নামাজ বেহেস্তের চাবী

মোঃবাহাদুর হোসেন বাদল

Sunday, April 17, 2016

কোরআন পাঠের ফযীলতঃ

No comments :

কোরআন পাঠের ফযীলতঃ

[ফেসবুকে জয়েন করতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।]
কোরআন আল্লাহর বানী। সৃষ্টিকুলের উপর যেমন স্রষ্টার সম্মান ও মর্যাদা অপরিসীম,  তেমনি সকল বানীর উপর কোরআনের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব অতুলনীয়। মানুষের মুখ থেকে যা উচ্চারিত হয়, তন্মধ্যে 

কোরআন পাঠ সর্বাধিক উত্তম।
কোরআন শিক্ষা করা, অন্যকে শিক্ষা দান করা ও কোরআন অধ্যয়ন করার মধ্যে রয়েছে অফুরন্ত ফযীলত। নিম্নে কতিপয় উল্লেখ করা হলঃ

★কোরআন শিখানোর প্রতিদান ঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের মাঝে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজে কোরআন শিক্ষা করে ও অন্যকে কোরআন শিক্ষা দেয়। (বুখারী)
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি পবিত্র কোরআনের একটি অহ্মর পড়বে, সে একটি নেকী পাবে। আর একটি নেকী দশটি নেকীর সমপরিমান। (তিরমিয়ী)
ইবনে রজব (রহঃ) বলেন, প্রতিটি নেক কাজেরই ছওয়াব দশগুন বৃদ্ধি হয়। এর প্রমান হচ্ছে আল্লাহর বানীঃ
مَن جاءَ بِالحَسَنَةِ فَلَهُ عَشرُ أَمثالِها
"যে একটি নেক কাজ করবে, তার জন্য রয়েছে অনুরুপ দশগুণ প্রতিদান"। (সূরা আল-আনআম-১৬০) আর আল্লাহ্‌ যাকে চান তাকে দশগুনেরও বেশী প্রতিদান দিবেন।

★কোরআন শিক্ষা করা, মুখস্হ করা ও তাতে দক্ষতা লাভ করার ফযীলতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করবে এবং তা মুখস্হ করবে (এবং বিধি বিধানের) প্রতি যত্নবান হবে, সে উচ্চ সম্মানিত ফেরেস্তাদের সাথে অবস্হান করবে। আর যে ব্যক্তি কষ্ট হওয়া সত্বেও কোরআন পাঠ করবে এবং তার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখবে সে দ্বিগুণ ছওয়াবের অধিকারী হবে"। (বুখারী ও মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "কিয়ামত দিবসে কোরআন অধ্যয়নকারীকে বলা হবে, কোরআন পড় এবং উপরে উঠ। যেভাবে দুনিয়াতে তারতীলের সাথে কোরআন পড়তে সেভাবে পড়। যেখানে তোমার আয়াত পাঠ করা শেষ হবে, জান্নাতের সেই সুউচ্চ স্হানে হবে তোমার বাসস্থান "।(তিরমিযী)
যার সন্তান কোরআন শিক্ষা করবে তার প্রতিদান ঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করবে, শিক্ষা করবে ও তদানুযায়ী আমল করবে, তার পিতা-মাতাকে কিয়ামত দিবসে একটি নূরের তাজ পরানো হবে, যার আলো হবে সূর্যের আলোর মত উজ্জল। তাদেরকে এমন দু'টি পোষাক পরিধান করানো হবে, যা দুনিয়ার সকল বস্তুর চেয়ে অধিক মুল্যবান। তারা বলবেঃ কোন আমলের কারনে আমাদেরকে এত মুল্যবান পোষাক পরানো হয়েছে? বলা হবে তোমাদের সন্তানের কোরআন গ্রহন করার কারনে"।(হাকেম)

★পরকালে কোরআন সুপারিশ করবেঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "তোমরা কোরআন পাঠ কর। কেননা কিয়ামত দিবসে কোরআন তার পাঠকের জন্যে সুপারিশকারী হবে"। (মুসলিম)
নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন, "কিয়ামত দিবসে সিয়াম ও কোরআন বান্দার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে"। (আহমাদ, হাকেম, সহীহ তারগীব তারহীব হা/৯৮৪)

★কোরআন তেলাওয়াত, অধ্যয়ন এবং কোরআন নিয়ে গবেষনার জন্য একত্রিত হওয়ার ফযীলতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ "কোন সম্প্রদায় যদি আল্লাহর কোন ঘরে একত্রিত হয়ে কোরআন পাঠ করে এবং তা পরস্পরে শিক্ষা লাভ করে, তবে তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল হয়, আল্লাহর রহমত তাদেরকে আচ্ছাদিত করে এবং ফেরেস্তারা তাদেরকে ঘিরে রাখে। আর আল্লাহ্‌ তার নিকটস্থ ফেরেস্তাদের সামনে তাদের কথা আলোচনা করেন"। (মুসলিম)

★উপদেশঃ

অতএব সম্মানিত পাঠক! আপনার সময়ের নির্দিষ্ট একটা অংশ কোরআন পাঠের জন্য  নির্ধারন করুন। যত ব্যস্তই থাকুন না কেন ঐ অংশটুকু পড়ে নিতে সচেষ্ট হোন। কেননা যে কাজ সর্বদা করা হয় তা অল্প হলেও বিচ্ছিন্নভাবে বেশী কাজ করার চেয়ে উত্তম। যদি কখনো উদাসিন হয়ে পড়েন বা ভূলে যান তবে পরবর্তী দিন তা পড়ে ফেলবেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোরআনের নির্দিষ্ট অংশ না পড়েই ঘুমিয়ে পড়ে তবে ফযর ও যোহর নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে যেন তা পড়ে নেয়। তাহলে তার আমল নামায় উহা রাতে পড়ার মত ছওয়াব লিখে দেয়া হবে। (মুসলিম)
যারা কোরআন ছেড়ে দেয় বা কোরআন ভূলে যায় আপনি তাদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না। 
আল্লাহ্‌ আমাদের সকলকে কোরআন পড়ার এবং বোঝার তৌফিক দান করুন। (আমিন)

Saturday, April 9, 2016

জাহান্নামের আগুন

No comments :
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জাহান্নামের আগুন 


জাহান্নামের বেশি শাস্তি আগুনেরই হবে,যে ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এরশাদ করেছেন যে,জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার আগুনের চেয়ে সত্তর গুন গরম বেশি হবে (মুসলিম)।
কোরআনের কোন কোন স্হানে তাকে "বড় আগুন" নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে (সূরা আলা ১২)
আবার কোথাও "আল্লাহর প্রজ্জলিত অগ্নি" নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে (সূরা হুমাজা -৫)
আবার কোথাও "লেলিহান জাহান্নাম " ও বলা হয়েছে 
(সূরা লাইল-১৪)
আবার কোথাও "জলন্ত অগ্নি"ও বলা হয়েছে (সূরা গাসিয়া-৪)
শাস্তি হিসাবে যদি মানুষকে জ্বালিয়ে দেয়াই উদ্দেশ্য হত,তাহলে দুনিয়ার আগুনই যতেষ্ট ছিল যাতে মানুষ হ্মনিকের মধ্যেই জ্বলে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু জাহান্নামের আগুনত মূলত কাফের ও মুশরিককে বিশেষ ভাবে আযাব দেওয়ার জন্যই উত্তপ্ত করা হয়েছে, তাই তা পৃথিবীর আগুনের চাইতে কয়েক গুন বেশি গরম হওয়া সত্বেও এ আগুন জাহান্নামিদেরকে একেবারে শেষ করে দিবে না,বরং তাদেরকে ধারাবাহিক ভাবে আযাবে নিমজ্জিত করে রাখবে।
আল্লাহ্‌ বলেনঃ
অর্থঃ"(জাহান্নাম) সে মরবেও না বাচবেও না "(সূরা ত্বা-হা-৭৮)
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে সপ্ন যোগে এক বিস্রি আকৃতি ও বিবর্ন চেহারার লোক দেখানো হল,সে আগুন জ্বালিয়ে যাচ্ছে এবং তাকে উত্তপ্ত করছে,রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) জিবরীল (আঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন এ কে? জিবরীল উত্তরে বললেনঃ তার নাম মালেক সে জাহান্নামের দারওয়ান (বোখারী)
জাহান্নামের আগুনকে আজও উত্তপ্ত করা হচ্ছে,কিয়ামত পর্যন্ত তাকে উত্তপ্ত করা হতে থাকবে। জাহান্নামিদের জাহান্নাম যাওয়ার পরও তাকে উত্তপ্ত করার  ধারাবাহিকতা চলতে থাকবে।
আল্লাহর বানীঃ

وَمَن يَهدِ اللَّهُ فَهُوَ المُهتَدِ ۖ وَمَن يُضلِل فَلَن تَجِدَ لَهُم أَولِياءَ مِن دونِهِ ۖ وَنَحشُرُهُم يَومَ القِيٰمَةِ عَلىٰ وُجوهِهِم عُميًا وَبُكمًا وَصُمًّا ۖ مَأوىٰهُم جَهَنَّمُ ۖ كُلَّما خَبَت زِدنٰهُم سَعيرًا

অর্থঃ "আল্লাহ্‌ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, সেই তো সঠিক পথ প্রাপ্ত  এবং যাকে পথ ভ্রষ্ট করেন, তাদের জন্যে আপনি আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন সাহায্যকারী পাবেন না। আমি কিয়ামতের দিন তাদের সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়, অন্ধ অবস্থায় এবং বধির অবস্থায়। তাদের আবাস্থল জাহান্নাম। যখনই নির্বাপিত হওয়ার উপক্রম হবে আমি তখন তাদের জন্যে অগ্নি  আরও বৃদ্ধি করে দেব।(সূরা বানী ইসরাঈল-৯৭)
জাহান্নামর আগুন কত উত্তপ্ত হবে তার হুবহু পরিমান বর্ননা করা অসম্ভব,তবে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর বর্ননা অনুযায়ী জাহান্নামের আগুনের তাপদাহ পৃথিবীর আগুনের চেয়ে সত্তর গুন বেশি হবে।সাধারন  অনুমানে পৃথিবীর আগুনের উত্তাপ ২০০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড ধরা হলে ' জাহান্নামের আগুনের তাপমাত্রা হয় এক লহ্ম ৩৮ হাজার ডিগ্রী সেন্টিগ্রে, এ কঠিন  গরম আগুন দিয়ে জাহান্নামিদের পোষাক ও তাদের বিছানা তৈরি করা হবে, ঐ আগুন দিয়ে তাদের ছাতা ও তাবু তৈরি করা হবে।কঠিন আযাবের এ নিকৃষ্ট স্হানে মানুষের জীবন যাপন কেমন হবে, যারা নিজের হাতে সামান্য একটি আগুনের কয়লাও রাখার হ্মমতা রাখেনা? কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুন দেখে সমস্ত নবীগন এত ভীত হবে তারা বলবে যে,
হে আমার প্রভু!  আমাকে বাচাও, হে আমার প্রভু! আমাকে বাচাও। এবলে আল্লাহর নিকট স্বীয় জীবনের নিরাপত্তা কামনা করবে। উম্মুল মু'মেনীন আয়েশা সিদ্দিকি (রাঃ) জাহান্নামের আগুনের কথা স্মরণ করে পৃথিবীতে কাঁদতেন, পৃথিবীতে থাকা অবস্থায়ই জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশ জন সাহাবীর একজন ওমর (রাঃ) কোরআন তিলোয়াত করার সময় জাহান্নামের আযাবের কথা আসলে বেহুস হয়ে যেতেন, মুয়াজ বিন জাবাল,আবদুল্লাহ্ বিন রাওয়াহা,ওবাদা বিন সামেত (রাঃ) দের মত সম্মানিত সাহাবাগন জাহান্নামের আগুনের কথা স্মরণ করে এত কাদতেন যে,তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় যেতেন। আবদুল্লাহ্ বিন মাসউদ (রাঃ) কামারের দোকানের পাশে দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে প্রজ্জলিত আগুন দেখে জাহান্নামের কথা স্মরণ করে কাদতে থাকতেন।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্‌ তা'লা এরশাদ করেনঃ
অর্থঃ"তোমার প্রতিপালকের শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ"
(সূরা বনী ইসরাঈল-৫৭)
আল্লাহর স্বীয় দয়া ও অনুগ্রহে সমস্ত মুসলমানদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিন ""আমিন""


Friday, April 1, 2016

মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কেমন ছিলেন? 

No comments :

মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কেমন ছিলেন? 

আলহা’মদুলিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াসসালামু আ’লা রাসুলিল্লাহ। আম্মা বাআ’দু।
আল্লাহ সুবহা’নাহু তা'আলা বলেন,

 وَإِنَّكَ لَعَلىٰ خُلُقٍ عَظيمٍ

“(হে নবী!) নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রেরঅধিকারী।” [সুরা ক্বলমঃ ৪]
আল্লাহ্‌ আরো বলেছেন,

 لَقَد كانَ لَكُم فى رَسولِ اللَّهِ أُسوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَن كانَ يَرجُوا اللَّهَ وَاليَومَ الءاخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثيرًا

“যারা আল্লাহ্‌ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহ্‌কে অধিক স্মরন করে, তাদের জন্যে রাসূল (সাঃ) এর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে।” 
[সুরা আল আহজাবঃ ২১]
আল্লাহ্‌ সুবহা'নাহু তা'আলা বলেছেন, 

النَّبِىُّ أَولىٰ بِالمُؤمِنينَ مِن أَنفُسِهِم ۖ وَأَزوٰجُهُ أُمَّهٰتُهُم ۗ وَأُولُوا الأَرحامِ بَعضُهُم أَولىٰ بِبَعضٍ فى كِتٰبِ اللَّهِ مِنَ المُؤمِنينَ وَالمُهٰجِرينَ إِلّا 

أَن تَفعَلوا إِلىٰ أَولِيائِكُم مَعروفًا ۚ كانَ ذٰلِكَ فِى الكِتٰبِ مَسطورًا

“নবী (আপনি) মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চাইতে বেশি আপন এবং আপনার স্ত্রীগন তাদের মাতা। আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মুমিন ও মুহাজিরগনের মধ্যে যারা আত্বীয়, তারা পরষ্পরে অধিক ঘনিষ্ঠ। তবে তোমরা যদি তোমাদের বন্ধুদের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্য করতে চাও, করতে পার। এটা লওহে-মাহফুযে লিখিত আছে।"
 [সুরা আহজাবঃ ৬]
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদীসের উপর ভিত্তি করে তিনি দেখতে কেমন ছিলেন, তার ব্যক্তিত্ব কেমন ছিলো এবং তাঁর জীবনীর ছোট-বড় যাবতীয় খুটিনাটি বিষয়ের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিয়ে ইমাম তিরমিযী রাহিমাহুল্লাহর সুন্দর একটি বই লিখেছিলেন। বইটির নাম হচ্ছে “শামাইলুন নাবিয়্যি”। বইটি “শামায়েলে তিরমিযী” নামেও পরিচিত। বইটি বাংলা ইংরেজীসহ বিভিন্ন ভাষাতে অনুদিত হয়েছে, আপনারা সংগ্রহ করতে পারেন।
www.bahadurhossn24.com

সেই বই থেকে কিছু বর্ণনাঃ
(১) আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম খুব লম্বাও ছিলেন না, আবার খুব বেটেও ছিলেন না বরং, তিনি ছিলেন মাঝারি উচ্চতার। তাঁর দেহের গড়ন ছিলো সুঠাম আকৃতির, অর্থাৎতিনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। তার উভয় বাহু এবং পা ছিলো মাংসল। তাঁর অংগ-প্রত্যংগের জোড়াগুলো ছিলো মজবুত।
(২) তাঁর গায়ের রঙ ছিলো অতিশয় সুন্দর গৌর বর্ণের, রক্তিমাভ। তিনি ধবধবে সাদাও ছিলেন না, আবার বেশি তামাটে বর্ণেরও ছিলেন না।সাহাবীরা বলেছেন, তাঁর চেহারা চাঁদের চাইতেও বেশি সুন্দর ছিল।
(৩) তাঁর চুল ছিলো ঈষৎ ঢেউ খেলানো ও সামান্য কোঁকড়ানো। চুলগুলো লম্বা হলে তার বাবড়ি দুই কানের লতি পর্যন্ত ঝুলানো থাকতো। তিনি কখনো চুলে সিথি করতেন এবং চুলে তেল দিতেন।
(৪) তার চোখের ভ্রুগুলো ছিলো স্পষ্ট ও কালো, কিছুটা বাঁকানো ও একটা থেকে আরেকটা পৃথক। তার দুই ভ্রুর মাঝখানে একটা রগ ছিলো, যা তিনি রেগে গেলে ফুলে যেতো এবং মুখ লাল হয়ে যেত, যা থেকে স্পষ্ট বোঝা যেত যে, তিনি রাগন্বিত হয়েছেন। তিনি চোখে সুরমা দিতেন।
(৫) তার দাঁতগুলো ছিলো চিকন ও উজ্জ্বল বর্ণের, এবং তাঁর সামনের দুটি দাতের মাঝে কিঞ্চিত ফাঁক ছিলো। তিনি কথা বলার সময় মনে হতো তার সামনের দাঁত থেকে যেন নূর বের হচ্ছে।
(৬) তাঁর চেহারা বা মুখমন্ডল ছিলো চাঁদের মতো উজ্জ্বল, কিছুটা প্রশস্ত। চোখের শুভ্রতার মধ্যে রক্তিম রেখাগুলো স্পষ্ট দেখা যেত। তাঁর নাক ছিলো চেহারার সাথে মানানসই রকমের তীক্ষ্ণ ও উন্নত। তাঁর দাঁড়ি ছিলো ঘন ও ভরপুর। ইব্রাহীম আ’লাইহিস সালাম এর সাথে তাঁর চেহারার বিশেষ মিল ছিলো।
(৭) তিনি সামনের দিকে একটু ঝুঁকে হাটতেন, মনে হতো যেন উঁচু জায়গা থেকে নিচে অবতরণ করছেন। তিনি হাঁটার সময় মাটিতে পা ফেলতেন মৃদুভাবে, হাটতেন পাতলা পদক্ষেপে কিন্তু দ্রুত গতিতে।
(৮) তাঁর দুই কাঁধের মাঝামাঝি জায়গায়‘মোহরে নবুওত’ বা সর্বশেষ নবুওতের সীল ছিলো। যা কবুতরের ডিমের মতো বড় লাল গোশতের টুকরা যা পশম দ্বারা ঢাকা ছিলো এবং চারপাশে তিল ছিলো।
(৯) তিনি কুমারী পর্দানশীল নারীদের চাইতে বেশি লজ্জাশীল ছিলেন।
(১০) তিনি যখন কারো দিকে তাকাতেন তখন সর্বশরীর ফিরিয়ে তাকাতেন। প্রায়ই দৃষ্টি নিচু করে রাখতেন। আসমানের চাইতে জমীনের দিকেই তাঁর দৃষ্টি বেশি নিবদ্ধ থাকতো। স্বভাবত লাজুকতার দরুণ তিনি কারো দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেন না। পথ চলার সময় সংগীদের আগে দিতেন (এবং নিজে পেছনে থাকতেন)। কারো সাথে সাক্ষাত হলে তিনিই আগে সালাম দিতেন।
(১১) তিনি ছিলেন ‘খাতামুন নাবিয়্যিন’, নবীগণের মোহর বা সর্বশেষ নবী। তিনি ছিলেন মানুষের মাঝে প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী ও দানশীল, বাক্যালাপে সত্যবাদী, কোমন হৃদয়ের অধিকারী এবং সংগী-সাথী ও বন্ধুদের সাথে সম্মানের সাথে বসবাসকারী। যে কেউ তাঁকে প্রথমবারের মতো দেখেই প্রভাবান্বিত হয়ে পড়ত। যে ব্যক্তি তাঁর সাথে মিশত এবং তাঁর সম্পর্কে অবহিত হতে সে তাঁর প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন হয়ে যেত। তাঁর প্রশংসাকারী বলতো, তাঁর আগে বা পরে তাঁর মতো আমি আর কাউকে দেখিনি। তাঁর উপর আল্লাহর করুণা ও শান্তি বর্ষিত হোক।
(১২) চাঁদের বছর অনুযায়ী দুনিয়ার জীবনে তিনি ৬৩ বছর হায়াত পেয়েছিলেন। তিনি ৪০ বছরে নবুওতপ্রাপ্ত হন। এরপর মক্কায় ১৩ বছর মানুষকে আল্লাহর দ্বীনের দিকে, কালিমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহার দিকে দাওয়াত দেন। মক্কার মুশরিকরা যখন তাঁকে হত্যা করার ষড়যযন্ত্র করছিলো, তখন তিনি মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনাতে চলে যান। সেখান থেকে তিনি জীবনের বাকি ১০টি বছর আল্লাহর দ্বীনের জন্য উৎসর্গ করেন।
(১৩) জীবনের শেষের দিকে তাঁর কিছু (প্রায় ২০টির মতো) চুল পেকে সাদা হয়ে গিয়েছিলো। এটা দেখে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আ’নহু একদিন বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনিতো বার্ধক্যে পৌঁছে গেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “সুরা হুদ, সুরা ওয়াকিয়া, সুরা মুরসালাত, সুরা নাবা, সুরা তাকবীর – এ সুরাগুলো আমাকে বৃদ্ধ করে দিয়েছে। ”অর্থাৎ, এই সুরাগুলোতে বর্ণিত কিয়ামতের ভয়াবহতা, আখেরাতের কঠিন হিসাব-নিকাশ, জাহান্নামের কঠোর শাস্তি ইত্যাদি বিষয়ের ভীতিকর ও মর্মস্পর্শী বর্ণনা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম-কে দ্রুত বৃদ্ধ করে দিয়েছিলো। এই পৃথিবীতে বসবাসকারী এবং ভবিষ্যতে আগমনকারী সমস্ত মানুষের মাঝে শ্রেষ্ঠ, সমস্ত নবী এবং রাসূলদের সর্দার, ‘রাহমাতুল্লিল আলামীন’, জগতবাসীদের জন্যে রহমত স্বরূপ – মুহাম্মাদ, রাসুলু্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর চরিত্র সৌন্দর্য বর্ণনা করা এবং তাঁর যথাযথ প্রশংসা লিখা আমাদের মতো মানুষের

জন্যে সত্যিই কঠিন একটা ব্যপার। তাঁর ব্যপারে আমাদের কি করণীয়, সে ব্যপারে স্বয়ং আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লা আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, 

 إِنَّ اللَّهَ وَمَلٰئِكَتَهُ يُصَلّونَ عَلَى النَّبِىِّ ۚ يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنوا صَلّوا عَلَيهِ وَسَلِّموا تَسليمً 

নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর ফিরেশতাগণ নবীর প্রতি দরুদ পেশ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ পেশ করো এবং তাঁকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।”
[সুরা আহজাবঃ ৫৬]
আসুন আমরা সকলেই পড়িঃ
“আল্লাহুম্মা সাল্লি আ’লা মুহা’ম্মাদিও ওয়া-আ’লা আলি মুহা’ম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আ’লা ইব্রাহীমা ওয়া-আ’লা আলি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হা’মীদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আ’লা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া-আ’লা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারা-কতা আ’লা ইব্রাহীমা ওয়া-আ’লা আলি
ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ

***********************************


Wednesday, March 30, 2016

কোরআনের আলোকে পর্দার বিধান

No comments :

কোরআনের আলোকে পর্দার বিধান

মহান আল্লাহ্‌ বলেনঃ
 يٰبَنى ءادَمَ قَد أَنزَلنا عَلَيكُم لِباسًا يُوٰرى سَوءٰتِكُم وَريشًا ۖ وَلِباسُ التَّقوىٰ ذٰلِكَ خَيرٌ ۚ ذٰلِكَ مِن ءايٰتِ اللَّهِ لَعَلَّهُم يَذَّكَّرونَ
হে বনি আদম! আমি তোমাদের লজ্জা স্হান আবৃও করার ও বেশভুষার জন্যে তোমাদের পোষাক পরিচ্ছেদের উপকরন অবতির্ন করেছি, আল্লাহর ভীতির পরিচ্ছেদই সর্ভোত্তম পরিচ্ছেদ,  এটা আল্লাহর নিদর্শন সমুহের অন্যতম নিদর্শন, সম্ভবতঃ মানুষ এটা থেকে উপদেশ গ্রহন করবে।
(সূরা আল আ'রাফ-২৬)
আল্লাহ্‌ তা'আলা বলেনঃ
 قُل لِلمُؤمِنينَ يَغُضّوا مِن أَبصٰرِهِم وَيَحفَظوا فُروجَهُم ۚ ذٰلِكَ أَزكىٰ لَهُم ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبيرٌ بِما يَصنَعونَ
মুমিনদেরকে বল তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জা স্হানের হেফাযত করে, এটাই তাদের জন্য উত্তম, তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ্ অবহিত। 
(সূরা আন নূর-৩০)
মহান আল্লাহ্‌ অন্য আয়াতে বলেনঃ
 وَقُل لِلمُؤمِنٰتِ يَغضُضنَ مِن أَبصٰرِهِنَّ وَيَحفَظنَ فُروجَهُنَّ وَلا يُبدينَ زينَتَهُنَّ إِلّا ما ظَهَرَ مِنها ۖ وَليَضرِبنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلىٰ جُيوبِهِنَّ ۖ وَلا يُبدينَ زينَتَهُنَّ إِلّا لِبُعولَتِهِنَّ أَو ءابائِهِنَّ أَو ءاباءِ بُعولَتِهِنَّ أَو أَبنائِهِنَّ أَو أَبناءِ بُعولَتِهِنَّ أَو إِخوٰنِهِنَّ أَو بَنى إِخوٰنِهِنَّ أَو بَنى أَخَوٰتِهِنَّ أَو نِسائِهِنَّ أَو ما مَلَكَت أَيمٰنُهُنَّ أَوِ التّٰبِعينَ غَيرِ أُولِى الإِربَةِ مِنَ الرِّجالِ أَوِ الطِّفلِ الَّذينَ لَم يَظهَروا عَلىٰ عَورٰتِ النِّساءِ ۖ وَلا يَضرِبنَ بِأَرجُلِهِنَّ لِيُعلَمَ ما يُخفينَ مِن زينَتِهِنَّ ۚ وَتوبوا إِلَى اللَّهِ جَميعًا أَيُّهَ المُؤمِنونَ لَعَلَّكُم تُفلِحونَ
ইমান অনয়নকারী নারীদেরকে বল-তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জা স্হানের হেফাযত করে, তারা যেন যা সাধারনতঃ প্রকাশ থাকে তা ব্যতীত তাদের আবরন প্রদর্শন না করে, তাদের গ্রিবা ও বহ্মদেশ যেন মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে, তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারীগন, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনারহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারো নিকট তাদের আবরন প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন আবরন প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদহ্মেপ না করে, হে মুমিনগন! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।

Sunday, March 27, 2016

কোরআন পড়ি কোরআন বুঝি

No comments :

কোরআন পড়ি কোরআন বুঝি