهُ وَهُوَ فِى الءاخِرَةِ مِنَ الخٰسِرينَ
"যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, তার নিকট থেকে ওটা (তার ধর্ম) গ্রহণ করা হবে না এবং পরকালে সে হ্মতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে"। (সূরা আল ইমরান-৮৫)
কোন মুসলিম যদি তাদেরকে কাফের না বলে বা তাদের ধর্ম বাতিল হওয়ার ব্যাপারে সন্দহ-শংসয় করে, তবে সেও কাফের হয়ে যাবে। কেননা সে তাদের কাফের হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ্ ও তার নবীর বিধানের বিরোধীতা করেছে। কোরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেনঃ
وَمَن يَكفُر بِهِ مِنَ الأَحزابِ فَالنّارُ مَوعِدُهُ
"আর অন্যান্য সম্প্রদায়ের যে ব্যক্তি এই কোরআন অস্বীকার করবে,  তবে জাহান্নাম হবে তার প্রতিশ্রুত স্হান।" (সূরা হুদ-১৭)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
"শপথ সেই সত্বার যার হাতে আমার প্রাণ, এই উম্মতের মধ্য থেকে ইহুদী হোক বা খৃষ্টান হোক, কোন ব্যক্তি যদি আমার সম্পর্কে শুনে অতঃপর আমাকে যে শরীয়ত দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছে তার উপর ঈমান না এনেই মৃত্যু বরন করে, তবে সে জাহান্নমের অধিবাসী হবে।" (মুসলিম)

Thursday, April 21, 2016

ইসলামে নারীর মর্যাদাঃ

No comments :
ফেসবুক গ্রুপ এ জয়েন করতে এখানে ক্লিক কারুন

ইসলামে নারীর মর্যাদাঃ

ঈমান ও আমল অনুযায়ী মর্যাদা ও প্রতিদানের দিক থেকে নারী-পুরুষে ভেদাভেদ নেই। উভয়ে আল্লাহর নিকট সমান। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "নারীরা তো পুরুষদের সহোদর"।(আবু দাঊদ)। নারী হকদার হলে তা দাবী করার অধিকার আছে তার, অথবা নিপীড়িত হলে তা থেকে মুক্ত হওয়ার অধিকারও আছে। কেননা ইসলাম ধর্মে সম্বোধন সূচক যে সকল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তাতে নারী পুরুষের সাথেই। তবে যে সমস্ত বিষয়ে উভয়ের মাঝে পার্থক্য উল্লেখ করা হয়েছে তা অবশ্যই ভিন্ন। ইসলামের অবশিষ্ট ভিধি-ভিধানের তুলনায় সেই পার্থক্য খুবই সামান্য। তাছাড়া ইসলাম সৃষ্টিগত ও শক্তি-সামর্থগত দিক থেকে নারী-পুরুষের বৈশিষ্টের প্রতি গুরুত্বসহ লক্ষ্য রেখেছে। আল্লাহ্‌ বলেনঃ
 أَلا يَعلَمُ مَن خَلَقَ وَهُوَ اللَّطيفُ الخَبيرُ
"সে কি জানেনা কে সৃষ্টি করেছে? আর তিনিই সুক্ষ্মদর্শী সংবাদ রক্ষক"। (সূরা মূলক)
নারীর কিছু কর্ম আছে যা তার জন্যেই বিশেষ। পুরুষের কিছু কর্ম আছে যা তার জন্যেই বিশেষ। একজনের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অপরের অনুপ্রবেশ সংসার জীবনের ভারসাম্য নষ্ট করে দিবে। নারী নিজ গৃহে অবস্হান করলেও তাকে পুরুষের সমপরিমাণ প্রতিদান দেয়া হবে। আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্নিত, একদা তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আগমন করলেন।  তখন নবীজি সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে বসে ছিলেন। আসমা বললেন, আপনার জন্য আমার বাবা-মা কোরবান হোক! আমি নারী সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে আপনার নিকট আগমন করেছি। আপনাকে জানাচ্ছি যে, আমার প্রান আপনার জন্য উৎসর্গ। পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্তের নারী মাত্রেই যে কেউ আমার এই আগমনের সংবাদ শুনুক বা না শুনুক সে আমার অনুরুপ মত পোষণ করবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্‌ আপনাকে সত্য দ্বীনসহ নারী-পুরুষ উভয় শ্রেণীর নিকট প্রেরন করেছেন। তাই আমরা আপনার প্রতি এবং সেই মা'বুদের ঈমান এনেছি যিনি আপনাকে প্রেরন করেছেন। আমরা নারী সমাজ চার দেয়ালের ঘেরার মধ্যে আপনাদের গৃহের মধ্যে বসে বন্দি অবস্হায় দিন যাপন করি, আপনাদের প্রবৃত্তি চরিতার্থ করি, আপনাদের সন্তান গর্ভে ধারন করি। আর আপনারা পুরুষ সমাজকে আমাদের উপর মর্যাদাবান করা হয়েছে। জুমআ, জামাআত,রুগির পরিচর্যা, জানাযায় অংশ গ্রহন, হাজ্জের পর হাজ্জ সম্পাদন এবং সর্বোত্তম কাজ আল্লাহর পথে জিহাদে আপনারা অংশ নিয়ে থাকেন। আপনাদের মধ্যে কোন পুরুষ হাজ্জ বা উমরা বা জিহাদের পথে বের হলে আমরা আপনাদের ধন-সম্পদ সংরহ্মন করে থাকি। আপনাদের সন্তানদের লালন-পালন করে থাকি। অতএব হে আল্লাহর রাসূল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনারা যে প্রতিদান পেয়ে থাকেন তাতে কি আমরা শরীক হব না? বর্ননাকারী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের প্রতি পূরাপূরি মুখ ফিরালেন, তারপর বললেন, তোমরা কি কখনও শুনেছ ধর্মীয় বিষয়ে এ নারীর প্রশ্নের চেয়ে উত্তম কথা বলতে কোন নারীকে?  তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা ভাবতেই পারিনি একজন নারী এত সুন্দর কথা বলতে পারে। এবার নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলার দিকে দৃষ্টিপাত করলেন অতঃপর বললেন, ওহে নারী তুমি ফিরে যাও এবং তোমার পিছনের সকল নারীকে জানিয়ে দাও যে, তোমাদের কারো নিজ স্বামীর সাথে সদ্ভাবে সংসার করা,স্বামীর সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করা এবং তার মতামতের অনুসরণ করা উপরোক্ত সকল ইবাদতের ছওয়াবের বরাবর। (বায়হাকী) 
নবী (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি দু'জন কন্যা বা দু'জন ভগ্নি বা নিকটাত্মীয় দু'জন নারীর ভরন-পোষণ বহন করবে এমনকি আল্লাহ্‌ তাদের উভয়কে যথেষ্ট করে দিবেন, তবে তারা জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য পর্দা স্বরুপ হয়ে যাবে। (আহমাদ, ত্বাবরানী, হাদীসটি হাসান, বিঃদ্রঃ সহীহ তারগীব তারহীব হা/২৫৪৭)
♦♦নারীদের কতীপয় বিধি-বিধানঃ♦♦
গায়র মাহরাম নারীর সাথে নির্জনে মিলিত হওয়া পুরুষের জন্য হারাম। নবী (সাঃ) বলেন, "মাহরাম ব্যতীত কোন পুরুষ যেন কোন নরীর সাথে নির্জনে মিলিত না হয়"।(বুখারী ও মুসলিম)
মসজিদে গিয়ে নারীর নামাজ আদায় করা বৈধ। কিন্তু ফেৎনার আশংকা থাকলে মসজিদে যাওয়া উচিত নয়। আয়েশা (রাঃ) বলেন, নারীরা এখন যা করছে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা দেকলে হয়তো তাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করতেন। যেমনটি বানী ইসরাঈলের নারীদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল। (বুখারী ও মুসলিম) পুরুষ মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করলে যেমন তাকে বহুগুন ছওয়াব দেয়া হয়; নারী নিজ গৃহে নামাজ আদায় করলেও তাকে অনুরুপ ছওয়াব দেয়া হবে। জৈনক নারী নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে আবেদন করল হে আল্লাহর রাসূল! আপনার সাথে আমি নামাজ আদায় করতে ভালবাসি। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি জানি তুমি আমার সাথে নামাজ আদায় করতে ভালবাস। কিন্তু তোমার জন্যে হ্মুদ্র কুঠরিতে নামাজ পড়া, বাড়িতে নামাজ পড়ার চাইতে উত্তম। আর বাড়িতে নামাজ পড়া মহল্লার মসজিদে নামাজ পড়ার চাইতে উত্তম। আর মহল্লার মসজিদে নামাজ পড়া আমার মসজিদে (মসজিদে নববীতে) নামাজ পড়ার চেয়ে উত্তম। (আহমাদ, হাদীসটি হাসান বিঃদ্রঃ সহীহ তারগীব তারহীব হা/৩৪০) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন, নারীদের সর্বোত্তম মসজিদ হচ্ছে তার ঘরের সবচেয়ে নির্জনতম স্থান।(আহমাদ, হাদীসটি হাসান বিঃদ্রঃ সহীহ তারগীব তারহীব হা/৩৪১) 
মাহরাম সাথী না পেলে নারীর হাজ্জ উমরা করা ফরয নয়। কেননা মাহরাম ব্যতীত নারীর সফর বৈধ নয়। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোন নারী মাহরাম ব্যতীত যেন তিন দিনের অধিক দূরত্ব স্হানে সফর না করে। অপর বর্ননায় একদিন ও একরাতের অধিক দূরত্ব সপর করতে নিষেধ করা হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)
নারীর কবর যিয়ারত ও লাশের সাথে গমন নিষেধ। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, অধিকহারে কবর যিয়ারতকারী নারীদের উপর আল্লাহর লা'নত। (তিরমিযী) ইম্মে আত্বিয়া (রা) বলেন, জানাযার লাশের সাথে চলতে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের উপর কঠোরতা আরোপ করা হয়নি। (বুারী ও মুসলিম)
নারী চুলে যেকোন রং ব্যবহার করতে পারে, তবে বিবাহের প্রস্তাবকারী পুরুষকে ধোকা দেয়ার উদ্দেশ্য না থাকলে কালো রং ব্যবহার করা মাকরূহ।
উত্তরাধিকার সম্পদে নারীর জন্যে আল্লাহ যে অংশ নির্ধারন করেছেন তা তাকে প্রদান করা ওয়াজীব; তা থেকে তাকে বঞ্চিত করা হারাম। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি উত্তরাধীকারীকে প্রাপ্য মীরাছ থেকে বঞ্চিত করবে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্‌ তাকে জান্নাতের মীরাছ থেকে বঞ্চিত করবেন।(ইবনে মাজাহ্)
স্বামীর উপর ওয়াজীব হচ্ছে স্ত্রীর প্রয়োজনিয় ব্যয়ভার বহন করা। যা ছাড়া স্ত্রী চলতে পারবেনা যেমন- খাদ্য, পানীয়, বস্ত্র ও বাসস্থান প্রভৃতির উত্তমভাবে ব্যবস্হা করা। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
 لِيُنفِق ذو سَعَةٍ مِن سَعَتِهِ ۖ وَمَن قُدِرَ عَلَيهِ رِزقُهُ فَليُنفِق مِمّا ءاتىٰهُ اللَّهُ
"বিত্তশালী ব্যক্তি তার বিত্ত অনুযায়ী ব্যয় করবে। যে ব্যক্তি সিমীত পরিমাণে রিযিকপ্রাপ্ত, সে আল্লাহ যা দিয়েছেন তা থেকে ব্যয় করবে"।(সূরা আত্ব-ত্বালাক-৭)
নারীর স্বামী না থাকলে তার পিতা বা ভ্রাতা বা পুত্রের উপর আবশ্যক হচ্ছে তার খরচ বহন করা। নিকটাত্মীয় না থাকলে ুলাকার স্হানীয় লোকদের তার ভরন-পোষনের ব্যবস্হা করা মুস্তাহাব। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, বিধবা এবং অভাবী-মিসকিনদের প্রয়োজন পূরনে প্রচেষ্টাকারী আল্লাহর পথে মুজাহীদের ন্যায় অথবা রাত্রে তাহাজ্জুদ আদায়কারী ও দিনে নফল সিয়াম আদায়কারী ন্যায় প্রতিদান লাভ করবে।(বুখারী ও মুসলিম)
তালাকপ্রাপ্তা নারী বিবাহ না করলে তার শিশু সন্তানের লালন-পালন করার হকদার তারই বেশী। আর যত দিন শিশু মায়ের কোলে থাকবে ততদিন শিশুর ভরন-পোষন চালানো পিতার উপর ওয়াজীব।
নারীকে প্রথমে সালাম দেয়া মুস্তাহাব নয়; বিশেষ করে সে যদি যুবতী হয় বা তাকে সালাম দিলে ফেৎনার আশংকা থাকে।
প্রতি শুক্রবার (সপ্তাহে একবার) নারীর নাভীমূল ও বগল পরিষ্কার করা এবং নখ কাটা মুস্তাহাব। তবে চল্লিশ দিনের বেশী দেরী করা নাজায়েয।
মুখমন্ডলের চুল উঠানো হারাম- বিশেষ করে ভ্রুযুগলের চুল উপড়ানো নিষেধ। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে নারী চুল উপড়ানোর কাজ করে এবং যার উপড়ানো হয় গার উপর আল্লাহর লা'নত।(আবু দাউদ)
শোক পালনঃ মৃতের জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন করা কোন নারীর জন্য জায়েয নেই। তবে মৃত ব্যক্তি স্বামী হলে চার মাস দশ দিন শোক পালন করা ওয়াজিব। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ্‌ এবং শেষ দিবসে বিশ্বাসী নারীর তার স্বামী ব্যতীত কোন মৃত ব্যক্তির জন্য  তিন দিনের বেশী শোক পালন করা হালাল নয়। (মুসলিম) শোক পালনের জন্য নারী নিজের সৌন্দর্য গ্রহণ, যাফরান ইত্যাদির সুগন্ধি লাগানো থেকে বিরত থাকবে। যে কোন ধরনের গয়না, রঙিন লাল, হলুদ ইত্যাদি কাপড় পরিধান করবে না। মেহেদি বা রং (মেকআর) কালো সুরমা বা সুগন্ধিযুক্ত তৈল ব্যবহার করবেনা। তবে নখ কাটা,  নাভীমূল পরিষ্কার করা,  গোসল করা জায়েয আছে। যে গৃহে স্বামী মারা গেছে সেখানেই নারীর ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। একান্ত প্রয়োজন ব্যতীত সেই গৃহ থেকে বের হওয়া হারাম। কোন প্রয়োজনে বের হতে চাইলে দিনের বেলায় বের হবে।
পর্দাঃ নারী নিজ গৃহ থেকে বের হলে সমস্ত শরীর চাদর বা বোরকা দ্বারা আবৃত করা ওয়াজিব। শরীয়ত সম্মত পর্দার শর্তাবলীঃ (১) নারী তার সমস্ত শরীর ডেকে দেবে। (২) পর্দার পোষাকটি যেন নিজেই সৌনর্য না হয়। (৩) পর্দার কাপড় মোটা হবে পাতলা নয়। (৪) প্রশস্ত ঢিলা-ঢালা হবে; সংকির্ন হবে না। (৫) আতর সুভাশ মিশ্রিত হবে না। (৬) কাফের নারীদের পোষাকের সাথে সদৃশপূর্ন হবে না। (৭) পুরুষের পোষাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ন হবে না।
নারী যাদের সাথে পর্দা করবে বা করবে না তারা তিন শ্রেনীর লোকঃ
(১) স্বামী তার সাথে কোন পর্দা নেই। স্বামী যেভাবে ইচ্ছা স্ত্রীকে দেখতে পারে। (২) নারী এবং মাহরাম পুরুষ, সাধারনত নারীর শরীরের যে অংশ বাইরে থাকে এরা তা দেখতে পারবে। যেমনঃ মুখমন্ডল, মাথার চুল, কাধ, হাত, বাহু, পদযুগল ইত্যাদি। (৩) অন্যান্য পুরুষ(পরপুরুষ) একান্ত প্রয়োজন ছাড়া এরা নারীর শরীরের কোন অংশ দেখতে পাবে না। যেমনঃ বিবাহ ও চিকিৎসার উদ্দেশ্যে নরীকে দেখা জায়েয। নারীর সৌন্দর্য তার মুখমন্ডলেই। তাই মুখমন্ডল দেখেই বেশীর ভাগ মানুষ ফেৎনায় জড়িয়ে পড়ে। ফাতেমা বিনতে মুনযের (রাঃ) বলেন, " আমরা পরপুরুষের সামনে মুখমন্ডল ঢেকে ফেলতাম"। (হাকেম) আয়শা (রাঃ) বলেন, "আমরা ইহরাম অবস্হায় বিদায় হাজ্জে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম। উষ্টারোহী পুরুষরা আমাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করত। তারা আমাদের নিকটবর্তী হলে আমরা মাথার উপরের উড়নাকে মুখমন্ডলের উপর ঝুলিয়ে দিতাম। ওরা চলে গেলে আবার মুখমন্ডল খুলে দিতাম"। (আবু দাউদ)
ইদ্দতঃ ইদ্দত কয়েক প্রকারঃ
(১) গর্ভবতী নারীর ইদ্দতঃ গর্ভবতী স্ত্রীকে তালাক দেয়া হোক বা তার স্বামী মৃত্যু বরন করুক গর্ভের সন্তান প্রসব হলেই ইদ্দত শেষ।
(২) যে নারীর স্বামী মারা গেছেঃ তার ইদ্দত হচ্ছে চার মাস দশ দিন।
(৩) হায়েয অবস্হায় যাকে তালাক দেয়া হয়েছেঃ তার ইদ্দত হচ্ছে তিন হায়েয। তৃতীয় হায়েয শেষ হওয়ার পর পবিত্রতা শুরু হলেই গার ইদ্দত শেষ।
(৪) পবিত্রাবস্হায় যাকে তালাক দেয়া হয়েছেঃ তার ইদ্দত হচ্ছে তিন মাস। রেজঈ তালাকের ইদ্দত পালনকারীনির উপর ওয়াজিব হচ্ছে স্বামীর কাছেই থাকা। এই ইদ্দত চলাবস্হায় স্বামী তার যেকোন অঙ্গ দেখার ইচ্ছা করলে বা তার সাথে নির্জন হতে চাইলে তা জায়েয আছে। হতে পারে স্বামী যদি স্ত্রীকে বলে 'আমি তোমাকে ফেরত নিলাম' বা তার সাথে 'সহবাসে লিপ্ত হয়' তবেই তাকে ফেরত নেয়া হয়ে যাবে। ফেরত নেয়ার হ্মেত্রে স্ত্রীর অনুমতির দরকার নেই।
নারী অভিভাবক ব্যতীত নিজেই নিজের বিবাহ বসবে না। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া নিজের বিবাহ সম্পন্ন করবে, তার বিবাহ বাতিল,তার বিবাহ বাতিল,তার বিবাহ বাতিল। (তিরমিযী, আবু দাউদ)
পরচুলা ব্যবহার করা, শরীরের খোদাই করে অংকন করা নারীর জন্য হারাম। এ দু' টি কাজ কবিরা গুনাহের অন্তর্গত। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে নারী পরচুলা ব্যবহার করে ও যে পরচুলা লাগিয়ে দেয় এবং যে নারী শরীরে খোদাই করে অংকন করে ও যে করিয়ে দেয় তাদের সকলের উপর আল্লাহর লা'নত। (বুখারী ও মুসলিম)
বিনা কারনে স্বামীর নিকট তালাক চাওয়া হারাম। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "যে নারী কোনরূপ অসুবিধা ছড়াই (বিনা কারনে) স্বামীর নিকট তালাক চায়, তার জন্য জান্নাতের সুঘ্রান হারাম"। (আবু দাউদ)
সদ্ভাবে স্বামীর অনুগত্য করা নারীর উপর ওয়াজিব। বিশেষ করে স্ত্রীকে যদি বিছানায় (সহবাসের জন্য) আহবান জানায়। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোন স্বামী যদি স্ত্রীকে বিছানায় আহবান করে, কিন্তু স্ত্রী  তার আহবান প্রত্যাখ্যান করে, অতঃপর স্বামী রাগান্বিত অবস্হায় রাত কাটায়, প্রভাত হওয়া পর্যন্ত ফেরেস্তাগন সে স্ত্রীকে অভিশাপ দেয়। (বুখারী ও মুসলিম)
নারী যদি জানে যে রাস্তায় পরপুরুষ থাকবে, তবে বাইরে যাওয়ার সময় আতর-সুগন্ধি লাগানো হারাম। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, " নারী আতর সুগন্ধি লাগিয়ে যদি মানুষের সামনে দিয়ে হেটে যায়-যাতে তারা সুঘ্রাণ পায়, তবে নারী এরূপ এরূপ অর্থাৎ ব্যভিচারীনি"। (আবু দাউদ)

Tuesday, April 19, 2016

No comments :
বিসমিল্লাহহির রাহমানুর রাহিম।

 মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় ফিৎনা কি?


এ প্রশ্নের উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "আদম (আঃ) এর সৃষ্টির পর থেকে কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত দাজ্জালের চাইতে বড় কোন ফিৎনা নেই"।(মুসলিম)
দাজ্জাল আদমের এক সন্তান। শেষ যুগে আগমন করবে। তার দু'চোখের মধ্যবর্তী স্হানে লিখা থাকবে (كافر) 'কাফের' প্রত্যেক শিক্ষিত-অশিক্ষিত মু'মিন ব্যক্তি লিখাটি পড়তে পারবে। তার ডান চোখ অন্ধ থাকবে যেন চোখটি আঙ্গুরের থোকা। সর্বপ্রথম বের হয়ে সে সংস্কারের দাবী করবে। অতঃপর নবী হিসাবে তারপর সে নিজেই প্রভু আল্লাহ্ হিসাবে দাবী করবে। মানুষের কাছে নিজের দাবী নিয়ে আসলে লোকেরা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে এবং তার আহবান প্রত্যাখ্যান করবে। সে তাদের কাছ থেকে যখন ফিরে যাবে, তখন তাদের ধন সম্পদ তার পিছে পিছে চলতে থাকবে। মানুষ সকালে উঠে দেখবে তাদের হাতে কোন সম্পদ নেই। আবার দাজ্জাল নিজের উপর ঈমান আনার জন্য মানুষকে আহবান করবে, তখন লোকেরা তার ডাকে সাড়া দিবে ও তাকে সত্য বলে বিশ্বাস করবে। তখন সে আসমানকে আদেশ করবে, আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষন হবে। যমিনকে আদেশ করবে, সেখানে উদ্ভিদ উৎপাদন হবে। সে যখন মানুষের কাছে আসবে তখন তার সাথে থাকবে পানি ও আগুন। কিন্তু প্রকৃতপহ্মে তার পানি হবে আগুন আর আগুন হবে ঠান্ডা পানি। মু'মিন ব্যক্তির উচিত প্রত্যেক নামাজের তাশাহুদের শেষে দাজ্জালের ফিৎনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা। যদি দাজ্জাল বের হয়ে যায়, তবে তার সামনে সূরা কাহাফের প্রথমাংশ পাঠ করবে। ফিৎনায় পড়ার ভয়ে তার সম্মুখীন হওয়া থেকে বিরত থাকবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,  "যে ব্যক্তি দাজ্জাল সম্পর্কে শোনবে সে যেন তার থেকে দুরে থাকে। আল্লাহর শপথ একজন মানুষ নিজেকেমু'মিন ভেবে তার সাথে সাক্ষাত করতে যাবে, কিন্তু দাজ্জালের সাথে সংশয় সৃষ্টিকারী যে সকল বিষয় থাকবে তা দেখে সে তার অনুসরন করে ফেলবে।" (আবু দাউদ)
দাজ্জাল পৃথিবীতে মাত্র চল্লিশ দিন অবস্হান করবে। কিন্তু প্রথম দিন হবে এক বছরের সমান, পরের দিন একমাসের সমান, পরবর্তী দিন এক সপ্তাহের সমান। আর বাকি দিনগুলো হবে সাধারন দিনের মত। মক্কা ও মদিনা ছাড়া পৃথিবীর বুকে এমন কোন শহর বা স্হান বাকি থাকবে না, যেখানে দাজ্জাল প্রবেশ করবে না। মক্কা -মদিনায় প্রবেশ করা তার জন্য নিষেধ। অতঃপর ঈসা (আঃ) অবতরন করে তাকে হত্যা করবেন।
আমাদের সকলকে দাজ্জালের হাত থেকে বাচার তৌফিক দান করুন, "আমিন"