মোঃবাহাদুর হোসেন বাদল

Saturday, January 23, 2016

আয়েশা (রাঃ) ও মুহাম্মাদ(সঃ)

No comments :

আয়েশা (রাঃ) ও মুহাম্মাদ(সঃ)


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তরে আয়েশা রাদিআল্লাহ আনহার যে মহত্ব ও মর্যাদা ছিল, তা অন্য কোন স্ত্রীর জন্য ছিল না। তার প্রতি এ মহব্বত তিনি কারো থেকে গোপন পর্যন্ত করতে পারেননি, তিনি তাকে এমন ভালবাসতেন যে, আয়েশা যেখান থেকে পানি পান করত, তিনিও সেখান থেকে পানি পান করতেন, আয়েশা যেখান থেকে খেত, তিনিও সেখান থেকে খেতেন। অষ্টম হিজরিতে ইসলাম গ্রহণকারী আমর ইব্নুল আস রাদিআল্লাহু আনহু তাকে জিজ্ঞাসা করেন :

“হে আল্লাহর রাসূল, আপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয় কে ?” তিনি বললেন : “আয়েশা”। সে বলল : পুরুষদের থেকে ? তিনি বললেন : “তার পিতা”। {বুখারি ও মুসলিম}

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে খেলা-ধুলা, হাসি-ঠাট্টা ইত্যাদিতে অংশ গ্রহণ করতেন। কোন এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায়ও অংশ নেন।

আয়েশা রাদিআল্লাহ আনহা আরো বর্ণনা করেন, যার দ্বারা তার সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্নেহ, মমতা ও আদর-সোহাগের প্রকাশ পায়, তিনি বলেন :

“আল্লাহর শপথ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি আমার ঘরের দরজায় দাঁড়াতেন, হাবশিরা যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে খেলা-ধুলা করত, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তার চাদর দিয়ে ঢেকে নিতেন, যেন আমি তাদের খেলা উপভোগ করি তার কাঁধ ও কানের মধ্য দিয়ে। অতঃপর তিনি আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতেন, যতক্ষণ না আমিই প্রস্থান করতাম”। {আহমদ}

যেহেতু প্রসিদ্ধ ছিল আয়েশাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অন্য স্ত্রীদের তুলনায় বেশী প্রিয়, তাই সবাই অপেক্ষা করত আয়েশার ঘরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবে আসবেন, সে দিন তারা তাকে হাদিয়া ও উপহার সামগ্রী পেশ করত।

আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত :“মানুষ তাদের হাদিয়া পেশ করার জন্য আয়েশার পালার অপেক্ষায় থাকত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য”। {মুসলিম, অষ্টম খণ্ড, পনেরতম অংশ, পৃষ্ঠা : (২০৫) দারু ইহইয়াউত তুরাসিল আরাবি, বইরুত, দ্বিতীয় মুদ্রণ, হি.১৩৯২, ই.১৯৭২}

তার প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বতের আরেকটি আলামত হচ্ছে, মৃত্যু শয্যায় তিনি আয়েশার নিকট থাকার জন্য অন্যান্য স্ত্রীদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন, যেন আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা তাকে সেবা শুশ্রূষা প্রদান করেন।

আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহার আরো একটি প্রসিদ্ধি ছিল যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে আত্মসম্মান বোধ করতেন, রাসূলের প্রতি যা তার অকৃত্রিম ও সত্যিকার মহব্বতের প্রমাণ ছিল। তিনি তা এভাবে ব্যক্ত করেন :

“কেন আমার মত একজন নারী, আপনার মত একজন পুরুষকে নিয়ে কেন আত্মসম্মান বোধ করবে না ?” {মুসলিম}

একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘরে অবস্থান করছিলেন, রাসূলের অপর স্ত্রী খানাসহ একটি পাত্র তার নিকট প্রেরণ করেন, আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা পাত্রটি হাতে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খানা জমা করতে করতে বলতে ছিলেন :

“তোমাদের মা ঈর্ষা ও আত্মসম্মানে এসে গেছে”। {বুখারি}

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোন নারীকে বিয়ে করতেন, আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা তাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন, যদি কোন বিশেষত্ব বা বৈশিষ্টের কারণে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুকুল্য লাভ করে থাকে, তাহলে তিনিও তা অর্জন করার জন্য প্রতিযোগিতা করবেন। এ ঈর্ষা ও আত্মসম্মানের বিরাট একটি অংশ লাভ করেছেন খাদিজা রাদিআল্লাহু আনহা, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে খুব স্মরণ করতেন।

কোন এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতুল বাকিতে (কবরস্থানে) গমন করেন, আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা ধারণা করেন, তিনি হয়তো কোন স্ত্রীর ঘরে যাবেন, তাকে ঈর্ষায় পেয়ে বসল, তিনি তার পিছনে রওয়ানা দিলেন গন্তব্য জানার জন্য, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তিরষ্কার করে বলেন :

“তুমি কি ধারণা করেছ যে, তোমার উপর আল্লাহ ও তার রাসূল অন্যায় আচরণ করবে ?” {মুসলিম}

আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

“আমাকে তিন দিন স্বপ্নে দেখানো হয়েছে তোমাকে, রেশমের একটি পাত্রে তোমাকে নিয়ে এসে মালাক বলে এ হচ্ছে তোমার স্ত্রী, আমি তার চেহারা খুলে দেখি তুমিই সে নারী। অতঃপর আমি বলি, এটা যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, তবে অবশ্যই তা বাস্তবায়ন হবে”। {মুসলিম- অষ্টম খণ্ড, পনেরতম অংশ, পৃষ্ঠা : (২০২) দারু ইহইয়াউত তুরাসিল আরাবি, বইরুত, দ্বিতীয় মুদ্রণ, হি.১৩৯২, ই.১৯৭২}

আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেন : তুমি কখন আমার উপর সন্তুষ্ট থাক আর কখন গোস্বা কর আমি তা বুঝতে পারি। তিনি বলেন, আমি বললাম : কিভাবে আপনি তা বুঝেন ? তিনি বললেন : তুমি যখন আমার উপর সন্তুষ্ট থাক, তখন বল, এমন নয়- মুহাম্মদের রবের কসম, আর যখন আমার উপর গোস্বা কর, তখন বল, এমন নয়- ইবরাহিমের রবের কসম। তিনি বলেন, আমি বললাম : অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল, তবে আমি শুধু আপনার নামটাই ত্যাগ করি”। {মুসলিম, অষ্টম খণ্ড, পনেরতম অংশ, পৃষ্ঠা : (২০৩) দারু ইহইয়াউত তুরাসিল আরাবি, বইরুত, দ্বিতীয় মুদ্রণ, হি.১৩৯২, ই.১৯৭২}

আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট খেলনা দিয়ে খেলতেন। তিনি বলেন, আমার বান্ধবীরা আমার কাছে আসত, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (-কে দেখে তার) থেকে আড়ালে চলে যেত, তিনি তাদেরকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন”। {মুসলিম, অষ্টম খণ্ড, পনেরতম অংশ, পৃষ্ঠা : (২০৪) দারু ইহইয়াউত তুরাসিল আরাবি, বইরুত, দ্বিতীয় মুদ্রণ, হি.১৩৯২, ই.১৯৭২}
ا
لبناتঅর্থ : ছোট পুতুল, যা দিয়ে মেয়েরা খেলাধুলা করে। ইমাম নববি তার ব্যাখ্যায় বলেন : কাযি ‘আয়ায বলেছেন এ হাদিসে পুতুল দ্বারা খেলার বৈধতা রয়েছে, যেসব পুতুলের আকৃতি নিষিদ্ধ।

فكن يَنْقَمِعْنَ من رسول الله صلى الله عليه وسلم অর্থ : ইমাম নববি এর ব্যাখ্যায় বলেন : তারা লজ্জা ও ভয়ে আড়ালে চলে যেতেন, কখনো ঘর বা অন্য কোথাও প্রবেশ করত- এ অর্থই অধিক সঠিক।

يُسَرِِّبُهُن إلي অর্থ : ইমাম নববি এর ব্যাখ্যায় বলেন : তাদেরকে তিনি আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন, এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দয়া ও দাম্পত্য জীবনের একটি সুন্দর আচরণ।

***********************

No comments :